রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র তাকওয়া ও খােদাভীতি


ইমামে আহলে সুন্নাত আ'লা হযরত শাহ আহমদ রেযা খান বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র পুরা জীবনটাই শরিয়তে মুস্তফা ও সুন্নাতে রাসূল ﷺ'র স্বাশ্বত অনুসরণে সজ্জ্বিত। তাঁর তাকওয়ার শান তাে অনেক উপরে। তিনি তাে খােদা তায়ালার বাণী -"মুত্তাকি ব্যতীত কোনাে অলিই নেই" মােতাবেক বড় মাপের অলিয়ে কামেল ছিলেন। এ বিষয়ে তাঁর জীবনে অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়। নিম্নে দুটি বর্ণনা পেশ করলাম মাত্র।

এক: বয়স তখন মাত্র সাড়ে তিন। পবিত্র রমযান মাসে রােযা রেখে ফেলেছেন ছােট্ট আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। প্রচণ্ড গরমের কারণে বেলাবাড়ার সাথে সাথে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছেন তিনি। দুপুরে তাঁর সম্মানিত পিতা একটি পাত্রে কিছু ফিরনী নিয়ে তাঁকে নিয়ে একটি কামরায় ঢুকলেন। দরজা জানালা সব বন্ধ করে দিয়ে বললেন, বাবা! খাও। তিনি বললেন, আমি তাে রােযা রেখেছি। পিতা বললেন, বাচ্চাদের রােযা এতটুকুনই। খেয়ে নাও, আমি দরজা জানালা বন্ধ করেছি। কেউ দেখছে না, কেউ জানতে পারবে না। শিশু আলা হযরত প্রত্যুত্তরে সম্মানিত পিতাকে বললেন, 'বাবা যার নির্দেশে রােযা রাখছি তিনি তাে দেখছেন। (মাওলানা নাসিম বসতবি রচিত "মুজ্জাদেদে ইসলাম", প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ৪৩)।

সুবহানাল্লাহ! যার শিশু বয়সে খােদাভীতির এমন অবস্থা, খােদা জানে প্রাপ্ত বয়সে কোন পর্যায়ে পৌঁছেছেন। যে বান্দার কলবে এ নিয়ামতটি জায়গা করে নিয়েছে যে, 'আল্লাহ আমাকে দেখছেন সে বান্দা সকল গুনাহ, অপরাধ, জুলুম, নির্যাতন ও সকল প্রকার খােদাবিরােধী কর্মকাণ্ড থেকে নিরাপদে থাকবে। যেটাকে হাদিস শরিফের ভাষায় এহসান বলা হয়েছে। "তুমি এমনভাবে ইবাদত কর যেমনটি তুমি তাঁকে দেখছ, যদিও তুমি তাঁকে দেখছ না; কিন্তু সে তোমাকে দেখছে এ কথাটি হলাে এহসানের ব্যাখ্যা, যা বুখারির হাদিস মর্মে বিবৃত। এ ইহসানের অপর নাম তাসাউফ।

দুই: আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র জীবন সায়াহ্নের ঘটনা। তখন ১৩৩৯ হিজরির রমজান মাস। সেসময় একদিকে বেরেলি শহরে প্রচণ্ড গরম, অপরদিকে তাঁর বয়স একেবারে শেষপ্রান্তে, যার কারণে তিনি দুর্বল ও সীমাহীন রােগাক্রান্ত। এ সময়ে শরিয়তের পক্ষ থেকে এ ছাড় দেয়া আছে যে, কোনাে ব্যক্তি শেখে ফানী অধিক বার্ধক্য হলে প্রতিটি রােযার ফিদইয়া দেবে, আর রােগাক্রান্ত হলে পরে তা ক্বাযা আদায় করবে। কিন্তু আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র ফাতওয়াটি নিজের জন্য ছিলো অন্যরকম। যা ফাত্ওয়া নয় বরং তাকওয়াই। তিনি বলেন "বেরেলিতে প্রখর গরমের কারণে আমার পক্ষে রােযা রাখা সম্ভব নয়; কিন্তু পাহাড়ে তাে ঠাণ্ডা বাতাস পাওয়া যাবে। এখান থেকে নিনিতাল কাছে আছে। সেখানে ভােয়ালি পাহাড়ের চূড়ায় রােযা রাখা সম্ভব হবে। আর আমি সেখানে কারাে সাহায্যে উঠে যেতে পারবাে। সুতরাং সেখানে গিয়ে আমার উপর রােযা রাখা ফরয। (মাওলানা নাসিম বসতবি রচিত "মুজ্জাদেদে ইসলাম", প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ৫৬)।

সুতরাং আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি পুরাে একটি মাস পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে রােযা পালন করেছিলেন, সুবহানাল্লাহ। (আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ২০৬,২০৭ ও ২০৭৮)। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন