আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি একদা ভারতের উত্তর প্রদেশের পিলিভিতে সফরকালে সে সময়ের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস তাঁর বন্ধু মুহাদ্দিস ওয়াসি আহমদ সুরতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র বাড়িতে অবস্থান করলেন। আলাপচারিতায় উকুদুদ দুররিয়্যাহ নামক কিতাবের কথা এসে গেলে মুহাদ্দিস সুরতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন, জী! এটাতাে আমার লাইব্রেরিতে আছে। আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন, "যাওয়ার সময় কিতাবটি আমাকে
দেবেন। মুহাদ্দিস সুরতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি কিতাবটি দিয়ে বললেন, ঠিক আছে আপনি পড়া শেষ করে কোনাে এক সময়ে পাঠিয়ে দিলে হবে। পরদিন তিনি পিলিভিতে ফেরার
কথা থাকলেও কতিপয় মুরিদের বিশেষ অনুরােধে আরাে একদিন থাকতে হলাে। এ
সুবাদে দু'খণ্ড বিশিষ্ট বিশাল গ্রন্থটি সেখানে অবস্থানরত অবস্থায় পাঠ শেষ করে মুহাদ্দিস সাহেবের নিকট ফেরত পাঠালেন। এত অল্প সময়ে কিতাব ফেরত দেওয়াতে মুহাদ্দিস সাহেব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। না জানি রাগ করে ফেরত দিলেন কি না! এ কথা ভেবে তড়িৎ মুহাদ্দিস সাহেব কিতাবখানা নিয়ে ট্রেন স্টেশনে গিয়ে আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র খেদমতে উপস্থিত হয়ে কিতাব ফেরত দেওয়ার কারণ।জানতে চাইলে তিনি বললেন- যদি গতকাল চলে যেতাম তাহলে কিতাবটি সাথে নিয়ে যেতাম। একদিন বাড়তি সময় পেয়ে গত রাত্রে কিতাবের আদ্যোপান্ত দেখে।নিয়েছি। তাই ফেরত পাঠালাম। সাথে নিয়ে যাওয়ার তাে আর দরকার নেই।
মুহাদ্দিস সাহেব আশ্চার্যান্বিত হয়ে আরয করলেন, একবার দেখায় কি যথেষ্ট?
আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন, 'আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহর দয়া ও মেহেরবাণীতে আগামী দুই-তিন মাস পর্যন্ত তাে ফাতওয়া প্রণয়নের ক্ষেত্রে যেখানে যেখানে এই কিতাবের উদ্ধৃতির প্রয়ােজন হবে ইনশাআল্লাহ, তা মুখস্থ লিখে দিতে পারবাে।
গােটা কিতাবের বিষয়বস্তু ও কথাগুলাে তাে সারা জীবনই মুখস্থ থাকবে।' তারপর বললেন, মুহাদ্দিস সাহেব আপনি তাে কিতাবটি দিয়ে আমার অনেক উপকার করেছেন। আমিও আপনার একটি উপকার করে দিয়েছি। আগে পরে এ কিতাবটির সূচি ছিলাে না। আমি তা লিপিবদ্ধ করে দিয়েছি। দেখুন তাে একটু কেমন হয়েছে"।১
এভাবে ইমামে আহলে সুন্নাত আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি 'র বিস্ময়কর ও কিংবদন্তিতুল্য স্মৃতিশক্তি নিয়ে আলােচনা করলে একটি বিশাল আকারের বই হয়ে যাবে। দীর্ঘ আলােচনা পরিহারে এতটুকুই যথেষ্ট মনে করি।
তাঁর এ বিরল আশ্চর্য্যজনক স্মৃতিশক্তি নিশ্চয় মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিশেষ অনুগ্রহ। তাইতাে তাঁরই শাহযাদা হুযুর মুফতি-ই আযম মাওলানা মুস্তফা রেযা খান কাদেরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- "স্মরণশক্তি খাদ্য নয়, দানের সাথে সম্পর্কযুক্ত। স্মরণশক্তি যদি খাদ্যের দ্বারা বৃদ্ধি পেতাে, তা হলে কোনো ধনাঢ্য ব্যক্তি মেধাহীন হতাে না।
মহাজ্ঞনী আল্লাহর দরবারের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করাে। সেখান থেকেই সবকিছু পাওয়া যায়"।২
(১. মাওলানা আমানত রাসূল কাদেরি রেজভি মুস্তফভি রচিত "তাজাল্লিয়াতে ইমাম আহমদ রেযা"প্রাগুক্ত,পৃ: ৬৩।
২. ওরছে আ'লা হযরত,স্মারক ২০০৩ চট্টগ্রাম,আ'লা হযরত ফাউন্ডেশন,পৃ: ২৬।
(আ'লা হযরত আমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃ:- ৫৮-৫৯)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন