ইংরেজবিরােধী যােদ্ধাদের খাবার ও থাকার ব্যবস্থা মাওলানা রেযা আলি খান রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র ঘরে হতাে। তাইতাে এক ব্রিটিশ ঐতিহাসিক মিস্টার মিলিসন বলেন, "যখন ব্রিটিশ নেতৃবৃন্দ হিন্দুস্থান দখল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলাে তখন ঐ সময়ে মাওলানা ফজলে হক খায়রাবাদি, মাওলানা আহমদুল্লাহ শাহ মাদ্রাজি, মাওলানা বখশ সবহায়ি ও মাওলানা রেযা আলি বেরেলভী প্রমুখ আপােষহীন আলেমরা ব্রিটিশ।সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিলেন"।
(ক্বারি ইমাম আহমদ রেযার জীবন কর্মের উপর ৪র্থ প্রবন্ধ সম্ভার, দিল্লী, এপ্রিল সংখ্যা-৮৯ ইংরেজি, প্রবন্ধকার: এডভোকেট আসাদ নিজামি, পৃষ্ঠা ৫০০, "ইমাম আহমদ রেখা কী জদ্দে আমজাদ"।)
মিস্টার মিলিসন আরাে বলেন, "যদি মোল্লা রেযা আলি তাঁর সহযােদ্ধাদের নিয়ে আমাদের মােকাবেলা না করতাে তবে বেরেলি শহরটি আমাদের দখলে আসা একেবারেই সহজ ছিলাে। কাজেম আলির ছেলে রেযা আলি বেরেলি সাধারণ মানুষকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে শুধু উসকানীদাতা অপরাধে অপরাধী নয়, বরং তিনিই তাে বেরেলির জনসাধারণকে ব্রিটিশ সৈন্যদের মােকাবেলার জন্য সর্বাত্মক সহযােগিতা করেছিলেন। তাঁর কারণেই ব্রিটিশ সৈন্যদের রক্তের বন্যা বয়ে যায়"। (প্রাগুক্ত,পৃষ্ঠা - ৫১১)।
আল্লামা হাসান দেহলভী "মাহনামা তরিকত" নামক ম্যাগাজিনে (দিল্লী) বলেন, "ব্রিটিশ জেনারেল হাডসন অবশেষে আল্লামা রেযা আলি খানের মস্তক ছিন্ন করতে তৎকালীন সময়ে পাঁচশত রুপী পুরস্কার ঘােষণা করে। কিন্তু এরা এ কাজেও কামিয়াব হতে পারেনি। (প্রাগুক্ত,পৃষ্ঠা - ৫১১)।
বিশিষ্ট গবেষক Usha Sanyal তার Ahmad Riza Khan Barelwi in the path of the prophet নামক গ্রন্থে আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র পিতামহের ব্রিটিশ বিরােধিতা এবং এ সংক্রান্ত একটি কারামত বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-
A story is told about his grandfather, Maulana 'Riza Ali Khan (1809-65/66), relating to the British resumption of control over Bareilly after the revolt had been put down in that town. After the tumult of 1857, the British tightened the reins of power and committed atrocities toward the people, and everyday went about felling scared, important people left their houses and went back to their villages. But Maulana Riza Ali Khan continued to live in his house as before and would go to the mosque five times a day to say his prayers in congregation. One day some Englishmen passed by the mosque and decided to see if there was anyone inside so they could catch hold of them and beat them up, They went inside and looked around but didn't see anyone. Yet the maulana was there at time. Allah had made them blind, So that।they would be unable to see him. (When) he came out of the mosque, they were still watching out for people but no one saw him.
"দাঙ্গা দমনের পর ব্রিটিশদের কর্তৃত্ব পুনরুথান সম্পর্কে তাঁর দাদা মাওলানা রেযা আলি (১৮০৯-৬৫/৬৬) সংশ্লিষ্ট একটি গল্প বলা হয় যে, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পর ব্রিটিশরা তাদের ক্ষমতার লাগাম আরাে জোরে টেনে ধরেন এবং শহরগুলোর গুরুত্বপূর্ণ লােকদেরকে শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার জন্য বাধ্য করেন। কিন্তু মাওলানা রেযা আলি খান রীতিমত তাঁর নিজ বাড়িতে বাস করছিলেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে জামাআত সহকারে আদায় করতেন। একদিন কিছু ইংরেজ সৈন্য মসজিদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন এবং ভিতরে দেখার সিদ্ধান্ত নিলেন, যাতে তারা তাদেরকে ধরতে পারেন এবং প্রহার করতে পারেন। তারা ভিতরে গেলেন এবং চারিদিকে দেখলেন কিন্তু কাউকে দেখতে পেলেন না। অথচ মাওলানা (রেযা আলি খান) ওই সময় সেখানেই ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্ধ করে রাখলেন যাতে তারা তাঁকে না দেখতে পায়। যখন তিনি মসজিদ থেকে বের হলেন,তারা তখনও পাহারা দিচ্ছিলাে; কিন্তু কেউ তাঁকে দেখলাে না। (Usha Sanyal by Ahmad Riza Khan Barelwi: In the path of the prophet, page: 51, One world publications, 185 Banbury Road, Oxford, England)
এ চমকপ্রদ ঘটনাটি বর্ণনার পর ড. উষা বলেন, The story is interesting at many levels. It casts Maulana Riza Ali as a fierce opponent of the British who put his trust in God instead or fleeing and who was so holy and so good that God protected him, blinding the enemy to his presence.
"বিভিন্ন কারণে ঘটনাটি খুবই আনন্দদায়ক। এটা রেযা আলি খানকে ব্রিটিশদের জন্য একটি ভয়ংকর ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত করে। যিনি পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে মহান আল্লাহ তায়ালার উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখেন। তিনি খুবই পবিত্র স্বভাবে ভালো লােক ছিলেন। তাঁর উপস্থিতি অদৃশ্য করে দিয়ে তাঁকে আল্লাহ তায়ালা রক্ষা করেন।" (Aforsaid, page: 52)
অন্যদিকে দেখা যায় যে, আ'লা হযেরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র সম্মানিত পিতা ইমামুল মুতাকাল্লেমিন মাওলানা নকি আলি খান বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহিও ছিলেন তাঁর সম্মানিত পিতার মতাে ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলনের বীরসৈনিক। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক চাঁন্দা শাহ হােসাঈনি লিখেন- (উর্দুর অনুবাদ দেওয়া হলো,কিতাবে উর্দু উল্লেখ আছে) "মাওলানা রেযা আলি ব্রিটিশদের সাথে মুখে ও কলমি যুদ্ধে খুবই প্রসিদ্ধ ছিলেন। ইংরেজরা মাওলানার জ্ঞান, গুরু গাম্ভীর্য ও সাহসিকতাকে খুবই ভয় পেতাে। তাঁর সাহেবযাদা মাওলানা নকি আলি খানও ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন।
হিন্দুস্থানের ওলামাদের মধ্যে মাওলানা নকি আলি খান সাহেবের মর্যাদা ও সম্মান খুবই উপরে ছিলাে। ইংরেজবিরােধী আন্দোলনে তাঁর অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।"
(মুহাম্মদ হানিফ খাঁ রেযভি রচিত "মুকাদ্দামায়ে উসুলুর রসাদ", ইমাম আহমদ রেযা একাডেমি, ইউপি, ডারত, পৃষ্ঠা-২২)।
প্রখ্যাত লেখক ও ঐতিহাসিক আবদুল হাকিম খাঁ আখতার শাহ জাহানপুরি তাঁর লেখা "বরতানভি মাযালেম কি কাহানি আবদুল হাকিম খা আখতার শাহ জাহানপুরি কি জুবানি" নামক প্রবন্ধে লিখেন- (উর্দুর অনুবাদ দেওয়া হলো,কিতাবে উর্দু উল্লেখ আছে) "দেশ থেকে ইংরেজদের বের করে দেওয়ার জন্য হিন্দুস্থানের আলেমগণ একটি জিহাদ কমিটি গঠন করেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক জিহাদ করার জন্য জিহাদ কমিটি 'জিহাদ' এর ফতওয়া জারি করেন। ওই জিহাদ কমিটির নেতৃত্বে থাকা মাওলানা রেযা আলি বেরেলভী, মাওলানা ফজলে হক খায়রাবাদি, মুফতি এনায়েত আহমদ কাকুরি, মাওলানা নকি আলি খান বেরেলভী, মাওলানা আহমদ উল্লাহ শহিদ, মাওলানা আহমদ মাশহাদি বাদায়ুনি বেরেলভী, জেনারেল বখত খান ও অন্যান্যদের নাম উল্লেখযােগ্য।" (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ২৩। **মাশয়ালে রাহ -
বরতানভি মাযালেম কি কাহানি আবদুল হাকিম খাঁ আখতার শাহ জাহানপুরি কি জুবানি, প্রথম অধ্যায়, ১৮৫৭ সালের টুকিটাকি ও ফলাফল, পৃষ্ঠা: ১২৬)।
আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি এমন একটি ব্রিটিশবিরোধী পরিবারে বেড়ে ওঠেছেন, যে পরিবারের সদস্যকে ব্রিটিশদের এজেন্ট বলে মন্তব্য করা হাস্যকর বৈ আর কিছু নয়। তিনি শৈশব থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত ব্রিটিশবিরোধী ছিলেন। রাজনৈতিক ময়দানে এদের বিরুদ্ধে কলমসৈনিক হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁরই আদর্শ অনুসরণে পরবর্তীতে তাঁর শাহজাদা, ছাত্র, ভক্ত-অনুসারী ও খলিফাগণ প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি ব্রিটিশসহ সকল বাতিল শক্তিকে ঘৃণা করতেন ও শত্রু মনে করতেন। কাউকে কখনাে কিছুক্ষনের জন্যও আপন মনে করতেন না। এ উপমহাদেশে ব্রিটিশদের অবৈধ দখলদারিত্ব এবং ব্রিটিশদের অন্যতম সহযােগী ও মুসলিমবিরােধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হিন্দুদের রাজনৈতিক দুরভিসন্ধির গােপন তথ্যগুলাে ফাঁস করে ইংরেজবিরােধিতার আড়ালে বন্ধুর চাদরে আবৃত চিরশত্রু হিন্দুদের কূটনৈতিক এবং সে সময়ে মুসলমানদের কতিপয় দিকভ্রান্ত নেতা, যারা হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের নিদর্শন স্বরূপ দূর্গাপূজা, কালিপূজা, হিন্দুদের শবদেহ বহনসহ বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেছিলাে তাদেরকে সর্তক করতঃ সহজ সরল মুসলমানদেরকে রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা দিয়ে তিনি এ বিষয়ে পাঁচটি কিতাব রচনা করেছিলেন।
এগুলাে নিয়ে সামনে বিস্তারিত আলােচনা করা হবে ইনশাআল্লাহু তায়ালা।
(আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ৭২,৭৩,
৭৪,৭৫ ও ৭৬)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন