একদা আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আউলিয়ায়ে কিরামদের জীবনীর উপর লিখিত একটি কিতাব পড়লেন। যে কিতাবের মধ্যে আগের জামানার ইবাদতকারী ও কামেল অলিদের ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ ছিলাে। ঐ কিতাবের মধ্যে ঘটনার বিবরণ এ রকম ছিলাে যে, অমুক আবেদ এতদিন পর্যন্ত খাবার না খেয়ে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করেছেন। ব্যস এতটকু পড়েই আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ঐ সময় থেকে খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিলেন। তাঁর পরিবারের সদস্যগণ, আত্মীয়-স্বজন ও ভক্ত-অনুরক্তদের নিকট ঐ।খবর পৌঁছলে তারা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু খাবার গ্রহণ ছেড়ে দিলেন কেনাে? পরিবারের সবাই, বন্ধু-বান্ধব,। ভক্ত -অনুরক্ত, তাঁর খলিফা ও ছাত্ররাঅনেকবার তাঁর খেদমতে আরয করলেন, 'হুযুর খাবার গ্রহণ করুন।' কিন্তু আলা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উত্তরে বললেন, 'আপনারা খেয়ে নিন, ফকির রােযা রেখেছে।' সময় অতিবাহিত হচ্ছে, সকলের দুর্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কীভাবে আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে খাওয়ানাে যায় এই ব্যাপারে সকলে অস্থির। আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু যে ২৬ দিন না খেয়ে রইলেন ঐ ২৬ দিন তিনি রােযা রাখতেন। ইফতারের মধ্যে তিনি কয়েক চুমুক পানি পান করতেন আর কোনাে খাবার খেতেন না এবং সাহরিতেও কয়েক চুমুক পানি পান করে রােযা রাখতেন। কথিত আছে যে, আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু যে মাসে খাবার গ্রহণ ছেড়ে দিয়েছেন সেই মাসটি ছিলাে আরবি রযব মাস। শত চেষ্টা করেও কেউ আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র মুখে খাবার তুলে দিতে না পেরে পরিশেষে তাঁর কতিপয় ভক্ত অনুরক্তরা আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র পীর মুর্শিদের বাড়ি আস্তানায়ে আলিয়া মারেহারায়ে মুতাহারার সাজ্জাদানশীন, পীরে তরিকত হযরত সৈয়্যদ মেহেদি মিয়াকে আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র আহার ছেড়ে দেয়ার কথা বলার জন্য গেলেন। কিন্তু সে সময়ে সৈয়্যদ মেহেদি মিয়া সাহেব কেবলা তাঁর হুজরা শরিফে ছিলেন না। সংবাদবাহকরা তাঁকে না পেয়ে আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র খলিফা শেরে বিশিয়া-ই আহলে সুন্নাত মাওলানা হেদায়ত রাসূল সাহেবকে এ ব্যপারে জানাতে তাঁর দরবারে গেলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে তাঁকেও তার বাড়িতে না পেয়ে সংবাদদাতারা তাঁকে এই সংবাদ দেয়ার দায়িত্ব তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে দিয়ে বেরেলি শরিফে গমন করলেন। যখন হেদায়ত রাসূল ঘরে এসে এ সংবাদ পেলেন তখন আর দেরি না করে সাথে সাথে বেরেলি শরিফ যাওয়ার জন্য বের হলেন।মাগরিবের নামাজের পূর্বে তিনি বেরেলি শরিফে এসে পৌঁছলেন। হযরত মাওলানা হেদায়ত রাসূল বেরেলি শরিফে পৌঁছার পর তাঁকে জানিয়ে দেয়া হলাে যে, আজ ২৬ দিন হয়ে গেছে আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কোনো খাবার গ্রহণ করেন নি। কী কারণে আলা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু খাবার গ্রহণ করছেন না, তা কারাে বােধগম্য হচ্ছে না।
এ ঘটনা বুঝাতে বুঝাতে মাগরিবের নামাজের সময় হয়ে গেলাে। আযান হচ্ছে,লােকেরা মসজিদের দিকে যাচ্ছে। আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহুও হুজরা থেকে বের হয়ে মসজিদে গেলেন এবং মাগরিবের নামাযের ইমামতি করলেন। নামায শেষে মাওলানা হেদায়ত রাসূল সাহেব কিছু দূরে দাঁড়িয়ে আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে সালাম দিলেন। আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সালামের উত্তর দিয়ে মাওলানা হেদায়ত রাসূল সাহেবকে সম্বােধন করে বললেন, 'মাওলানা সাহেব কী ব্যাপার? আজ দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কেনাে? আসুন করমর্দন করি।' এ বলে আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বসা থেকে দাঁড়িয়ে মাওলানা হেদায়েত রাসূলের দিকে এগিয়ে গেলেন। অন্যদিকে মাওলানা হেদায়ত রাসূল যে জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখান থেকে পিছনে সরে গেলেন।
আলা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে বললেন, 'কী ব্যাপার? আপনি পিছনে সরে যাচ্ছেন কেনাে? তখন মাওলানা হেদায়ত রাসূল আরয করলেন, 'হুযুর আমি তাে শুধু একটি কথা বলার জন্য এসেছি। আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, 'বলুন। তখন হেদায়ত রাসূল বললেন, 'হুযুর আহলে সুন্নাতের ইমামতির পােশাক পরিধান করা আপনার উচিত নয়। আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আশ্চর্য হয়ে বললেন, মাওলানা, 'এরূপ বলছেন কেনাে?' মাওলানা সাহেব আবেদন করে বললেন, 'আহলে সুন্নাতের ইমাম যদি খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয় তাহলে তাঁর পার্থিব জীবনের নির্ভরতা কীভাবে করা যাবে?' আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, 'একটি কিতাব পড়ার সময় আগের যুগের আবেদিনদের অবস্থা আমার দৃষ্টিগােচর হয়। তাঁরা খাওয়া-দাওয়া ছাড়া আল্লাহর ইবাদত করতেন। আর আমি তাে প্রিয়নবি ﷺ'র উম্মত। তাই আমিও খাওয়া- দাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। তবে প্রিয়নবি রদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র দরবার থেকে আমাকে আহার দেওয়া হচ্ছে। মাওলানা সাহেব আরয করলেন, আমার চোখে আপনি খাবার খাচ্ছেন না। আমি আপনার মেহমান। মেহমানের সাথে মেযবান খাওয়া তাে দরকার। আমার সিদ্ধান্ত হলাে যদি আপনি আজ থেকে খাবার না খান তাহলে আমিও আজ থেকে খাবার খাবাে না। আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মাওলানা হেদায়ত রাসূলকে খুব সম্মান করতেন এবং তাঁর কথাকে খুব গুরুত্ব দিতেন। তাই আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তার সাথে খাবার খেতে রাজি হয়ে গেলেন। এই সংবাদ ঘরে পৌঁছতেই তৎক্ষণাৎ মেহমানখানায় দস্তরখানা বিছানাে হলাে এবং দস্তরখানার উপর খাবার সাজানাে হলাে। মাওলানা হেদায়ত রাসূল সাহেব আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র হাত ধৌত করালেন। এভাবে দীর্ঘ ২৬ দিন পর আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মাওলানা হেদায়ত রাসূলের সাথে খাবার গ্রহণ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
(আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ২২২,২২৩,২২৪)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন