গান্ধী এবং তার শিষ্যরা চেয়েছিলাে মুসলমানদেরকে ব্যবহার করে ইংরেজ তাড়িয়ে দিয়ে রাজত্ব হিন্দুরাই করবে। যেহেতু তারা সংখ্যাগরিষ্ট। আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি গান্ধী এবং তার দোসরদের এই রাজনৈতিক চোরাবালির ফাঁদ থেকে রক্ষা করার জন্য মুসলমানদেরকে দিলেন দ্বি-জাতি তত্ত্ব (Two Nation theory) বা মুসলমানদের স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব। অবশ্য তিনি এ দ্বি-জাতি তত্ত্ব ১৮৯৭ ঈসায়ী পাটনা (Patna) সুন্নি কনফারেন্সের মাধ্যমে ঘােষণা করেছিলেন। তাইতাে তিনি
অসহযােগ আন্দোলনের নেতা মৌং মুহাম্মদ আলি জওহরকে বলেছিলেন, আপনার রাজনীতি আর আমার রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য আছে। আপনি হিন্দু মুসলিম ঐক্যের পক্ষে, আর আমি বিপক্ষে। আমার রাজনীতি হচ্ছে হিন্দুস্থানের সকল প্রকৃত মুসলমানদেরকে এক স্থানে একত্রিত করা। আপনিও যদি সকল মুসলমানদেরকে এক করতে চান, তাহলে অখণ্ড ভারত আন্দোলন ছাড়ুন। (মাওলানা সৈয়্যদ শাহ তুরাবুল হক কাদেরি রচিত "তাখলিকে পাকিস্তান মে ওলামায়ে আহলে সুন্নাত কা কিরদার,প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ৮)।
তিনি তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় দেখতে পেলেন যে, কংগ্রেসের নেতৃত্বে হিন্দুদের সাথে মিলিত হয়ে মুসলমানদের এ আন্দোলনের কোনো ভবিষ্যত নেই। তাতে অভাবনীয় সাফল্য রয়েছে হিন্দু ও কংগ্রেসের। এখন থেকে যদি অপরের ঘর বেঁধে নিজেরা তাতে আশ্রয় নেওয়ার স্বপ্ন না দেখে বরং নিজেরাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের ঘর তৈরি করে, তাতেই রয়েছে ভবিষ্যতের কামিয়াবি। তাই তিনি 'হিন্দু তথা যে কোনাে কাফির শক্তির সাথে মুসলামানদের ঐক্য হতে পারে না', 'অসহযােগ আন্দোলনে গান্ধীর কূটনীতিক চালের মুখােশ উম্মােচন' ও সে সময়ে 'বিভ্রান্ত মুসলিম রাজনীতিকদের হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের কুফল' তুলে ধরে ভীষণ অসুস্থতায় শয্যাশায়ী অবস্থায় "আল মুহাজ্জাতুল মু'তামিনাহ ফি আয়াতিল মুমতাহিনা" নামক কিতাব রচনা করেন। এই কিতাবটি মুসলমানদের স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল ও দ্বি-জাতি তত্ত্বের প্রথম লিখিত ও যৌক্তিক প্রস্তাব। তাঁর এ তত্ত্ব বারবার প্রচারের ফলে ড. ইকবাল ও মিঃ জিন্নাহ'র রাজনৈতিক ধারণায়ও পরিবর্তন আসে এবং তারা দ্বি-জাতি তত্ত্বে অনুপ্রাণিত হন। কারণ আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি যখন দ্বি-জাতি তত্ত্বের প্রস্তাব পেশ করেন, তখন ড.ইকবাল ও মিঃ জিন্নাহ উভয়েই ছিলেন খেলাফত আন্দোলনে সক্রিয়। ড. ইকবাল ১৯৩০ ঈসায়ী দ্বি-জাতি তত্ত্ব ও স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের প্রস্তাব করেন। আর তারই অনেক পূর্বে ১৯২০ ঈসায়ী "আল মুহুজ্জাতুল মুতামিনাহ ফি আয়াতিল মােমতাহিনাহ" লিখে ঐ ধারণার প্রকাশ ঘটান আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তবে তাঁর এ দ্বি-জাতি তত্ত্ব ছিলাে লিখিত। নতুবা তিনি প্রথম এ দ্বি-জাতি তত্ত্ব দেন ১৮৯৭ ঈসায়ীর পাটনার সুন্নি কনফারেন্সে। আল্লামা ইকবালের উপস্থাপিত দ্বি-জাতি তত্ত্বের প্রায় তেত্রিশ বছর পূর্বে।
বুঝা গেলাে, আল্লামা ইকবালের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র দূরদর্শিতার তেত্রিশ বছর পেছনে। আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র এ তত্ত্বের উপর আমল করে পরবর্তীতে মুসলিম নেতৃবৃন্দরা মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এগিয়ে আসেন। ফলে ১৯৪৭ ঈসায়ী পাকিস্তান সৃষ্টি হয়। যদি মুসলিম নেতারা আগে থেকে রাজনীতিতে হিন্দুদের সাথে না জড়িয়ে স্বতন্ত্রভাবে রাজনৈতিক নিজস্ব প্লাটফরম তৈরিতে এগিয়ে আসতেন, তবে পাকিস্তান অর্জন আরাে তরান্বিত হতাে।
এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের প্রখ্যাত গবেষক, বহু গ্রন্থ প্রণেতা প্রফেসর ড. মাসউদ আহমদ তাঁর The Negleeted Genious of the East গ্রন্থে লিখেন - He was ageist Hindu -
Muslim unity. This was the basic idea which can rightly be called the foundation of Pkistan.
অর্থাৎ, ইমাম আহমদ রেযা হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের বিরােধী ছিলেন এবং এটাই পাকিস্তানের গােড়াপত্তনের মূল ধারণা বলে বলা যায়। তিনি আরো বলেন - Ahmad Raza Khan had strong hold on Muslim masses and it was masses that the movement of Pakistan a success. The majority of the Muslim voters were under the influnce of him, his caliph's disciples and pupils. So the credit should go to him and followers. Historians of the world especially of Indo-Pak sub-continent should drow their attention to this most significant aspect of freedom movement.
অর্থাৎ, মুসলিম জাগরণের উপর আ'লা হযরতের যথেষ্ট প্রভাব ছিলাে এবং এটার পথ ধরে পাকিস্তান আন্দোলন সংগঠিত হয়। অধিকাংশ মুসলিম ভােটার তাঁর প্রভাবে প্রভাবিত ছিলাে এবং তাঁর খলিফা ও শিষ্য ছিলাে। সুতরাং এটা তাঁর এবং তাঁর অনুসারিদের কৃতিত্ব। পৃথিবীর ঐতিহাসিকগণ বিশেষতঃ ইন্দো-পাক উপমহাদেশের ঐতিহাসিকগণের মনােযােগ গুরুত্বপূর্ণ এই স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকেই দেওয়া সমীচিন। (Prof. D. Muhammed Masood Ahmed: Neglected Genious of the East. Page: 16-17,www.Alahazrat Network.org).
আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র দ্বি-জাতি তত্ত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে ড. ইকবাল ও জিন্নাহ'র রাজনৈতিক ধারণারও পরিবর্তন আসে। তাইতো মি. জিন্নাহকে লেখা ড. ইকবালের এক চিঠিতে দেখা যায়,।(উর্দুর অনুবাদ,কিতাবে উর্দু উল্লেখ আছে) "যদি হিন্দুস্তানের মুসলমানদের রাজনৈতিক জিহাদের উদ্দেশ্য ইসলাম সংরক্ষণ ভিন্ন শুধু (ইংরেজদের থেকে) আযাদি ও অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনই হয়, (যা আজকাল
পরিলক্ষিত হচ্ছে) তবে মুসলমানগণ এ আন্দোলনেও কখনাে কামিয়াব হবেনা। (ড. তাহেরুল কাদেরি রচিত "ইকবাল কা খা'ব আওর আজকা পাকিস্তান", স্টোডেন্ট পাবলিকেশন, পৃষ্ঠা ০৭)।
আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র দ্বি-জাতি তত্ত্বের ফলে আজকের স্বতন্ত্র পাকিস্তান সৃষ্টি হয়। তাইতাে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ, জাস্টিস ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. সৈয়্যদ গাউছ আলি শাহ বলেন- (উর্দুর অনুবাদ,কিতাবে উর্দু উল্লেখ আছে)
"আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান হানাফি বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র ব্যক্তিত্ব এমন আলাের মিনার যে, যিনি ঘাের অন্ধকার ও হতাশার যুগে হিন্দুস্থানের মুসলমানদেরকে নিজের ইলম ও আমল দ্বারা পথ দেখিয়েছেন। এমনকি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাও আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান হানাফি বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র ব্যক্তিত্বের মতাে মহামনীষীদের নসিহতসমূহেরই ফলাফল।"
(মুয়াম্মারে পাকিস্তান, পৃষ্ঠা - ২৮)। **Articels by Phir Muhammad Tabasum Bashir owaisi, Norwal.
Hamari Web.com).
পাকিস্তানের সিনেট চেয়ারম্যান জনাব ওয়াসিম সাজ্জাদ বলেন, "ইমাম আহমদ রেযা ঐ সমস্ত ইংরেজপুষ্ট ওলামাদের বিরুদ্ধে সত্যের ঝাণ্ডা উড্ডীন করেন, যাদের দেশদ্রোহিতা উপমহাদেশে আযাদি আন্দোলন ভেস্তে যাওয়ার কারণ ছিলাে। সঠিক গবেষণায় তাঁকে (ইমাম আহমদ রেযা) পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রথমসারির রূপকার বলা যায়। (আহমদ রেযা বেরেলভি আওর হুকুমতে পাকিস্তান, পৃষ্ঠা: ১৩)।
ড. ইকবাল আহমদ আখতার কাদেরি বলেন- "আজকের এই সুন্দর পাকিস্তান হযরত আহমদ রেযার দ্বি-জাতি তত্ত্বের ফসল"। (ড. ইকবাল আহমদ আখতার ক্বাদেরি (পাকিস্তান) রচিত "হযরত আহমদ রেযা আওর উনকি খেদমত"। স্মরণিকা আ'লা হযরত কনফারেন্স ২০০০ ইংরেজি, আ'লা হযরত ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম, পৃষ্ঠা: ৮৯)।
(আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ১৩৪,
১৩৫,১৩৬,১৩৭)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন