বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২১

ব্রিটিশ সরকারের রায়ের বিরুদ্ধে আলা হযরত


কানপুর মাছলি বাজার মসজিদের ঘটনা ও ব্রিটিশ সরকারের রায়ের বিরুদ্ধে আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র ফাতওয়া :

কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াসবিরােধী ইংরেজদের বিচার বিভাগীয় কোনাে রায়কে আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি মানতে পারেননি। সে সময় অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চুপ থাকার বদলে ইংরেজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এ মসি সৈনিক কলমযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ব্রিটিশদের রায়কে যারা মাথা পেতে নিতেন তাদের বিরুদ্ধেও কলম চালাতেন তেজস্বী তরবারির ন্যায়। হােক না তারা তাঁর যে কোনাে পরম বন্ধু বা আপনজন। সেখানে তাঁর বিন্দুমাত্র ছাড় নেই। কানপুরে মাছলি বাজারে ব্যাখে মসজিদের ঘটনাটি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১৯১৩ ঈসায়ীর ফেব্রুয়ারীতে ব্রিটিশ সরকার রাস্তা সম্প্রসারণের অজুহাতে উল্লেখিত মসজিদটির পূর্ব অংশ ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। ঐ জামে মসজিদে ওলামাগণের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তাতে বলা হয়েছে মসজিদের পূর্বাংশ, যেখানে গােসল খানা রয়েছে, তা মসজিদেরই অংশ। ইসলামী শরিয়তে মসজিদের কোনাে অংশ বিক্রি, হস্তান্তর, রদবদল ইত্যাদি করা যাবে না। এ ফাতওয়ার সমর্থনে বেরেলি শরিফ, বদায়ুন ও ফিরিঙ্গি মহলের ওলামাগণের ফাতওয়া প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এতে সরকারের সিদ্ধান্তে কোনাে পরিবর্তন আসলাে না; বরং ১৯১৩ ঈসায়ী ৩ জুলাই ব্রিটিশ সরকার মসজিদের উক্ত অংশটি ভেঙ্গে দিলাে। তার প্রতিবাদে আম মুসলিম জনতা রাস্তায় মিছিল নিয়ে ফেটে পড়লাে। ব্রিটিশ সরকার মুসলমানদের উপর গুলি বর্ষণ করে এবং বহু লােককে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়েছিলাে। মুসলমানরা অত্র স্থানে ইটগুলাে পুনরায় স্ব-স্ব স্থানে বসিয়ে দেওয়াল তৈরি করে ফেললাে। অবশেষে ১৬ আগষ্ট ১৯১৩ ঈয়ায়ী মৌলভি আব্দুল বারি ফারাঙ্গি, রাজা সাহেব মাহমুদ আবাদ ও স্যার রেযা আলির নেতৃত্বে মুসলমানের একটি প্রতিনিধি দল উত্তর প্রদেশের গভর্ণরের সাথে সাক্ষাত করেন এবং ১৪ অক্টোবর ১৯১৩ ঈয়ায়ী এ সকল প্রতিনিধি কতিপয় শর্তে মুসলিমজাতির পক্ষে ভারতের ভাসরায়ে হিন্দু'র সাথে বিষয়টি মীমংসা করেন।
উল্লেখিত শর্তসমূহের মধ্যে নিম্নের শর্তটি বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য ছিলাে। শর্তটি হচ্ছে- "যেহেতু মসজিদের সাধারণ উচ্চতা রাস্তার উচ্চতা হতে কয়েক ফুট উপরে সেহেতু গােসল খানাটি পূর্বেকার স্থানে পুণঃনির্মাণ করা হবে। কিন্তু নিচু ভূমিতে ফুটপাত নির্মাণ করা হবে। যাতে করে পথচারী পার হতে পারে।"

এ চুক্তিটি সম্পর্কে মাওলানা সালামত উল্লাহ (সহ-সভাপতি মজলিসে মুঈদুল ইসলাম ফারাঙ্গি মহল লক্ষ্ণৌ) আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র কাছে প্রশ্ন উত্থাপন করলেন এবং তাঁকে এ সম্পর্কে আরাে বিস্তারিত লেখার জন্য অনুরােধ করেন। যাতে কিছু গােপন না থাকে। আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে ব্রিটিশদের এ রায় ও শর্তের বিরুদ্ধে এবং যারা তাদের কাণ্ডজ্ঞানহীন শর্ত মেনেছেন তাদের ব্যাপারেও কলম ধরেন। 

তিনি বলেন- "ওয়াকফ সম্পত্তি বিনিময়ে বা বিনিময় ব্যতিরেকে হস্তান্তর যােগ্য নয়"। তিনি কুরআন-সুন্নাহ বিরােধী বলে অভিমত পেশ করেছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি 'এবানাতুল মােতাওয়ারি' নামক একটি স্বতন্ত্র কিতাব রচনা করেন।" আবদুল বারি ফারাঙ্গি মহল্লি সাহেব আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর্যুক্ত কিতাবের রদে অনেক অপচেষ্টা চালিয়েছিলাে। কিন্তু শেষ অবধি আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র 'কামেউল ওয়াহিয়্যাত' লেখে আবদুল বারি ফারাঙ্গিকে নিশ্চুপ করে দিলেন।

যদি ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইংরেজ উপনিবেশবাদীদের নিমকপুষ্ট হতেন, তাহলে তাে তিনি এর প্রতিবাদ না করে ইংরেজদেরকে এ বলে চুপ থাকতেন "লড়াে আর রাজত্ব করাে"। 

(*আনওয়ারে রেখা, প্রাগুক্ত, প্রবন্ধকার, সৈয়দ নূর মুহাম্মদ কাদেরি, কৃতঃ"আ'লা হযরত কি সিয়াসি বসিরত, পৃষ্ঠা:৪৮৫-৪৮৬। **প্রফেসর ড. মাসউদ আহমেদ (অধ্যক্ষ, সরকারি ডিগ্রি কলেজ, সুকসুর সিন্ধ, পাকিস্তান) রচিত "গুনাহে বে-গুনাহি", এদারায়ে মাসউদিয়্যাহ, নাযিমাবাদ, কারাচি, পাকিস্তান, প্রকাশসন-১৪১৮ হিজরি, ১৯৯৮ ঈলারী, পৃষ্ঠা ৩১ ৩২।*** (আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ৮২,৮৩)।

ইসলামী আলোচনা ব্লগ সাইট ভিজিট করুন


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন