শনিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২১


এক নজরে ইমাম আহমদ রেযা (رحمة الله)

জন্মঃ (বেরলী শরীফ) ১৪ই জুন, ১৮৫৬ ইং, ১০ই সাওয়াল ১২৭২ হিজরী।

কুরআন করীম পাঠ শেষঃ ১৮৬০ ইং, ১২৭৬ হিজরী (মাত্র ৪ বছর বয়সে)।

প্রথম বক্তৃতাঃ ১৮৬২ ইং, ১২ই রবিউল আওয়াল, ১২৭৮ হিজরী, (৬ বছর বয়সে)।

সর্বপ্রথম পুস্তক রচনাঃ শরহে হিদায়াতুন্নাহু আরবী (আরবী ব্যাকরণ) ১৮৬৪ ইং, ১২৮০ হিজরী, (৮ বছর বয়সে)।

সবচেয়ে জটিলতর কিতাব মুসাল্লেমুস সবুতের ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা ১৮৬৬ ইং, ১২৮৬ হিজরী।

দস্তারে ফজীলত (শেষবর্ষ সনদ লাভ)ঃ ১৮৬৯ ইং, ১২৮৬ হিজরী।

ফতােয়া প্রদানের গুরুভারঃ ১৮৬৯ ইং, ১২৮৬ হিজরী। দাম্পত্য জীবনের সূচনাঃ ১৮৭৪ ইং, ১২৯১ হিজরী।

প্রথম সাহেবজাদার জন্মঃ ১৮৭৫ ইং, ১২৯২ হিজরী, রবিউল আওয়াল।

প্রথম হজ্জব্রত পালনঃ ১৮৭৬ ইং, ১২৯৬ হিজরী।

জিয়াউদ্দিন আহমদের উপাধি (মক্কায়)ঃ ১৮৭৬ ইং, ১২৯৬ হিজরী।

খেলাফত লাভঃ ১৮৭৭ ইং, জুমাদিউল আওয়াল, ১২৯৪ হিজরী।

প্রথম ফার্সী গ্রন্থ রচনাঃ ১২৯৯ হিজরী, ১৮৮১ ইং।

দ্বিতীয় সাহেবজাদার জন্ম (মুফতী আযম হিন্দ)ঃ ১৮৯২ ইং, ২২ জিলহজ্জ, ১৩১০ হিজরী।

 নদওয়াতুল ওলামা বিরােধী সম্মেলনে অংশগ্রহণঃ ১৯০০ ইং, ১৩১৮ হিজরী।

রাসুলে খােদা (ﷺ)-এর পিতামাতার মুসলমান হওয়া বিষয়ক গ্রন্থ রচনা ১৩১৫ হিজরী।

ওলামা হিন্দের পক্ষ হতে মুজাদ্দিদ উপাধি লাভঃ ১৯০০ ইং, ১৩১৮ হিজরী।

কুরআন করীমের বিশুদ্ধতম অনুবাদ প্রকাশঃ ১৩৩০ হিজরী, ১৯১১ ইং।

আল মু'তামিদুল মুসতানাদ রচনাঃ ১৯০২ ইং, ১৩২০ হিজরী।

ফতােয়া-ই রেভিয়া ১২ খন্ডে সমাপ্ত প্রতি খন্ড ১০০০ পৃঃ ব্যাপী জাহাজী সাইজে শ্রেষ্ঠতম ফতােয়া সংকলন ১৯০৪ ইং, ১৩২২ হিজরী।

প্রিয়নবী (ﷺ)-এর ‘ইলমে গায়র’ সম্পর্কিত বিশ্ব আলােড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ ‘আদদৈালাতুল মক্কীয়াহ (অনুবাদক কর্তৃক তা বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে) রচনা ১৩২৩ হিজরী ১৯০৫ ইং।

দ্বিতীয়বার হজ্জব্রত পালনঃ ১৯০৫ ইংরেজী, জিলকদ ১৩২৩ হিজরী।

হুসসামুল হারামাঈন রচনাঃ ১৩২৪ হিজরী, ১৯০৬ ইং। ছােট সাহেবজাদার জন্মঃ ১৩২৫ হিজরী, ১৯০৭ ইং।

ভাওয়ালপুর সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতির রায়ের বিশ্লেষণধর্মী জবাব ১৩৩১ হিজরী, ১৯১৩ইং।

রাজনীতি বিষয়ক আলােড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ রচনা ১৯১২ ইং। কানফুর মসজিদ চত্বরে বৃটিশ প্রশাসনের সাথে চুক্তি সম্পাদনকারীদের সমালােচনা মূলক গ্রন্থ রচনা ১৩৩১ হিজরী, ১৯১৩ ইং।

তাজিমী সিজদা হারাম সম্পর্কিত গ্রন্থ রচনাঃ ১৯১৮ ইং, ১৩৩৭ হিজরী।

গ্রীক ও বস্তুবাদী দর্শনের খন্ডন ১৩৩৮ হিজরী। দ্বিজাতি তত্বের উপর কলমধারণ ১৩৩৯হিঃ, ১৯২১ ইং।

ওফাতঃ ২৮শে অক্টেবর ১৯২১ ইং, ২৫শে সফর ১৩৪০ হিজরী। উল্লেখ্য যে, ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী (رحمة الله)-এর বয়স ইংরেজী হিসেব মতে ৬৫ বছর, আর হিজরী সন মতে ৬৮ বছর হয়।


বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২১


কানপুর মাছলি বাজার মসজিদের ঘটনা ও ব্রিটিশ সরকারের রায়ের বিরুদ্ধে আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র ফাতওয়া :

কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াসবিরােধী ইংরেজদের বিচার বিভাগীয় কোনাে রায়কে আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি মানতে পারেননি। সে সময় অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চুপ থাকার বদলে ইংরেজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এ মসি সৈনিক কলমযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ব্রিটিশদের রায়কে যারা মাথা পেতে নিতেন তাদের বিরুদ্ধেও কলম চালাতেন তেজস্বী তরবারির ন্যায়। হােক না তারা তাঁর যে কোনাে পরম বন্ধু বা আপনজন। সেখানে তাঁর বিন্দুমাত্র ছাড় নেই। কানপুরে মাছলি বাজারে ব্যাখে মসজিদের ঘটনাটি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১৯১৩ ঈসায়ীর ফেব্রুয়ারীতে ব্রিটিশ সরকার রাস্তা সম্প্রসারণের অজুহাতে উল্লেখিত মসজিদটির পূর্ব অংশ ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। ঐ জামে মসজিদে ওলামাগণের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তাতে বলা হয়েছে মসজিদের পূর্বাংশ, যেখানে গােসল খানা রয়েছে, তা মসজিদেরই অংশ। ইসলামী শরিয়তে মসজিদের কোনাে অংশ বিক্রি, হস্তান্তর, রদবদল ইত্যাদি করা যাবে না। এ ফাতওয়ার সমর্থনে বেরেলি শরিফ, বদায়ুন ও ফিরিঙ্গি মহলের ওলামাগণের ফাতওয়া প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এতে সরকারের সিদ্ধান্তে কোনাে পরিবর্তন আসলাে না; বরং ১৯১৩ ঈসায়ী ৩ জুলাই ব্রিটিশ সরকার মসজিদের উক্ত অংশটি ভেঙ্গে দিলাে। তার প্রতিবাদে আম মুসলিম জনতা রাস্তায় মিছিল নিয়ে ফেটে পড়লাে। ব্রিটিশ সরকার মুসলমানদের উপর গুলি বর্ষণ করে এবং বহু লােককে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়েছিলাে। মুসলমানরা অত্র স্থানে ইটগুলাে পুনরায় স্ব-স্ব স্থানে বসিয়ে দেওয়াল তৈরি করে ফেললাে। অবশেষে ১৬ আগষ্ট ১৯১৩ ঈয়ায়ী মৌলভি আব্দুল বারি ফারাঙ্গি, রাজা সাহেব মাহমুদ আবাদ ও স্যার রেযা আলির নেতৃত্বে মুসলমানের একটি প্রতিনিধি দল উত্তর প্রদেশের গভর্ণরের সাথে সাক্ষাত করেন এবং ১৪ অক্টোবর ১৯১৩ ঈয়ায়ী এ সকল প্রতিনিধি কতিপয় শর্তে মুসলিমজাতির পক্ষে ভারতের ভাসরায়ে হিন্দু'র সাথে বিষয়টি মীমংসা করেন।
উল্লেখিত শর্তসমূহের মধ্যে নিম্নের শর্তটি বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য ছিলাে। শর্তটি হচ্ছে- "যেহেতু মসজিদের সাধারণ উচ্চতা রাস্তার উচ্চতা হতে কয়েক ফুট উপরে সেহেতু গােসল খানাটি পূর্বেকার স্থানে পুণঃনির্মাণ করা হবে। কিন্তু নিচু ভূমিতে ফুটপাত নির্মাণ করা হবে। যাতে করে পথচারী পার হতে পারে।"

এ চুক্তিটি সম্পর্কে মাওলানা সালামত উল্লাহ (সহ-সভাপতি মজলিসে মুঈদুল ইসলাম ফারাঙ্গি মহল লক্ষ্ণৌ) আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র কাছে প্রশ্ন উত্থাপন করলেন এবং তাঁকে এ সম্পর্কে আরাে বিস্তারিত লেখার জন্য অনুরােধ করেন। যাতে কিছু গােপন না থাকে। আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে ব্রিটিশদের এ রায় ও শর্তের বিরুদ্ধে এবং যারা তাদের কাণ্ডজ্ঞানহীন শর্ত মেনেছেন তাদের ব্যাপারেও কলম ধরেন। 

তিনি বলেন- "ওয়াকফ সম্পত্তি বিনিময়ে বা বিনিময় ব্যতিরেকে হস্তান্তর যােগ্য নয়"। তিনি কুরআন-সুন্নাহ বিরােধী বলে অভিমত পেশ করেছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি 'এবানাতুল মােতাওয়ারি' নামক একটি স্বতন্ত্র কিতাব রচনা করেন।" আবদুল বারি ফারাঙ্গি মহল্লি সাহেব আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর্যুক্ত কিতাবের রদে অনেক অপচেষ্টা চালিয়েছিলাে। কিন্তু শেষ অবধি আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র 'কামেউল ওয়াহিয়্যাত' লেখে আবদুল বারি ফারাঙ্গিকে নিশ্চুপ করে দিলেন।

যদি ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইংরেজ উপনিবেশবাদীদের নিমকপুষ্ট হতেন, তাহলে তাে তিনি এর প্রতিবাদ না করে ইংরেজদেরকে এ বলে চুপ থাকতেন "লড়াে আর রাজত্ব করাে"। 

(*আনওয়ারে রেখা, প্রাগুক্ত, প্রবন্ধকার, সৈয়দ নূর মুহাম্মদ কাদেরি, কৃতঃ"আ'লা হযরত কি সিয়াসি বসিরত, পৃষ্ঠা:৪৮৫-৪৮৬। **প্রফেসর ড. মাসউদ আহমেদ (অধ্যক্ষ, সরকারি ডিগ্রি কলেজ, সুকসুর সিন্ধ, পাকিস্তান) রচিত "গুনাহে বে-গুনাহি", এদারায়ে মাসউদিয়্যাহ, নাযিমাবাদ, কারাচি, পাকিস্তান, প্রকাশসন-১৪১৮ হিজরি, ১৯৯৮ ঈলারী, পৃষ্ঠা ৩১ ৩২।*** (আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ৮২,৮৩)।

ইসলামী আলোচনা ব্লগ সাইট ভিজিট করুন


মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২১


আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র ইংরেজবিরােধিতার কিছু নমুনা:

 যখন কেউ একটি জাতিকে ভালবাসে তখন তিনি সেই জাতির সবকিছুকে ভালবাসে। অথাৎ সেই জাতির ধর্ম, সংস্কৃতি, রাজ্য, আইন, শিক্ষাব্যবস্থা, সভ্যতা, ধ্যান-ধারণা, দর্শন, আশ্রয়াধীন মানুষ, অনুসারীবৃন্দ, সাহায্যকারী ও সে জাতির চরিত্র বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি সব কিছুই তিনি ভালবাসেন। এটাই হলাে প্রকৃত ভালবাসার আলামত। হাদিস শরিফে আছে - (আরবীর বাংলা অনুবাদ, কিতাবে আরবী উল্লেখ আছে।) "প্রেমিক সর্বদা তার প্রেমাস্পদের আলােচনা করে"।

আরাে বিবৃত হয়েছে। (আরবীর বাংলা অনুবাদ,কিতাবে আরবী উল্লেখ আছে।)কোন বস্তুর ভালোবাসা তার প্রেমিককে অন্ধ ও বধির করে দেয়।"

বর্ণিত সূত্রমতে দেখা যায় যে, আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন ব্রিটিশ ও ইংরেজদের ঘাের বিরােধী। আসুন, পর্দা আবৃতকারীদের পর্দা সরিয়ে দেই এ মহান ইমামের পবিত্র সত্তা থেকে। বিবেককে নিয়ে যাই সত্যের দিকে। অপবাদকারীদের দূর্গে হানি আঘাত।


খ্রিষ্টান ও ইহুদীদের দ্বারা যবেহকৃত পশু ভক্ষণ ও তাদের নারীদের বিয়ে করার ব্যাপারে অভিমতঃ-

 খ্রিষ্টান ও ইহুদীদের দ্বারা যবেহকৃত পশু খাওয়া ও এদের নারীদের বিয়ে করা বৈধতার ঘােষণা দেবেন একজন ইংরেজপ্রীত আলেম। একজন ইংরেজ নিমকপুষ্ট আলেমের কাছে এটাই আশা করা যায়। এ ব্যাপারে শরিয়তের

বিধানকে বিভিন্ন ছলচাতুরীর মাধ্যমে বৈধতার পক্ষে দেখিয়ে মুসলমানদেরকে বিপদগামী করে ইংরেজদের সন্তুষ্টি অর্জন করাই হবে তার কাজ। কিন্তু আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের যবেহকৃত পশু ও তাদের নারীদের বিবাহ করার ব্যাপারে মুসলমানদেরকে কঠোর হুঁশিয়ার করে এগুলােকে অবৈধ ঘােষণা করেছেন। সাথে সাথে যে সমস্ত ফোকাহা এ ব্যাপারে বৈধতার পক্ষাবলম্বন করেছেন তাদের বিশদ ব্যাখ্যা ও খণ্ডন করেছেন। দেখুন, নিম্নে তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।

১৩১৮ হিজরিতে ভারতের মাদ্রাসায়ে ইসলামিয়্যার শিক্ষক হাফেজ আবদুল আজিজ সাহেব আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র কাছে প্রশ্ন করেছিলাে যে, অধিকাংশ দ্বীনি কিতাবসমূহে আহলে কিতাবের যবেহকৃত পশু হালাল বলে ঘােষিত হয়েছে। তাহলে বর্তমান ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের যবেহকৃত পশু হালাল না হারাম?

এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে কোনাে ধরনের সন্দেহ নেই যে, খ্রিষ্টান যারা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর সন্তান বলে আক্বিদা পােষণ করে এবং ইহুদি যারা হযরত ওযাইর আলাইহিস সালামকে খােদার পুত্র বলে মনে করে এ সমস্ত খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের যবেহকৃত পশু খাওয়ার বৈধতা নিয়ে আমাদের ইমামগণের মতানৈক্য রয়েছে। অধিকাংশরা নিষিদ্ধ বলে অভিমত পেশ করেছেন এবং এটার উপরই চূড়ান্ত রায় বলে বিবৃত হয়েছে। আর কিছু কিছু ফকিহ মুহাদ্দিসগণ বৈধ বলে ঘােষণা দিয়েছেন। যেমন- 'মাসতাসদা নামক কিতাবে নিষিদ্ধতা ও 'দুররে মুখতার এ বৈধতার ঘােষণা পাওয়া যায়। তবে মাকরূহ হওয়ার ক্ষেত্রে কারাে এখতেলাফ নেই, জরুরী ব্যতিরেকে। সত্যিকার কিতাবিদের যবেহ কৃত প্রাণী খাওয়াকেও ওলামাগণ অপছন্দ করেছেন। তাহলে উপর্যুক্তটি আরাে বেশি অপছন্দনীয় হবে। আর যারা বৈধতার ঘােষণা দিয়েছে এ শর্তে যদি যবেহ করার সময় আল্লাহ তায়ালার নাম নেয়া হয় এবং সাথে যদি ঈসা আলাইহিস সালাম'র নাম উল্লেখ না হয়। আর যদি ইচ্ছাকৃত তকবির ছেড়ে দেয় তাহলে মুসলমানদের যবেহকৃত পশুও বৈধতা হারাবে। ইহুদি নাসারা তাে দূরের কথা।

উপর্যুক্ত আলােচনাটি ছিলাে ইসলামি আইন বিষয়ক এবং ইমামদের মতানৈক্যের ব্যাপার। কিন্তু আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ বিষয়ে নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করে বলেন-

(উর্দুর বাংলা অনুবাদ,কিতাবে উর্দু উল্লেখ আছে) "বর্তমান খ্রিষ্টানদের অবস্থা সম্পর্কে আমি জানি। তারা যবেহ করার সময় না তকবির বলে, না যবেহ করার মত যবেহ করে। মুরগী ও পাখিদেরকে তাে গলা টিপে হত্যা করে। এ অধম এটা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছি। বর্তমান খ্রিষ্টানদের যবেহকৃত পশু নিশ্চয় হারাম (নিষিদ্ধ)। আর ইহুদির বেলায়ও একই হুকুম"। (আলা হযরত ইমাম আহমদ রেখা রচিত 'ফাতাওয়ায়ে রেযভীয়্যাহ, খন্ড - ০৮, পৃষ্ঠা ৩৩১, সুন্নি দারুল এশায়ত মুবারক, পুরাতন আজমগড়, প্রকাশকাল - ১৯৯২ ইংরেজী।)

খ্রিষ্টান, ইহুদি ও নাসারাদেরকে বিয়ে করার বৈধতা-অবৈধতার উপর দীর্ঘ কুরআন- সুন্নাহ ও ইসলামি আইনবিদদের ফয়সালা বিবরণীর পর আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি ব্যক্তিগত অভিমত পেশ করে বলেন-

(উর্দুর বাংলা অনুবাদ,কিতাবে উর্দু উল্লেখ আছে) "খ্রিষ্টান ও ইহুদি নারীদের বিয়ে করা ও তাদের যবেহকৃত পশু হালাল-হারাম বিষয়ে যখন ওলামায়ে কিরামের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে, যদিও বৈধতার পক্ষে রায় সাবস্ত্য হয়েছে, তারপরেও খ্রিষ্টানদের জবেহকৃত ও তাদের নারীদেরকে বিবাহ করা থেকে সাবধানতা অবলম্বন ও বিরত থাকাই জরুরি। আজকাল কিছু ইহুদি এমনও পাওয়া যায়, যারা হযরত ওযাইর আলাইহিস সালামকে খােদার পুত্র মনে করে। তাদের দ্বারা যবেহকৃত জন্তু খাওয়া ও তাদের নারীদের বিয়ে করা থেকে বেঁচে থাকা জরুরী জ্ঞান করুন। এ সমস্ত বিষয়ে ইমামদের মতানৈক্যে পতিত হওয়াটা সতর্ক মানুষের কাজ নয়। যদিও বাস্তবে এ সমস্ত ইহুদি ও নাসারা আল্লাহ তায়ালার কাছে কিতাবিও হয় তবুও তাদের নারীদের বিয়ে করা এবং তাদের দ্বারা যবেহকৃত পশু ভক্ষণ করাতে আমাদের কোনাে লাভ নেই। না শরিয়ত আমাদের উপর তা বাধ্যতামূলক করেছে, না (আলহামদুলিল্লাহ) আমাদের এটার প্রয়ােজন আছে। বস্তুত কিতাবি হওয়া শর্তেও ওলামাগণ অপ্রয়ােজনে বিরত থাকাই শ্রেয় বলে অভিমত পেশ করেছেন।

'ফতহুল কাদিরে' রয়েছে, "কিতাবিদের সাথে নিকাহ জায়েয, তবে বিরত থাকাটাই শ্রেয়। তাদের যবেহকৃত পশুও বিনা প্রয়ােজনে না খাওয়াই উত্তম।" যদি বৈধতাদানকারী ওলামাদের মাযহাব সত্য হয়, আর বাস্তবে যদি এরা আল্লাহর নিকট তাদের এতেকাদের কারণে মুশরিক বলে গণ্য হয়, তবে তাদেরকে বিয়ে করা নির্ঘাত ব্যভিচার ও তাদের যবেহকৃত জন্তু খাওয়া শর্তহীন হারাম বলে বিবেচিত হবে। নাউযুবিল্লাহ, তাহলে তাে বুদ্ধিমানের কাজ এমন হতে পারে না, যার এক দিকে অনভিপ্রেত এবং অপর দিকে একেবারেই নিষিদ্ধ। এ অধম এমনটি ধারণা করতাম শেষ পর্যন্ত আল্লাহর তৌফিকে 'মাজমাউল আনহার নামক কিতাবে এ ধারণার স্বপক্ষে রায় দেখলাম। যেখানে তিনি বলেন- বর্তমান আমাদের দেশের প্রশাসকদের উচিত তারা যেনাে খ্রিষ্টানদের যবেহকৃত পশু ভক্ষণে নিষেধ করেন।

কেননা বর্তমানে খ্রিষ্টানরা ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর পুত্র বলে ব্যাখ্যা করে। যখন প্রয়ােজনীয়তাও বিদ্যমান নেই তাহলে সাবধানতা অবলম্বনই ওয়াজিব। কেননা তাদের যবেহকৃত পশু নিয়েও ওলামাদের এখতেলাফ বিদ্যমান। যা আমি পুর্বে আলােচনা করেছি। যখন প্রয়ােজনই নেই, তখন নিষিদ্ধতার দিকটাকে প্রাধান্য দেয়া উত্তম।

প্রিয় পাঠক! ইমামে আহলে সুন্নাত আ'লা হযরত শাহ আহমদ রেযা খান বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র দূরদৃষ্টির নমুনা দেখুন কতই চমৎকার! তিনি ইহুদি, খ্রিষ্টান তথা বিজাতীয়।মহিলাদের সাথে মুসলমান ছেলেদের বিবাহ-শাদীর বন্ধনকে তীব্রভাবে নিষিদ্ধ ঘােষণা করলেন। যদিও ইসলামি আইনবিদদের মধ্যে কিছু শিথিলতা লক্ষ্যণীয়।

তিনি তাদের এখতেলাফ ও শিথিলতায় মনােনিবেশ না করার জন্য কীভাবে সতর্ক করলেন! কারণ তিনি জানতেন, মুসলমানদের পতনের কারণসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম কারণ হলাে মুসলমানদের পবিত্র রক্ত বিজাতীয় রক্তের সাথে মিশে যাওয়া।

তুরস্কের ওসমানি রাজত্বে বিপদের কারণ হলাে, অমুসলিম দাস-দাসীদের বিবাহ করা। রাজাদের ব্যস্ততা থাকতাে রাজ্যের যাবতীয় কর্মে, আর রাজমহলে যাবতীয় কর্তৃত্ব থাকতাে অমুসলিম রাণীদের কাছে, যাদেরকে তারা বিবাহ করেছিলাে।তাইতাে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ওস্তাদ কুরদ আলি সাহেব ওসমানি রাজত্ব অধঃপতনের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেন- (আরবীর বাংলা অনুবাদ,কিতাবে আরবী উল্লেখ আছে।) "ওসমানি রাজত্ব পতনের মূল কারণ হলাে বহু খ্রিষ্টান দাস-দাসীদের সাথে মিলনের কারণে বাদশাহদের রক্ত বিগড়ে গিয়েছিলাে"।(ইমাম আহমদ রো রচিত"এ'লামুল আলাম বি-আন্না হিন্দুস্থান দারুল ইসলাম" (ফাতাওয়ায়ে রেফভীয়্যাহ), খণ্ডঃ ১৪,পৃষ্ঠা ১২২, মারকাযে আহলে সুন্নাত মরকাত পূর্ব বন্দর, গুজরাট। প্রকাশকাল- ২০০২ ইংরেজি। আল ইসলাম ওয়াল হাজারাতুল আবরিয়া, খন্ড - ০২, পৃষ্ঠাঃ ৪৯৯। মাওলানা সাঈদ আহমদ আকবরবাদী মুসলিমদের উত্থান পতন", (অনুবাদে মৌলভি মুহাম্মদ খুরশিদ), বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ১৯৮৯ ঈসায়ী, পৃষ্ঠা: ১৫১ ও আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ৭৬,৭৭,৭৮,৭৯,৮০ )।

ইসলামী আলোচনা ব্লগ সাইট ভিজিট করুন

রবিবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২১

 


ইমামে আহলে সুন্নাত আ'লা হযরত শাহ আহমদ রেযা খান বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন প্রখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ ও ব্রিটিশবিরােধী যােদ্ধা মাওলানা রেযা আলি খান বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (১৮০৯-১৮৬৬ ইংরেজি) এর সুযােগ্য নাতি। ইংরেজ সুবেদার জেনারেল বখত খান ১৮৩৪ সালে মুরাদাবাদ হামলা চালালে মাওলানা রেযা আলি খান রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাকে পরাস্ত করেন। ব্রিটিশবিরোধী মুক্তিযােদ্ধারা তাকে মুজাহিদে কবির (মুজাহিদ নেতা) বলে সম্বােধন করতেন। তিনি ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলনের জন্য পঁচিশটি ঘোড়া বিনামূল্যে দান করেন। ইংরেজ সৈন্যরা এ দানের উপর ক্ষুদ্ধ হয়ে তাঁর আরোে পঁচিশটি ঘোড়া ছিনিয়ে নেয়।

ইংরেজবিরােধী যােদ্ধাদের খাবার ও থাকার ব্যবস্থা মাওলানা রেযা আলি খান রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র ঘরে হতাে। তাইতাে এক ব্রিটিশ ঐতিহাসিক মিস্টার মিলিসন বলেন, "যখন ব্রিটিশ নেতৃবৃন্দ হিন্দুস্থান দখল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলাে তখন ঐ সময়ে মাওলানা ফজলে হক খায়রাবাদি, মাওলানা আহমদুল্লাহ শাহ মাদ্রাজি, মাওলানা বখশ সবহায়ি ও মাওলানা রেযা আলি বেরেলভী প্রমুখ আপােষহীন আলেমরা ব্রিটিশ।সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিলেন"।
(ক্বারি ইমাম আহমদ রেযার জীবন কর্মের উপর ৪র্থ প্রবন্ধ সম্ভার, দিল্লী, এপ্রিল সংখ্যা-৮৯ ইংরেজি, প্রবন্ধকার: এডভোকেট আসাদ নিজামি, পৃষ্ঠা ৫০০, "ইমাম আহমদ রেখা কী জদ্দে আমজাদ"।)

মিস্টার মিলিসন আরাে বলেন, "যদি মোল্লা রেযা আলি তাঁর সহযােদ্ধাদের নিয়ে আমাদের মােকাবেলা না করতাে তবে বেরেলি শহরটি আমাদের দখলে আসা একেবারেই সহজ ছিলাে। কাজেম আলির ছেলে রেযা আলি বেরেলি সাধারণ মানুষকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে শুধু উসকানীদাতা অপরাধে অপরাধী নয়, বরং তিনিই তাে বেরেলির জনসাধারণকে ব্রিটিশ সৈন্যদের মােকাবেলার জন্য সর্বাত্মক সহযােগিতা করেছিলেন। তাঁর কারণেই ব্রিটিশ সৈন্যদের রক্তের বন্যা বয়ে যায়"। (প্রাগুক্ত,পৃষ্ঠা - ৫১১)।

আল্লামা হাসান দেহলভী "মাহনামা তরিকত" নামক ম্যাগাজিনে (দিল্লী) বলেন, "ব্রিটিশ জেনারেল হাডসন অবশেষে আল্লামা রেযা আলি খানের মস্তক ছিন্ন করতে তৎকালীন সময়ে পাঁচশত রুপী পুরস্কার ঘােষণা করে। কিন্তু এরা এ কাজেও কামিয়াব হতে পারেনি। (প্রাগুক্ত,পৃষ্ঠা - ৫১১)।

বিশিষ্ট গবেষক Usha Sanyal তার Ahmad Riza Khan Barelwi in the path of the prophet  নামক গ্রন্থে আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র পিতামহের ব্রিটিশ বিরােধিতা এবং এ সংক্রান্ত একটি কারামত বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-
A story is told about his grandfather, Maulana 'Riza Ali Khan (1809-65/66), relating to the British resumption of control over Bareilly after the revolt had been put down in that town. After the tumult of 1857, the British tightened the reins of power and committed atrocities toward the people, and everyday went about felling scared, important people left their houses and went back to their villages. But Maulana Riza Ali Khan continued to live in his house as before and would go to the mosque five times a day to say his prayers in congregation. One day some Englishmen passed by the mosque and decided to see if there was anyone inside so they could catch hold of them and beat them up, They went inside and looked around but didn't see anyone. Yet the maulana was there at time. Allah had made them blind, So that।they would be unable to see him. (When) he came out of the mosque, they were still watching out for people but no one saw him.

"দাঙ্গা দমনের পর ব্রিটিশদের কর্তৃত্ব পুনরুথান সম্পর্কে তাঁর দাদা মাওলানা রেযা আলি (১৮০৯-৬৫/৬৬) সংশ্লিষ্ট একটি গল্প বলা হয় যে, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পর ব্রিটিশরা তাদের ক্ষমতার লাগাম আরাে জোরে টেনে ধরেন এবং শহরগুলোর গুরুত্বপূর্ণ লােকদেরকে শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার জন্য বাধ্য করেন। কিন্তু মাওলানা রেযা আলি খান রীতিমত তাঁর নিজ বাড়িতে বাস করছিলেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে জামাআত সহকারে আদায় করতেন। একদিন কিছু ইংরেজ সৈন্য মসজিদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন এবং ভিতরে দেখার সিদ্ধান্ত নিলেন, যাতে তারা তাদেরকে ধরতে পারেন এবং প্রহার করতে পারেন। তারা ভিতরে গেলেন এবং চারিদিকে দেখলেন কিন্তু কাউকে দেখতে পেলেন না। অথচ মাওলানা (রেযা আলি খান) ওই সময় সেখানেই ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্ধ করে রাখলেন যাতে তারা তাঁকে না দেখতে পায়। যখন তিনি মসজিদ থেকে বের হলেন,তারা তখনও পাহারা দিচ্ছিলাে; কিন্তু কেউ তাঁকে দেখলাে না। (Usha Sanyal by Ahmad Riza Khan Barelwi: In the path of the prophet, page: 51, One world publications, 185 Banbury Road, Oxford, England)

এ চমকপ্রদ ঘটনাটি বর্ণনার পর ড. উষা বলেন, The story is interesting at many levels. It casts Maulana Riza Ali as a fierce opponent of the British who put his trust in God instead or fleeing and who was so holy and so good that God protected him, blinding the enemy to his presence.

"বিভিন্ন কারণে ঘটনাটি খুবই আনন্দদায়ক। এটা রেযা আলি খানকে ব্রিটিশদের জন্য একটি ভয়ংকর ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত করে। যিনি পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে মহান আল্লাহ তায়ালার উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখেন। তিনি খুবই পবিত্র স্বভাবে ভালো লােক ছিলেন। তাঁর উপস্থিতি অদৃশ্য করে দিয়ে তাঁকে আল্লাহ তায়ালা রক্ষা করেন।" (Aforsaid, page: 52)

অন্যদিকে দেখা যায় যে, আ'লা হযেরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র সম্মানিত পিতা ইমামুল মুতাকাল্লেমিন মাওলানা নকি আলি খান বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহিও ছিলেন তাঁর সম্মানিত পিতার মতাে ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলনের বীরসৈনিক। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক চাঁন্দা শাহ হােসাঈনি লিখেন- (উর্দুর অনুবাদ দেওয়া হলো,কিতাবে উর্দু উল্লেখ আছে) "মাওলানা রেযা আলি ব্রিটিশদের সাথে মুখে ও কলমি যুদ্ধে খুবই প্রসিদ্ধ ছিলেন। ইংরেজরা মাওলানার জ্ঞান, গুরু গাম্ভীর্য ও সাহসিকতাকে খুবই ভয় পেতাে। তাঁর সাহেবযাদা মাওলানা নকি আলি খানও ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন।
হিন্দুস্থানের ওলামাদের মধ্যে মাওলানা নকি আলি খান সাহেবের মর্যাদা ও সম্মান খুবই উপরে ছিলাে। ইংরেজবিরােধী আন্দোলনে তাঁর অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।"
(মুহাম্মদ হানিফ খাঁ রেযভি রচিত "মুকাদ্দামায়ে উসুলুর রসাদ", ইমাম আহমদ রেযা একাডেমি, ইউপি, ডারত, পৃষ্ঠা-২২)।

প্রখ্যাত লেখক ও ঐতিহাসিক আবদুল হাকিম খাঁ আখতার শাহ জাহানপুরি তাঁর লেখা "বরতানভি মাযালেম কি কাহানি আবদুল হাকিম খা আখতার শাহ জাহানপুরি কি জুবানি" নামক প্রবন্ধে লিখেন- (উর্দুর অনুবাদ দেওয়া হলো,কিতাবে উর্দু উল্লেখ আছে) "দেশ থেকে ইংরেজদের বের করে দেওয়ার জন্য হিন্দুস্থানের আলেমগণ একটি জিহাদ কমিটি গঠন করেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক জিহাদ করার জন্য জিহাদ কমিটি 'জিহাদ' এর ফতওয়া জারি করেন। ওই জিহাদ কমিটির নেতৃত্বে থাকা মাওলানা রেযা আলি বেরেলভী, মাওলানা ফজলে হক খায়রাবাদি, মুফতি এনায়েত আহমদ কাকুরি, মাওলানা নকি আলি খান বেরেলভী, মাওলানা আহমদ উল্লাহ শহিদ, মাওলানা আহমদ মাশহাদি বাদায়ুনি বেরেলভী, জেনারেল বখত খান ও অন্যান্যদের নাম উল্লেখযােগ্য।" (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ২৩। **মাশয়ালে রাহ -
বরতানভি মাযালেম কি কাহানি আবদুল হাকিম খাঁ আখতার শাহ জাহানপুরি কি জুবানি, প্রথম অধ্যায়, ১৮৫৭ সালের টুকিটাকি ও ফলাফল, পৃষ্ঠা: ১২৬)।

আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি এমন একটি ব্রিটিশবিরোধী পরিবারে বেড়ে ওঠেছেন, যে পরিবারের সদস্যকে ব্রিটিশদের এজেন্ট বলে মন্তব্য করা হাস্যকর বৈ আর কিছু নয়। তিনি শৈশব থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত ব্রিটিশবিরোধী ছিলেন। রাজনৈতিক ময়দানে এদের বিরুদ্ধে কলমসৈনিক হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁরই আদর্শ অনুসরণে পরবর্তীতে তাঁর শাহজাদা, ছাত্র, ভক্ত-অনুসারী ও খলিফাগণ প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি ব্রিটিশসহ সকল বাতিল শক্তিকে ঘৃণা করতেন ও শত্রু মনে করতেন। কাউকে কখনাে কিছুক্ষনের জন্যও আপন মনে করতেন না। এ উপমহাদেশে ব্রিটিশদের অবৈধ দখলদারিত্ব এবং ব্রিটিশদের অন্যতম সহযােগী ও মুসলিমবিরােধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হিন্দুদের রাজনৈতিক দুরভিসন্ধির গােপন তথ্যগুলাে ফাঁস করে ইংরেজবিরােধিতার আড়ালে বন্ধুর চাদরে আবৃত চিরশত্রু হিন্দুদের কূটনৈতিক এবং সে সময়ে মুসলমানদের কতিপয় দিকভ্রান্ত নেতা, যারা হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের নিদর্শন স্বরূপ দূর্গাপূজা, কালিপূজা, হিন্দুদের শবদেহ বহনসহ বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেছিলাে তাদেরকে সর্তক করতঃ সহজ সরল মুসলমানদেরকে রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা দিয়ে তিনি এ বিষয়ে পাঁচটি কিতাব রচনা করেছিলেন।
এগুলাে নিয়ে সামনে বিস্তারিত আলােচনা করা হবে ইনশাআল্লাহু তায়ালা।
(আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ৭২,৭৩,
৭৪,৭৫ ও ৭৬)।

শুক্রবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২১



মাওলানা মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভী

                               _______________

যুগে যুগে কালজয়ী জীবনাদর্শ ইসলামের প্রচার-প্রসারে এমন সব বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব ধরাধামে শুভাগমন করেন যাদের সৃজনশীল কর্মতৎপরতায় ইসলাম আজো বিশ্বমাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁদের অন্যতম। তিনি ১২৭২হিজরীর ১০ শাওয়াল (১৪ জুন ১৮৫৬) ভারতের (ইউপি) বেরেলী শহরে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর বুযুর্গ দাদা নাম রাখলেন মুহাম্মদ আহমদ রেযা খান। পিতা আল্লামা নক্বী আলী খান ডাকতেন ‘আহমদ মিঞা’ মাতা স্নেহের সাথে ‘আমান মিঞা’ নামে ডাকতেন। সংখ্যাতাত্ত্বিক নাম ‘আল মুখতার’ ১২৭৬ হিজরীতে চার বছর বয়সে কুরআন মজীদ পাঠ সমাপ্ত করেন তিনি। খোদা প্রদত্ত অসাধারণ মেধাশক্তির কারণে জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় ১২৮৬ হিজরীতে (১৮৬৯) সালে মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপনী সনদ অর্জন করেন। মাওলানা বেরলভী নিম্নোক্ত শিক্ষকদের নিকট থেকে ইলমে হাদীস ও ইলমে ফিকহর সনদ অর্জন করেন।

১. শাহ্ আলে রসূল মারহারভী (ওফাত ১২৯৬ হি./১৮৭৮ খ্রি.

২. মাওলানা নক্কী আলী খান (ওফাত ১২৯৭হি./১৮৭৯খ্রি.

৩. শায়খ আহমদ বিন যায়নী দাহলাম মক্কী (ওফাত ১২৯৯হি./১৮৮১খ্রি.)

৪. শায়খ আবদুর রহমান সিরাজ মক্কী (ওফাত ১৩০১হি./১৮৮৩খ্রি.)

৫. শায়খ হুসাইন বিন সালেহ (ওফাত ১৩০২হি./১৮৮৪খ্রি.)

৬. মাওলানা আবদুল আলী রামপুরী (ওফাত ১৩০৩হি./১৮৮৫খ্রি.)

৭. শায়খ আবুল হুসাইন আহমদ আন্নূরী (ওফাত ১৩২৪হি./১৯০৬)

৮. মির্জা গোলাম কাদের বেগ। (ওফাত ১৩০১হি./১৮৮৩খ্রি.)

মাওলানা বেরলভীর হাদীসের সনদ সূত্র হযরত শাহ্ ওয়ালি উল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী, হযরত শায়খ আবেদ সিন্ধী ও আল্লামা আব্দুল আলী লক্ষেèৗভীর সাথে সম্পৃক্ত। তাঁর কর্মময় জীবনের পরিধি ও অবদান ব্যাপক। ক্ষুদ্র পরিসরে তাঁর জীবন-কর্ম উপস্থাপন করা রীতিমত দুরূহ্ ও দুঃসাধ্য ব্যাপার। হুব্বে রাসূল তথা নবীপ্রেম তাঁর শ্রেষ্ঠ অর্জন। প্রাচীন ও আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় ছিল তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য, সফল বিচরণ। ধর্মতত্ত্ব, ভাষাতত্ব, সূফীতত্ত্বসহ প্রতিটি বিষয়ে তাঁর অবদান ছিলো বিস্ময়কর। এককথায় তিনি ছিলেন এক বিরল প্রতিভা সম্পন্ন বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব। কুরআন-সুন্নাহ্, ইজমা-কিয়াসের ভিত্তিতে তাঁর জ্ঞান গবেষণার বিশাল জগত বিনির্মিত। পঞ্চাশোর্ধ বিষয়ের উপর তাঁর ছোট বড় সবমিলে দেড় সহস্রাধিক গ্রন্থাবলী ইসলামের এক অমূল্য সম্পদ। ইসলামী আক্বিদা, বিশ্বাস ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সভ্যতা, দর্শন, রাজনীতি, অর্থনীতি সমাজনীতি, ধর্মনীতি, বাণিজ্যনীতি, আমদানী নীতি, রপ্তানীনীতি, রাষ্ট্রনীতি, পররাষ্ট্রনীতি প্রভৃতি বিষয়ে তাঁর প্রদত্ত নির্দেশনা ও অনুসৃত নীতিমালা সংকট মুক্তির পাথেয়। কুরআন সুন্নাহ্ ভিত্তিক শরয়ী বিধানের যথার্থ উপস্থাপনায় তাঁর গবেষণাধর্মী নির্ভরযোগ্য গ্রন্থাবলী যুগ যুগ ধরে দিশারীর ভূমিকা পালন করবে নিঃসন্দেহে। ৬৮ বছর ব্যাপী তাঁর কর্মময় জীবনে তিনি মাযহাব মিল্লাতের যে অপরিসীম খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন তা ইতিহাসের এক বিরল অধ্যায়।

ধর্মীয় জটিল কঠিন বিষয়াদির বিশ্লেষণধর্মী সমাধান দানের পাশাপাশি জ্ঞান বিজ্ঞান, দর্শন জ্যৌতিষশাস্ত্র। নক্ষত্র বিদ্যায় তিনি প্রজ্ঞা ও পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন।

১৯১৯ সালের ১৮ অক্টোবর এক্সপ্রেস পত্রিকায় আমেরিকার জ্যোতিষবিজ্ঞানী প্রফেসর আলবার্ট এফপুরট ভবিষ্যৎবাণী করেন যে, ১৯১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর কয়েকটি গ্রহ সূর্যের সামনে চলে আসার দরুন, উদ্ভূত মধ্যাকর্ষণ পৃথিবীতে মহাপ্রলয়ের সৃষ্টি করবে। আ’লা হযরতকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কুরআন-সুন্নাহর গবেষণার আলোকে মহাকাশ বিজ্ঞানীর এ ভবিষ্যৎবাণী মিথ্যা প্রমাণ করেন। ১৭ ডিসেম্বর দেখা গেল পৃথিবীর কোথাও কোন প্রকার বিপর্যয় ঘটেনি। আ’লা হযরতের গবেষণা অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হলো। পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধে এটা ছিল ইসলামের এক মহা বিজয়। মার্কিন বিজ্ঞানীদের মতবাদ খণ্ডনে আলা হযরত পরপর তিনটি গবেষণাধর্মী পুস্তক রচনা করেন।

১. আল কালিমাতুল মূলহামাতু ফিল হিকামাতিল মুহকামা লিওয়াহিল ফালসাফাতিল মুশাম্মাহ্ (১৯১৯খ্রি.)

২. ফওজে মুবীন দর রদ্দে হরকতে যমীন। (১৯১৯ খ্রি.)

৩. নুযুলে আয়াতে ফুরকান বি সুকুনে যমীন ওয়া আসমান। (১৯১৯খ্রি.)

উপমহাদেশে সুদীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাসে ও ধর্মীয় অঙ্গনে আক্বিদাগত বিভ্রান্তির নাজুক সন্ধিক্ষণে মুসলিম মিল্লাতের ঈমান আক্বিদা সংরক্ষণে তাঁর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট। ১৮৯৭ সালে ভারতের পাটনায় অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক কনফারেন্সে মাওলানা বেরলভীর প্রদত্ত ভাষণ মুসলমানদের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র রচনা করেছে।

তিনি ছিলেন প্রকৃতপক্ষে দ্বিজাতিতত্ত্বের পথিকৃৎ। ১৯৪৭ সালে ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা তাঁরই চিন্তাধারার বাস্তব রূপায়ন। তিনি ১৩৩৯হিজরিতে (১৯২০খ্রি.) তরকে মুয়ালাত তথা অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে ঐতিহাসিক ফতোয়ার আলোকে ব্রিটিশ বেনিয়াদের কবল থেকে ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার প্রয়াসে সকলকে সজাগ করেন। মুসলমানদের স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দ্বি-জাতি তত্বের বিকল্প নেই বলে ঘোষণা দেন। এ ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৯২০ সালে আল হুজ্জাতুল মুতামিনা বি আয়াতিল মুমতাহিনা’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। যা উপমহাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের এক ঐতিহাসিক দলীল। এ ছাড়াও তিনি উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন।

১. এলামূল এলাম বি আন্না হিন্দুস্তান দারুল ইসলাম (১৮৮৮খ্রি.)

২. দাওয়ামূল আয়শি ফী আইম্মাতি কুরাইশ (১৯৯০খ্রি.)

৩. তাদবীর ফালাহ্ ওয়া নাজাত ওয়া ইসলাহ্ (১৯১২খ্রি.)

    ইসলামী আলোচনা ব্লগ সাইট ভিজিট করুন


পরবর্তীতে ভারতবর্ষে মাওলানা বেরলভীর রাজনৈতিক দর্শন ও ভাবাদর্শে মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এগিয়ে এলেন। তাদের নেতৃত্বে চলতে লাগলো মুসলমানদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। ১৯৩০ সালে ড. আল্লামা ইকবাল ভারতের এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হলে তিনি মুসলমানদের পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জোরদার করেন। ফলে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট মুসলিম লীগের আন্দোলন সফল হলো দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার স্বাধীন সার্বভৌম মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হল এবং ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করলো।

এ মহামনিষীর অনন্য প্রতিভা মহান স্রষ্টার এক অপূর্ব সৃষ্টি। বৈচিত্রে মৌলিকতায় ও সৃষ্টির বিপুলতায় তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। বিশ্বের অসংখ্য জ্ঞাণীগুণী পণ্ডিত বিশেষজ্ঞগণ এ মনীষীর অনন্য প্রতিভার স্বীকৃতি দিয়েছেন। আল্লামা ড. ইকবাল তাঁকে ‘যুগের আবু হানিফা’ অভিধায় ভূষিত করেছেন। আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. স্যার জিয়াউদ্দিন তাঁকে নোবেল প্রাইজের যোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিমত ব্যক্ত করেন। ১৩৩০হিজরীর (১৯১১খ্রি.) তিনি শায়খ মুসা আলী আশশামী আল আযহারী কর্তৃক ‘ইমামূল আইম্মা আল মুজাদ্দিদুল উম্মাহ্’ তথা চতুর্দশ শতাব্দীর মহান সংস্কারক উপাধিতে ভূষিত হন।

হেরমে নববী শরীফের ওস্তাদ ফখরুল ওলামা মাওলানা আলী ইবনে আহমদ তাঁর সম্পর্কে বলেন ‘‘কেন এরূপ হবেন না? তিনি তো (ইমাম আহমদ রেযা) এ যুগে আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলিম মিল্লাতের ত্রাণকর্তা। আ’লা হযরতের নিকট ফত্ওয়া প্রার্থী মীর্যা মুহাম্মদ ইসমাঈল বেগ ২৪ শাবান ১৩৩৯ হিজরীতে স্বীয় আবেদনপত্রে আ’লা হযরতকে যুগের জুনাইদ ও যুগের শিবলী হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

মাওলানা কাজী গোলাম গিলানী (শামস আবাদ পাঞ্জাব) ১৮ রজব ১৩৩১হিজরীতে আ’লা হযরত সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, ‘ফাযেলে বেরলভী বর্তমান শতাব্দির মুজাদ্দিদ। জগতের ত্রাণকর্তা, জ্ঞান ভাণ্ডার, আদর্শ চরিত্রের আধার, পরম সম্মানিত আলেমকূলের সর্দার, বিজ্ঞজনদের অগ্রবর্তী।

গুজরাটের বিশিষ্ট আলিম আল্লামা আনসারুল হক দেহলভী ১৩১৭হিজরীর ৭ রজব এক ফতওয়ার শিরোনামে আ’লা হযরতকে সম্মানজনক মর্যাদামণ্ডিত সম্বোধনে ভূষিত করেন।

‘আলিমগণের সম্মানিত, কামিলগণের পুরোধা, আল্লাহর নিদর্শনাদির অন্যতম নিদর্শন, আল্লাহর বরকতসমূহ হতে মহান বরকত। দ্বীনের সংস্কারক, আল্লাহর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের যোগ্য প্রতিনিধি। তিনি আরো বলেন, মাওলানা রেযা বেরলভী আমাদের পরম শ্রদ্ধাস্পদ ঈমানদার মানব দানবদের উপর মহীয়ান অনুগ্রহ পরায়ণ স্রষ্টা আল্লাহ্ সর্বদা তাঁর ফুয়ুজাত প্রবহমান রাখুন।

বিশ্ব বুকে যাঁরা আপন কর্মে মানুষের অন্তর্জগতে ঠাঁই করে নিয়েছেন, তেমনি এক কিংবদন্তি মহামনীষীর নাম ইমাম আহমদ রেযা। বিশ্বব্যাপী আ’লা হযরত নামে যিনি পরিচিত, আজ হতে ৯৪ বছর পূর্বে ১৩৪০ হিজরীর ২৫ সফর শুক্রবার বাদ জুমা ২টা ৩৮ মিনিটে ইসলামী দুনিয়ার এ মহান মুজাদ্দিদ জ্ঞান জগতের বিস্ময় তাঁর মওলায়ে হাকিকী রফীকে আ’লার সান্নিধ্যে গমন করেন। ভারতের বেরেলী শহরে সুন্নীয়তের নিশান বরদার দারুল উলুম মানযারুল ইসলাম এর উত্তর পার্শ্বস্থ মাযার শরীফে সুন্নী জগতের এ মহান দিকপাল চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। তাঁর অনুসৃত আদর্শ অনুসরণে আল্লাহ্পাক আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন- আমীন।

আনজুমান ট্রাষ্ট ভিজিট করুন



বুধবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২১

মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরের নিকট আযান দেয়া জায়েয আছে কিনা?

উত্তর : হ্যা, জায়েয আছে। এই অধম (ইমাম আহমদ রেযা) এই মাছআলার উপর একটি পৃথক পুস্তিকা রচনা করেছি এবং নাম রেখেছি "ঈযানুল আজরি ফী আযানীল কাবরি"। উহা দেখা যেতে পারে।

_______________

ইরফানে শরিয়ত (প্রথম খণ্ড,পৃষ্ঠা - ৪২)

মূলঃ আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

অনুবাদ: অধ্যক্ষ হাফেজ মুহাম্মদ আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২১

 

পুরুষরা সোনার আংটি পড়তে পারবে?

প্রশ্ন :  সখ করে অথবা বিশেষ প্রয়ােজনে পুরুষ লােকেরা সােনা চান্দির আংটি পরতে পারবে কিনা?

উত্তর :  সােনার আংটি পুরুষদের জন্য শর্তহীনভাবে হারাম। রূপা বা চান্দির ক্ষেত্রে দুই বা ততােধিক আংটি- অথবা একটি আংটি যার উপরে কয়েকটি নমুনা থাকে, অথবা যার মধ্যে চার মাশা পরিমান রূপা থাকে- এমতাবস্থায় শুধু একটি আংটি ব্যবহার করা যাবে- যার উপর মাত্র একটি নমুনা থাকবে এবং চার মাশার কম ওজন হবে।

এমন আংটি সখ করে অথবা সীল হিসাবে পুরুষ লোকেরা ব্যবহার করতে পারবে।

_______________

ইরফানে শরিয়ত (প্রথম খণ্ড,পৃষ্ঠা - ১৭)

মূলঃ আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

অনুবাদ: অধ্যক্ষ হাফেজ মুহাম্মদ আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি।


সোমবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২১

আউলিয়ায়ে কিরামের চরিত্রকে নিজ জীবনে প্রতিফলনের চেষ্টায় ২৬ দিন অনাহারের ঘটনা

একদা আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আউলিয়ায়ে কিরামদের জীবনীর উপর লিখিত একটি কিতাব পড়লেন। যে কিতাবের মধ্যে আগের জামানার ইবাদতকারী ও কামেল অলিদের ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ ছিলাে। ঐ কিতাবের মধ্যে ঘটনার বিবরণ এ রকম ছিলাে যে, অমুক আবেদ এতদিন পর্যন্ত খাবার না খেয়ে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করেছেন। ব্যস এতটকু পড়েই আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ঐ সময় থেকে খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিলেন। তাঁর পরিবারের সদস্যগণ, আত্মীয়-স্বজন ও ভক্ত-অনুরক্তদের নিকট ঐ।খবর পৌঁছলে তারা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু খাবার গ্রহণ ছেড়ে দিলেন কেনাে? পরিবারের সবাই, বন্ধু-বান্ধব,। ভক্ত -অনুরক্ত, তাঁর খলিফা ও ছাত্ররাঅনেকবার তাঁর খেদমতে আরয করলেন, 'হুযুর খাবার গ্রহণ করুন।' কিন্তু আলা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উত্তরে বললেন, 'আপনারা খেয়ে নিন, ফকির রােযা রেখেছে।' সময় অতিবাহিত হচ্ছে, সকলের দুর্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কীভাবে আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে খাওয়ানাে যায় এই ব্যাপারে সকলে অস্থির। আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু যে ২৬ দিন না খেয়ে রইলেন ঐ ২৬ দিন তিনি রােযা রাখতেন। ইফতারের মধ্যে তিনি কয়েক চুমুক পানি পান করতেন আর কোনাে খাবার খেতেন না এবং সাহরিতেও কয়েক চুমুক পানি পান করে রােযা রাখতেন। কথিত আছে যে, আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু যে মাসে খাবার গ্রহণ ছেড়ে দিয়েছেন সেই মাসটি ছিলাে আরবি রযব মাস। শত চেষ্টা করেও কেউ আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র মুখে খাবার তুলে দিতে না পেরে পরিশেষে তাঁর কতিপয় ভক্ত অনুরক্তরা আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র পীর মুর্শিদের বাড়ি আস্তানায়ে আলিয়া মারেহারায়ে মুতাহারার সাজ্জাদানশীন, পীরে তরিকত হযরত সৈয়্যদ মেহেদি মিয়াকে আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র আহার ছেড়ে দেয়ার কথা বলার জন্য গেলেন। কিন্তু সে সময়ে সৈয়্যদ মেহেদি মিয়া সাহেব কেবলা তাঁর হুজরা শরিফে ছিলেন না। সংবাদবাহকরা তাঁকে না পেয়ে আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র খলিফা শেরে বিশিয়া-ই আহলে সুন্নাত মাওলানা হেদায়ত রাসূল সাহেবকে এ ব্যপারে জানাতে তাঁর দরবারে গেলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে তাঁকেও তার বাড়িতে না পেয়ে সংবাদদাতারা তাঁকে এই সংবাদ দেয়ার দায়িত্ব তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে দিয়ে বেরেলি শরিফে গমন করলেন। যখন হেদায়ত রাসূল ঘরে এসে এ সংবাদ পেলেন তখন আর দেরি না করে সাথে সাথে বেরেলি শরিফ যাওয়ার জন্য বের হলেন।মাগরিবের নামাজের পূর্বে তিনি বেরেলি শরিফে এসে পৌঁছলেন। হযরত মাওলানা হেদায়ত রাসূল বেরেলি শরিফে পৌঁছার পর তাঁকে জানিয়ে দেয়া হলাে যে, আজ ২৬ দিন হয়ে গেছে আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কোনো খাবার গ্রহণ করেন নি। কী কারণে আলা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু খাবার গ্রহণ করছেন না, তা কারাে বােধগম্য হচ্ছে না। 

এ ঘটনা বুঝাতে বুঝাতে মাগরিবের নামাজের সময় হয়ে গেলাে। আযান হচ্ছে,লােকেরা মসজিদের দিকে যাচ্ছে। আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহুও হুজরা থেকে বের হয়ে মসজিদে গেলেন এবং মাগরিবের নামাযের ইমামতি করলেন। নামায শেষে মাওলানা হেদায়ত রাসূল সাহেব কিছু দূরে দাঁড়িয়ে আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে সালাম দিলেন। আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সালামের উত্তর দিয়ে মাওলানা হেদায়ত রাসূল সাহেবকে সম্বােধন করে বললেন, 'মাওলানা সাহেব কী ব্যাপার? আজ দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কেনাে? আসুন করমর্দন করি।' এ বলে আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বসা থেকে দাঁড়িয়ে মাওলানা হেদায়েত রাসূলের দিকে এগিয়ে গেলেন। অন্যদিকে মাওলানা হেদায়ত রাসূল যে জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখান থেকে পিছনে সরে গেলেন।

আলা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে বললেন, 'কী ব্যাপার? আপনি পিছনে সরে যাচ্ছেন কেনাে? তখন মাওলানা হেদায়ত রাসূল আরয করলেন, 'হুযুর আমি তাে শুধু একটি কথা বলার জন্য এসেছি। আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, 'বলুন। তখন হেদায়ত রাসূল বললেন, 'হুযুর আহলে সুন্নাতের ইমামতির পােশাক পরিধান করা আপনার উচিত নয়। আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আশ্চর্য হয়ে বললেন, মাওলানা, 'এরূপ বলছেন কেনাে?' মাওলানা সাহেব আবেদন করে বললেন, 'আহলে সুন্নাতের ইমাম যদি খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয় তাহলে তাঁর পার্থিব জীবনের নির্ভরতা কীভাবে করা যাবে?' আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, 'একটি কিতাব পড়ার সময় আগের যুগের আবেদিনদের অবস্থা আমার দৃষ্টিগােচর হয়। তাঁরা খাওয়া-দাওয়া ছাড়া আল্লাহর ইবাদত করতেন। আর আমি তাে প্রিয়নবি ﷺ'র উম্মত। তাই আমিও খাওয়া- দাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। তবে প্রিয়নবি রদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র দরবার থেকে আমাকে আহার দেওয়া হচ্ছে। মাওলানা সাহেব আরয করলেন, আমার চোখে আপনি খাবার খাচ্ছেন না। আমি আপনার মেহমান। মেহমানের সাথে মেযবান খাওয়া তাে দরকার। আমার সিদ্ধান্ত হলাে যদি আপনি আজ থেকে খাবার না খান তাহলে আমিও আজ থেকে খাবার খাবাে না। আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মাওলানা হেদায়ত রাসূলকে খুব সম্মান করতেন এবং তাঁর কথাকে খুব গুরুত্ব দিতেন। তাই আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তার সাথে খাবার খেতে রাজি হয়ে গেলেন। এই সংবাদ ঘরে পৌঁছতেই তৎক্ষণাৎ মেহমানখানায় দস্তরখানা বিছানাে হলাে এবং দস্তরখানার উপর খাবার সাজানাে হলাে। মাওলানা হেদায়ত রাসূল সাহেব আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র হাত ধৌত করালেন। এভাবে দীর্ঘ ২৬ দিন পর আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মাওলানা হেদায়ত রাসূলের সাথে খাবার গ্রহণ করলেন। সুবহানাল্লাহ!

(আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা -  ২২২,২২৩,২২৪)।


বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২১

কোন প্রাণীর ছবি পকেটে রেখে নামায পড়লে নামায হবে কিনা?

প্রশ্ন :  কোন প্রাণীর ছবি পকেটে রেখে নামায পড়লে নামায হবে কিনা?

উত্তর : পকেটে ছবি রেখে নামায পড়া দুরস্ত হয়ে যাবে।তবে এরূপ করা মাকরূহ ও অপছন্দনীয়, যদি বিনা প্রয়ােজনে রাখে। আর যদি নৌট হয় - তাহলে মাকরূহ নয়। কেননা ইহা প্রয়ােজনীয় বস্তু।

_______________

ইরফানে শরিয়ত (প্রথম খণ্ড,পৃষ্ঠা - ১৯)

মূলঃ আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

অনুবাদ: অধ্যক্ষ হাফেজ মুহাম্মদ আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

বুধবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২১

আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র পীরের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

 আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি 'র পীর ও মাের্শেদ হযরত সৈয়্যদুনা খাজা সৈয়্যদ শাহ আলে রাসূল হােসাঈন কাদেরি বারকাতি মারেহেরাভি رضي الله عنه রজব মাসে ১২০৭ হিজরিতে ভারতের ইউপি'র অন্তর্গত আইটা জেলার মারেহেরা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ'র ৩৯তম বংশধর। তিনি হচ্ছেন হােসাঈনি সৈয়্যদ। তাঁর পূর্বপুরুষেরা বিলগিরাম থেকে কালপি হয়ে মারেহেরা শহরে বসতি স্থাপন করেন। 

হযরত শাহ বারাকাতুল্লাহ মারেহেরাভি رضي الله عنه থেকে শুরু করে তারা আওলাদগণ শরিয়ত-তরিকতের বিশাল খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন এবং দিয়ে আসছেন। হযরত শাহ আলে রাসূল মারেহেরাভি বারাকাতি رضي الله عنه সিহাহ-সিত্তার হাদিস সিরাজুল হিন্দ শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভি رضي الله عنه থেকে শিক্ষা লাভ করে সনদ অর্জন ও শাহ সাহেবের সিলসিলার খেলাফত অর্জন করেন।

শাহ আলে রাসূল رضي الله عنه'র কারামত ঃ- সৈয়্যদুনা খাজা সৈয়্যদ শাহ আলে রাসূল হােসাঈনি رضي الله عنه'র অনেক কারামত রয়েছে। যেগুলাে থেকে প্রতিয়মান হয় যে, তিনি উঁচুস্তরের অলিআল্লাহ ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কারামতসমূহের মধ্যে অন্যতম করামত হলাে- "বদায়ুন নিবাসী একজন বিশিষ্ট মুরিদ একদা ভাবতে লাগলেন যে, প্রিয় নবিজি ﷺ'র মেরাজ এত দ্রুত সময়ে কী করে সংঘঠিত।হলাে! হযরত শাহ আলে রাসূল رضي الله عنه সে সময়ে ওযু করছিলেন। তিনি আপন মুরিদের অন্তরের ভাবনা জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ তাকে ডেকে বললেন, ভেতরের ঘর থেকে গামছাটি আনেন তাে।' তিনি পীরের নির্দেশ পালনার্থে অন্দরমহলে ঢুকে দেখতে পান একটি জানালা। জানালার দিকে তাকাতেই দেখতে পান পুরোে এলাকায় বাগান আর বাগান। তিনি সেখানে পৌঁছলেই একটি বিশাল শহরে পৌঁছে গেলেন। তিনি সেখানে ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করে দিলেন। সেখানে বিয়ে করেছেন এবং সন্তানও হয়েছে। এভাবে ঐ মুরিদ দীর্ঘ বিশটি বছর অতিবাহিত করেছেন।

পরিশেষে হুযুর শাহ আলে রাসূল رضي الله عنه তাঁকে ডাক দিতে না দিতেই সে লােকটি কম্পনরত অবস্থায় ঐ জানালার কাছে আসলেন। পীরের গামছা নিয়ে দৌড়ে উপস্থিত হলে দেখতে পান যে, হুযুরের মুবারক চেহারায় এখনাে ওযুর পানি ঝরছে।

হাত মােবারকও জল সিক্তাবস্থায় রয়েছে। লােকটি অত্যধিক আশ্চার্যান্বিত হয়ে শাহ আলে রাসূল رضي الله عنه'র দিকে দেখে তাকালেন। হুযুর আলে রাসূল رضي الله عنه মৃদু হেসে বললেন, মিয়া! বিশ বছর কেটে গেলাে। বিবাহ শাদিও করেছেন। সন্তান-সন্ততিও হয়েছে। অথচ এদিকে ওযুর পানিও আমার শুকায়নি। এবার মে'রাজের বাস্তবতা বুঝলেন তাে?"

উক্ত কারামত থেকে প্রতিয়মান হয় যে, মুর্শিদে আ'লা হযরত সৈয়্যদুনা আলে রাসূল رضي الله عن'র বেলায়তের মকাম কতাে উর্ধ্বে। 

সৈয়্যদুনা খাজা সৈয়্যদ শাহ আলে রাসূল হােসাঈনি رضي الله عنه ১৮ যিলহজ্জ ১২৯৬ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। তিনি ইন্তেকালপূর্ব ওসিয়তনামায় শুধু কুরআনের একটি আয়াতের অংশ বিশেষ লেখে বলেন, এখানেই দুনিয়া আখেরাতের কামিয়াবি। আয়াতের অংশটি হলাে-

اطيعوا ا لله واطيعوا الرسول

(আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ১৫৩,

১৫৪)।


রবিবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২১


গান্ধী এবং তার শিষ্যরা চেয়েছিলাে মুসলমানদেরকে ব্যবহার করে ইংরেজ তাড়িয়ে দিয়ে রাজত্ব হিন্দুরাই করবে। যেহেতু তারা সংখ্যাগরিষ্ট। আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি গান্ধী এবং তার দোসরদের এই রাজনৈতিক চোরাবালির ফাঁদ থেকে রক্ষা করার জন্য মুসলমানদেরকে দিলেন দ্বি-জাতি তত্ত্ব (Two Nation theory) বা মুসলমানদের স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব। অবশ্য তিনি এ দ্বি-জাতি তত্ত্ব ১৮৯৭ ঈসায়ী পাটনা (Patna) সুন্নি কনফারেন্সের মাধ্যমে ঘােষণা করেছিলেন। তাইতাে তিনি
অসহযােগ আন্দোলনের নেতা মৌং মুহাম্মদ আলি জওহরকে বলেছিলেন, আপনার রাজনীতি আর আমার রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য আছে। আপনি হিন্দু মুসলিম ঐক্যের পক্ষে, আর আমি বিপক্ষে। আমার রাজনীতি হচ্ছে হিন্দুস্থানের সকল প্রকৃত মুসলমানদেরকে এক স্থানে একত্রিত করা। আপনিও যদি সকল মুসলমানদেরকে এক করতে চান, তাহলে অখণ্ড ভারত আন্দোলন ছাড়ুন। (মাওলানা সৈয়্যদ শাহ তুরাবুল হক কাদেরি রচিত "তাখলিকে পাকিস্তান মে ওলামায়ে আহলে সুন্নাত কা কিরদার,প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ৮)।
তিনি তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় দেখতে পেলেন যে, কংগ্রেসের নেতৃত্বে হিন্দুদের সাথে মিলিত হয়ে মুসলমানদের এ আন্দোলনের কোনো ভবিষ্যত নেই। তাতে অভাবনীয় সাফল্য রয়েছে হিন্দু ও কংগ্রেসের। এখন থেকে যদি অপরের ঘর বেঁধে নিজেরা তাতে আশ্রয় নেওয়ার স্বপ্ন না দেখে বরং নিজেরাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের ঘর তৈরি করে, তাতেই রয়েছে ভবিষ্যতের কামিয়াবি। তাই তিনি 'হিন্দু তথা যে কোনাে কাফির শক্তির সাথে মুসলামানদের ঐক্য হতে পারে না', 'অসহযােগ আন্দোলনে গান্ধীর কূটনীতিক চালের মুখােশ উম্মােচন' ও সে সময়ে 'বিভ্রান্ত মুসলিম রাজনীতিকদের হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের কুফল' তুলে ধরে ভীষণ অসুস্থতায় শয্যাশায়ী অবস্থায় "আল মুহাজ্জাতুল মু'তামিনাহ ফি আয়াতিল মুমতাহিনা" নামক কিতাব রচনা করেন। এই কিতাবটি মুসলমানদের স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল ও দ্বি-জাতি তত্ত্বের প্রথম লিখিত ও যৌক্তিক প্রস্তাব। তাঁর এ তত্ত্ব বারবার প্রচারের ফলে ড. ইকবাল ও মিঃ জিন্নাহ'র রাজনৈতিক ধারণায়ও পরিবর্তন আসে এবং তারা দ্বি-জাতি তত্ত্বে অনুপ্রাণিত হন। কারণ আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি যখন দ্বি-জাতি তত্ত্বের প্রস্তাব পেশ করেন, তখন ড.ইকবাল ও মিঃ জিন্নাহ উভয়েই ছিলেন খেলাফত আন্দোলনে সক্রিয়। ড. ইকবাল ১৯৩০ ঈসায়ী দ্বি-জাতি তত্ত্ব ও স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের প্রস্তাব করেন। আর তারই অনেক পূর্বে ১৯২০ ঈসায়ী "আল মুহুজ্জাতুল মুতামিনাহ ফি আয়াতিল মােমতাহিনাহ" লিখে ঐ ধারণার প্রকাশ ঘটান আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী        রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তবে তাঁর এ দ্বি-জাতি তত্ত্ব ছিলাে লিখিত। নতুবা তিনি প্রথম এ দ্বি-জাতি তত্ত্ব দেন ১৮৯৭ ঈসায়ীর পাটনার সুন্নি কনফারেন্সে। আল্লামা ইকবালের উপস্থাপিত দ্বি-জাতি তত্ত্বের প্রায় তেত্রিশ বছর পূর্বে।
বুঝা গেলাে, আল্লামা ইকবালের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র দূরদর্শিতার তেত্রিশ বছর পেছনে। আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র এ তত্ত্বের উপর আমল করে পরবর্তীতে মুসলিম নেতৃবৃন্দরা মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এগিয়ে আসেন। ফলে ১৯৪৭ ঈসায়ী পাকিস্তান সৃষ্টি হয়। যদি মুসলিম নেতারা আগে থেকে রাজনীতিতে হিন্দুদের সাথে না জড়িয়ে স্বতন্ত্রভাবে রাজনৈতিক নিজস্ব প্লাটফরম তৈরিতে এগিয়ে আসতেন, তবে পাকিস্তান অর্জন আরাে তরান্বিত হতাে।

এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের প্রখ্যাত গবেষক, বহু গ্রন্থ প্রণেতা প্রফেসর ড. মাসউদ আহমদ তাঁর The Negleeted Genious of the East গ্রন্থে লিখেন - He was ageist Hindu -
Muslim unity. This was the basic idea which can rightly be called the foundation of Pkistan.

অর্থাৎ, ইমাম আহমদ রেযা হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের বিরােধী ছিলেন এবং এটাই পাকিস্তানের গােড়াপত্তনের মূল ধারণা বলে বলা যায়। তিনি আরো বলেন - Ahmad Raza Khan had strong hold on Muslim masses and it was masses that the movement of Pakistan a success. The majority of the Muslim voters were under the influnce of him, his caliph's disciples and pupils. So the credit should go to him and followers. Historians of the world especially of Indo-Pak sub-continent should drow their attention to this most significant aspect of freedom movement.

অর্থাৎ, মুসলিম জাগরণের উপর আ'লা হযরতের যথেষ্ট প্রভাব ছিলাে এবং এটার পথ ধরে পাকিস্তান আন্দোলন সংগঠিত হয়। অধিকাংশ মুসলিম ভােটার তাঁর প্রভাবে প্রভাবিত ছিলাে এবং তাঁর খলিফা ও শিষ্য ছিলাে। সুতরাং এটা তাঁর এবং তাঁর অনুসারিদের কৃতিত্ব। পৃথিবীর ঐতিহাসিকগণ বিশেষতঃ ইন্দো-পাক উপমহাদেশের ঐতিহাসিকগণের মনােযােগ গুরুত্বপূর্ণ এই স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকেই দেওয়া সমীচিন। (Prof. D. Muhammed Masood Ahmed: Neglected Genious of the East. Page: 16-17,www.Alahazrat Network.org).

আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র দ্বি-জাতি তত্ত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে ড. ইকবাল ও জিন্নাহ'র রাজনৈতিক ধারণারও পরিবর্তন আসে। তাইতো মি. জিন্নাহকে লেখা ড. ইকবালের এক চিঠিতে দেখা যায়,।(উর্দুর অনুবাদ,কিতাবে উর্দু উল্লেখ আছে) "যদি হিন্দুস্তানের মুসলমানদের রাজনৈতিক জিহাদের উদ্দেশ্য ইসলাম সংরক্ষণ ভিন্ন শুধু (ইংরেজদের থেকে) আযাদি ও অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনই হয়, (যা আজকাল
পরিলক্ষিত হচ্ছে) তবে মুসলমানগণ এ আন্দোলনেও কখনাে কামিয়াব হবেনা। (ড. তাহেরুল কাদেরি রচিত "ইকবাল কা খা'ব আওর আজকা পাকিস্তান", স্টোডেন্ট পাবলিকেশন, পৃষ্ঠা ০৭)।

আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র দ্বি-জাতি তত্ত্বের ফলে আজকের স্বতন্ত্র পাকিস্তান সৃষ্টি হয়। তাইতাে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ, জাস্টিস ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. সৈয়্যদ গাউছ আলি শাহ বলেন- (উর্দুর অনুবাদ,কিতাবে উর্দু উল্লেখ আছে)
"আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান হানাফি বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র ব্যক্তিত্ব এমন আলাের মিনার যে, যিনি ঘাের অন্ধকার ও হতাশার যুগে হিন্দুস্থানের মুসলমানদেরকে নিজের ইলম ও আমল দ্বারা পথ দেখিয়েছেন। এমনকি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাও আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান হানাফি বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র ব্যক্তিত্বের মতাে মহামনীষীদের নসিহতসমূহেরই ফলাফল।"
(মুয়াম্মারে পাকিস্তান, পৃষ্ঠা - ২৮)। **Articels by Phir Muhammad Tabasum Bashir owaisi, Norwal.
Hamari Web.com).

পাকিস্তানের সিনেট চেয়ারম্যান জনাব ওয়াসিম সাজ্জাদ বলেন, "ইমাম আহমদ রেযা ঐ সমস্ত ইংরেজপুষ্ট ওলামাদের বিরুদ্ধে সত্যের ঝাণ্ডা উড্ডীন করেন, যাদের দেশদ্রোহিতা উপমহাদেশে আযাদি আন্দোলন ভেস্তে যাওয়ার কারণ ছিলাে। সঠিক গবেষণায় তাঁকে (ইমাম আহমদ রেযা) পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রথমসারির রূপকার বলা যায়। (আহমদ রেযা বেরেলভি আওর হুকুমতে পাকিস্তান, পৃষ্ঠা: ১৩)।

ড. ইকবাল আহমদ আখতার কাদেরি বলেন- "আজকের এই সুন্দর পাকিস্তান হযরত আহমদ রেযার দ্বি-জাতি তত্ত্বের ফসল"। (ড. ইকবাল আহমদ আখতার ক্বাদেরি (পাকিস্তান) রচিত "হযরত আহমদ রেযা আওর উনকি খেদমত"। স্মরণিকা আ'লা হযরত কনফারেন্স ২০০০ ইংরেজি, আ'লা হযরত ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম, পৃষ্ঠা: ৮৯)।
(আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ১৩৪,
১৩৫,১৩৬,১৩৭)।


শনিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২১

 


ব্রিটিশ বিরােধীদের প্রতি আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র শ্রদ্ধা

প্রখ্যাত কবি ও ব্রিটিশবিরােধী স্বাধীনতা যুদ্ধের বীরসৈনিক মাওলানা কেফায়ত আলি কাফি রহমাতুল্লাহি আলাইহি যিনি মােরাদাবাদ অঞ্চলের "সাদরুশ শরিয়া" বা শরয়ী প্রধান ছিলেন। তিনি ১৮৫৭ ঈসায়ীতে ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলনে ঝাঁপিড়ে পড়েছিলেন। তখন মুরাদাবাদ ইংরেজদের দখলে চলে যায়, ১৮৫৮ ঈসায়ী তাঁকে ব্রিটিশ সরকার ফাঁসি দেয়।তিনি শাহাদাত বরণ করেন।

হযরত মাওলানা শহিদ কাফির সাথে আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র রূহানি সম্পর্ক ছিলাে। তাঁর আট বছর বয়সে তিনি একরাত্রে স্বপ্নে দেখলেন, এক বিশাল শানদার দালান।যার রক্ষকের দায়িত্বে আছেন মাওলানা শহিদ কাফি। তিনি আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে সম্বাধন করে বললেন- "হে আহমদ রেযা! নিশ্চয় এ ঘরে রাসূলুল্লাহ ﷺ আছেন। তুমি এখানে প্রবেশ করাে এবং হুজুর ﷺ'র সাক্ষাত লাভে ধন্য হও। আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি ঐ ঘরে প্রবেশ করে দেখলাম হুজুর আকদ্বাস মাহবুবে খােদা ﷺ আপন মা।সৈয়্যদা আমেনা খাতুন রদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র ক্রোড়ে শিশুর মতাে হয়ে তাশরিফ রেখেছেন"।

এই গােলামকে খুবই কাছে নিয়ে মা আমেনা খাতুন রদ্বিয়াল্লাহু আনহা কে সম্বাধন করে ইরশাদ করেন- 'মা আমার আহমদ রেযা এসেছে। (মাওলানা আমানত রাসূল কাদেরি রেজভি মুস্তফভি রচিত "তাজাল্লিয়াতে ইমাম আহমদ রেযা", প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠাঃ ২৫)।

এই ব্রিটিশবিরােধী শহিদকে আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি অত্যধিক ভালবাসতেন। যা তাঁর লিখিত দু'টি পঙক্তিতে প্রতিভাত হয়। তিনি মাওলানা কাফি রচিত কব্যের প্রতি এতই আকৃষ্ট ছিলেন যে, একটি জায়গায় তিনি কাফিকে না'তের সুলতান বা বাদশা স্বীকার করে নিজেকে তাঁর উজির ঘােষণা করেছিলেন। আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন ।

"আমার মুখের সৌরভে সুগন্ধময় বিশ্ব ভূবন,

এ মিষ্টি সূরে তিক্ততার পরশ অস্বাধীন।

হে রেযা! প্রিয় নবি বন্দনায় সম্রাট হলো কাফি,

ইনশাল্লাহ, আমি হবাে তাঁরই প্রধানমন্ত্রী।"১৭

(আ'লা হযরত রচিত হাদায়েক্ব বখশিশ", খণ্ডঃ ০৩, পৃষ্ঠাঃ ৯৩-৯৪, বদায়ুন প্রকাশনী)।

ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশদ্রোহীদের সাথে সম্পর্ক প্রকাশ করা যখন বড়ই ভয়ের ব্যাপার ছিলাে তখনই ইংরেজদের দুশমন এই মহান শহিদের প্রতি এতাে গভীর শ্রদ্ধা এবং বিশেষ উপাধী প্রয়ােগ নিশ্চয় একজন ইংরেজ এজেন্টের কাজ হতে পারে না।

এটাতাে ব্রিটিশদের প্রতি কলমি জিহাদ ও অভূতপূর্ব তিরস্কার। সুচিন্তিত রায় প্রদানে ক্ষমতাবান প্রত্যেক পণ্ডিত একথা অকপটেই স্বীকার করবেন।

(আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা- ৯১-৯২)।


 

শনিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২১



আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি একদা ভারতের উত্তর প্রদেশের পিলিভিতে সফরকালে সে সময়ের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস তাঁর বন্ধু মুহাদ্দিস ওয়াসি আহমদ সুরতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র বাড়িতে অবস্থান করলেন। আলাপচারিতায় উকুদুদ দুররিয়্যাহ নামক কিতাবের কথা এসে গেলে মুহাদ্দিস সুরতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন, জী! এটাতাে আমার লাইব্রেরিতে আছে। আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন, "যাওয়ার সময় কিতাবটি আমাকে

দেবেন। মুহাদ্দিস সুরতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি কিতাবটি দিয়ে বললেন, ঠিক আছে আপনি পড়া শেষ করে কোনাে এক সময়ে পাঠিয়ে দিলে হবে। পরদিন তিনি পিলিভিতে ফেরার

কথা থাকলেও কতিপয় মুরিদের বিশেষ অনুরােধে আরাে একদিন থাকতে হলাে। এ

সুবাদে দু'খণ্ড বিশিষ্ট বিশাল গ্রন্থটি সেখানে অবস্থানরত অবস্থায় পাঠ শেষ করে মুহাদ্দিস সাহেবের নিকট ফেরত পাঠালেন। এত অল্প সময়ে কিতাব ফেরত দেওয়াতে মুহাদ্দিস সাহেব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। না জানি রাগ করে ফেরত দিলেন কি না! এ কথা ভেবে তড়িৎ মুহাদ্দিস সাহেব কিতাবখানা নিয়ে ট্রেন স্টেশনে গিয়ে আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র খেদমতে উপস্থিত হয়ে কিতাব ফেরত দেওয়ার কারণ।জানতে চাইলে তিনি বললেন- যদি গতকাল চলে যেতাম তাহলে কিতাবটি সাথে নিয়ে যেতাম। একদিন বাড়তি সময় পেয়ে গত রাত্রে কিতাবের আদ্যোপান্ত দেখে।নিয়েছি। তাই ফেরত পাঠালাম। সাথে নিয়ে যাওয়ার তাে আর দরকার নেই।


মুহাদ্দিস সাহেব আশ্চার্যান্বিত হয়ে আরয করলেন, একবার দেখায় কি যথেষ্ট?

আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন, 'আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহর দয়া ও মেহেরবাণীতে আগামী দুই-তিন মাস পর্যন্ত তাে ফাতওয়া প্রণয়নের ক্ষেত্রে যেখানে যেখানে এই কিতাবের উদ্ধৃতির প্রয়ােজন হবে ইনশাআল্লাহ, তা মুখস্থ লিখে দিতে পারবাে।

গােটা কিতাবের বিষয়বস্তু ও কথাগুলাে তাে সারা জীবনই মুখস্থ থাকবে।' তারপর বললেন, মুহাদ্দিস সাহেব আপনি তাে কিতাবটি দিয়ে আমার অনেক উপকার করেছেন। আমিও আপনার একটি উপকার করে দিয়েছি। আগে পরে এ কিতাবটির সূচি ছিলাে না। আমি তা লিপিবদ্ধ করে দিয়েছি। দেখুন তাে একটু কেমন হয়েছে"।১


এভাবে ইমামে আহলে সুন্নাত আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি 'র বিস্ময়কর ও কিংবদন্তিতুল্য স্মৃতিশক্তি নিয়ে আলােচনা করলে একটি বিশাল আকারের বই হয়ে যাবে। দীর্ঘ আলােচনা পরিহারে এতটুকুই যথেষ্ট মনে করি।

তাঁর এ বিরল আশ্চর্য্যজনক স্মৃতিশক্তি নিশ্চয় মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিশেষ অনুগ্রহ। তাইতাে তাঁরই শাহযাদা হুযুর মুফতি-ই আযম মাওলানা মুস্তফা রেযা খান কাদেরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- "স্মরণশক্তি খাদ্য নয়, দানের সাথে সম্পর্কযুক্ত। স্মরণশক্তি যদি খাদ্যের দ্বারা বৃদ্ধি পেতাে, তা হলে কোনো ধনাঢ্য ব্যক্তি মেধাহীন হতাে না।

মহাজ্ঞনী আল্লাহর দরবারের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করাে। সেখান থেকেই সবকিছু পাওয়া যায়"।২


(১. মাওলানা আমানত রাসূল কাদেরি রেজভি মুস্তফভি রচিত "তাজাল্লিয়াতে ইমাম আহমদ রেযা"প্রাগুক্ত,পৃ: ৬৩।

২. ওরছে আ'লা হযরত,স্মারক ২০০৩ চট্টগ্রাম,আ'লা হযরত ফাউন্ডেশন,পৃ: ২৬।

(আ'লা হযরত আমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃ:- ৫৮-৫৯)।