রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

 


শরীয়তের বিধি-বিধান নবীর হাতে, হাদিস শরীফ হতে


সহীহ মুসলিম শরীফে এইমতে বর্ণিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরজ করেন,


اللهم انى قد حر متُ مابين لابتيها كما حر مت على لسان ابراهيم الحرم- هو واحمد والرُّو نى عن ابى قتادة رضى الله تعالى عنه


হে আল্লাহ! নিঃসন্দেহে আমি গােটা মদীনাকে হারাম ঘােষণা করে দিলাম। যেমনিভাবে আপনি ইবরাহীম (আঃ) - এর মুখের (ঘোষণার) উপর পবিত্র হেরেমকে হারাম বানিয়েছেন । 


এ হাদিস ইমাম মুসলিম ও ইমাম আহমদ হযরত আবু কাতাদা (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণনা করেন।


▪ সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ্জ, বাবু ফলিল মদীনা, কাদিমী কিতাব খানা, করাচী - ৪৪৩-৪৪০/ ১।

▪ মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, হযরত আবু কাতাদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন, আল মাকতাবুল ইসলামী, বৈরুত ৩০৯/৫।



হাদিস ১২ :


হাদীস : সহীহ মুসলিম শরীফে এইরূপে বর্ণিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,


 إِنَّ إِبْرَاهِيمَ حَرَّمَ  بيت الله وَاَمَّنه وَإِنِّي حَرَّمْتُ الْمَدِينَةَ مَا بَيْنَ لَابَتَيْهَا، لَا يُقْطَعُ عِضَاهُهَا، وَلَا يُصَادُ صَيْدُهَا- هو والطحاوى عن جابر بن عبد الله رضي الله تعالى عنهما -


নিঃসন্দেহে ইবরাহীম (আঃ) বায়তুল্লাহকে হারাম বানিয়ে দিয়েছেন, এবং নিরাপত্তা দানকারী বানিয়েছেন। আর আমি মদীনায়ে তাইয়েবাকে হারাম করলাম। এখানকার না ঘাস কাটা যাবে, আর না তার কোন শিকার ধরা যাবে।


এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম ও ইমাম তাহাবী হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন।

▪ শারহু মাআনিল আসার, কিতাবুস সায়ীদ, বাবু সায়ীদিল মদীনা, এইচ, এম, সাঈদ কোমপানী, করাচী - ৩৫২/২।

▪ কানযুল উম্মাল, ইমাম মুলিমের বরাতে, হাদীস : ৩৪৮১০, মুআসসাসাতু আর রিসালাহ, বৈরুত - ২৫৩২/১২।



হাদিস ১৩ :


সহীহাইনের মাঝে রয়েছে যে, হযরত আবু হুরায়রা। রাদ্বিয়ালরাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন,


حرم رسول الله صلى الله تعا لى عليه وسلم ما بين لا بتى المد ينة وجعل اثنا عشر ميلاً حول المد ينة حِمى - هما واحمد وعبد الرزاق فى مصنفه _


সমস্ত মদীনায়ে তাইয়েবাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হারাম করে দিয়েছেন। আর তিনি পবিত্র মদীনার চারপাশের বারাে মাইল পর্যন্ত সবুজ ঘাসের চারণভূমিকে লােকদের হস্তক্ষেপ থেকে নিজের সংরক্ষণে নিয়ে নিলেন। 


▪ সহীহ বুখারী, ফয়িলুল মদীনা, বাবু হারামুল মদীনা, কদীমী কিতাব খানা, করাচী -২৫১/১।

▪ সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ্জ, বাবু ফলিল মদীনা, কদীমী কিতাব খানা, করাচী - ৪৪২/১।

▪ মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহ তাআলা আনহু হতে বর্ণিত, আন মাকতাবুল। ইসলামী, বৈরুত - ৪৮৭/২।

▪ আল - মুসান্নাফ লিআবদির রাযযাক কিতাবু হুরমাতুল মদীনা, হাদীস : ১৭১৪৫, আল - মাজলিসুল আলামী, বৈরুত - ২৬১৪ - ২৬০৯।



হাদিস ১৪ :


এ হাদীস বুখারী ও মুসলিম এবং হযরত আবদুর রাযযাক স্বীয় মুসান্নকে উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম ইবনে জারীর (رحمة الله) এর বর্ণনা এই যে,


حرّم رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم شجر ها ان يعضد او يخبط - رواه عن خبيب ن الهذ لى رضي الله تعالى عنه _


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পবিত্র মদীনার গাছপালা কর্তন করা, তার পাতা ছিড়া হারাম ঘােষণা করেছেন। 


এ হাদীস শরীফ ইমাম ইবনে জারীর (رحمة الله) হযরত হাবীব হুজালী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন।


.ইমাম ইবনে জারীর, হযরত হাবীব হুজালী সূত্রে বর্ণিত। 



হাদিস ১৫ :


সহীস মুসলিম শরীফে রয়েছে যে, হযরত রাফি ইবনে খাদীজ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন,


انّ رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم حرَّم ما بين لا بتي المد ينة _ هو والطحا وى فى معا نى الا ثار _


নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনায়ে তাইয়েবার সমগ্র স্থানকে হারাম বানিয়েছেন। 


এ হাদিস ইমাম মুসলিম ও তাহবী শারহু মা’আনিল আসারে বর্ণনা করেছেন।

▪ সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ্জ, বাবু ফলিল মদীনা, কদীমী কিতাব খানা, করাচী - ৪৪০/১।

▪ শারহু মা'আনিল আসার, কিতাবুল সায়ীদ, বাবু সায়ীদিল মদীনা, এইচ, এম. সাঈদ কোমপানী, করাচী - ৩৪২/২।



হাদিস ১৬ :


হাদীস সহীহ মুসলিম ও শারহু মা’আনিল আসারে এইমতে হযরত আসিম আল আহওয়াল (ﷺ) হতে বর্ণিত যে,


قلت لِاَ نس بن مَلك احرّم رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم المدينة قال نعم الحديث - زاد ابو جعفر فى رواية لايعضد شجر هاولمسلم ض  اخرى ذلك فعليه لعنة والملئكة والنا س اجمعين _  


অর্থাৎ আমি (হযরত আসিম আল আহওয়াল (রাঃ) হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه)কে জিজ্ঞেস করলাম যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ কি মদীনাকে হারাম ঘােষণা করেছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ। 


তা হারাম, অতএব এখানকার উদ্ভিদ কাটা যাবে না, ঘাস উপড়ানাে যাবে না। 


যে ব্যক্তি এরূপ করবে তার উপর আল্লাহ ও তাঁর ফিরিস্তাদের এবং সমগ্র মানব জাতির লা'নত তথা অভিশম্পাত। 

. সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ্জ, বাবু ফলিল মদীনা, কদীমী কিতাব খানা, করাচী - ৪৪১/১।

. শারহু মা, আনিল আসার , কিতাবুস সায়ীদ বাবু সায়ীদিল মদীনা, এইচ, এম. সাঈদ। কোমপানী, করাচী - ৩৪২/২।

. সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ্জ, বাবু ফলিল মদীনা, কাদিমী কিতাব খানা, করাচী - ৪৪১/১।



হাদিস ১৭ :


সুনানে আবু দাউদে রয়েছে যে, হযরত সা'দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন -


انّ رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم حرَّم هذا الحر ام _


নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ মহা সম্মানিত হারামকে হেরেম বানিয়ে দিয়েছেন। 

. সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুল মানাসিক, বাবু কি তাহারিমুল মদীনা, আফতাবে আলম প্রেস, লাহাের - ২৭৮/১।



হাদিস ১৮ :


হযরত শারজীল (রাঃ) বলেন, আমি পবিত্র মদীনায় শিকার ধরার জন্য জাল টানাচ্ছিলাম, এমতাবস্থায় হযরত যায়দ ইবনে সাবিত আনসরী (رضي الله عنه) আমাদের নিকট আগমন করলেন। অতঃপর তিনি জাল ধরে ছুড়ে ফেলে দিলেন, আর ইরশাদ করলেন,


تعلموا انَّ رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم حرَّم صيد ها - الا مام ابو جعفر فى فى شرح الطحا وى _


তােমরা কি জান না যে, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পবিত্র মদীনায়ে তাইয়েবার শিকার ধরা হারাম করেছেন। 


এ হাদিস ইমাম আবু জাফর শারাহু তাহাবীর মধ্যে বর্ণনা করেছেন।

.শারহু মাআনিল আসার, কিতাবুস সায়ীদ বাবু, সায়ীদিল মদীনা, এইচ, এম, সাঈদ কোমপানী, কারাচী - ৩৪২/২।



হাদিস ১৯ :


আবু বকর ইবনে আবূ শায়বাহ হযরত যায়দ (رضي الله عنه) হতে এরূপ বর্ণনা করেছেন যে,


انَّ النبى صلى الله تعالى عليه وسلم حرم ما بين لَاَبْتَيها


নিঃসন্দেহে নবী (ﷺ) মদীনার দু'টি কৃষ্ণ প্রস্তরময় ভূমির মধ্যবর্তী স্থানকে হারাম ঘােষণা করেছেন। 

. মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বা, কিতাবুস সিয়ার ১৮২/৬



হাদিস ২০ :


হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন -


اِنَّ رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم حرَّم ما بين لابتى المدينة ان يعضد شجرها او يخبط _


নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সমগ্র মদীনাকে হারাম বানিয়ে দিয়েছেন, করা নিষিদ্ধ এবং এখানকার পাতা ছিড়াও নিষিদ্ধ। 

. শারহু মাআনিল আসার, কিতাবুস সায়ীদ, বাবু সায়ীদিল মদীনা, এইচ, এম, সাঈদ কোমপানী, করাচী - ৩৪২/২।

____________________


কিতাবঃ শরীয়তের বিধি-বিধান নবীর হাতে

মূলঃ আ'লা হযরত মুজাদ্দিদ ইমাম আহমদ রেযা (রহঃ)

অনুবাদঃ মুহাম্মদ হােসাইন রেযা কাদেরী।



বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

 


প্রসঙ্গ : হিন্দুস্থান কি 'দারুল ইসলাম', না 'দারুল হারব'? 

আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযার যুগান্তকারী ফাতওয়া।


মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান

______________

"দারুল ইসলাম ও দারুল হারব' উভয়টি আরবী শব্দ।

পরবর্তীতে উর্দু এবং ফার্সী ভাষায়ও শব্দ দু'টি ব্যবহৃত হতে থাকে। এ দু'টি শব্দের যে কোন একটি, রাজনৈতিকভাবে যেমন কোন রাষ্ট্রের বিশেষণ, তেমনি ইসলামের বহু অনুশাসন ও বিধি-বিধান এ দু'টি বিশেষণ অনুসারে কার্যকর হয়। তাই এ দু'টি বিশেষণের কোনটি, কোন রাষ্ট্রের জন্য প্রযােজ্য, তা নির্ণয়ের জন্য এ দু'টির সংজ্ঞা সম্পর্কে পরিচিত হওয়া আবশ্যক বৈ-কি।


এ দু'টি বিশেষণ সম্পর্কে পরবর্তীতে যথাস্থানে বিস্তারিত

আলােচনা হবে। প্রথমে সংক্ষেপে বলা যায়- ১, দারুল

ইসলাম হচ্ছে ওই রাষ্ট্র, যাতে ইসলামী সালতানাৎ' বলবৎ থাকে।( সূত্র, কী-কযুল লুগাত)। আর 'দারুল হারব' হচ্ছে ওই রাষ্ট্র, যেখানে অমুসলিমদের শাসন প্রতিষ্ঠিত এবং মুসলমানদের ধর্মীয় ফরয ইত্যাদি কর্মকাণ্ড পালনে বাধা দেওয়া হয়, বা নিষিদ্ধ।।(সূত্র প্রাগক্ত)।


একথা সর্বজনবিদিত যে, বাংলা-পাক-ভারত উপমহাদেশে।দীর্ঘকাল যাবৎ মুসলমানদের শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিলাে। তারপর দীর্ঘদিন যাবৎ ইংরেজদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এ উপমহাদেশে। তারপর (১৯৪৭ইং) হিন্দুস্থান (ভারত) ও পাকিস্তান দু'টি রাষ্ট্র স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর (১৯৭১ইং) পাকিস্তান বিভক্ত হয়ে 'বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।


উল্লেখ্য, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ দু'টি মুসলিম রাষ্ট্র (দারুল ইসলাম) তাতে কারাে দ্বিমত নেই; কিন্তু যেহেতু ভারতে তার স্বাধীনতা লাভের পূর্বে দু'শতাব্দিকাল ইংরেজদের শাসন এবং স্বাধীনতা লাভের পরে হিন্দুদের শাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, সেহেতু 'হিন্দুস্থানকে কি 'দারুল ইসলাম' বলা যাবে, না 'দারুল হারব' বলতে হবে? এটা নিয় মতবিরােধ দেখা দেয়। 

এ প্রসঙ্গে, দেখা যায়, এক শ্রেণীর আলিম ও রাজনৈতিক নেতা তাদের সুবিধা কিংবা দৃষ্টিকোণ থেকে এটাকে কখনাে 'দারল হারব আবার কখনাে দারল ইসলাম সাব্যস্ত করেছেন; কিন্তু যেহেতু আমাদের ইসলামী ফিক্বহ-শাস্ত্রে এ প্রসঙ্গে সুস্পষ্ট সংজ্ঞা ও বিধান লিপিবদ্ধ আছে, সেহেতু আমাদের বিজ্ঞ ও নিষ্ঠাবান ওলামা-ই কেরাম এ বিষয়ে শরীয়তের আলােকে অকাট্যভাবে যুগান্তকারী মীমাংসা (ফাতওয়া) দিয়েছেন- যথাসময়ে। এ শেষােক্ত বিজ্ঞ ওলামা-ই কেরামের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ও আদর্শ ইমামের ভূমিকা পালন করেছেন আমাদের ইমাম-ই আহলে সুন্নাত আ'লা হযরত শাহ আহমদ রেযা বেরলভী রাদ্বিয়াল্লাহ তা'আলা আনহু। তিনি ভারতকে দারুল ইসলাম হিসেবে সাব্যস্ত করে ফাতওয়া প্রণয়ন করে তা প্রকাশ করলেন। তখন তা নিয়ে বিরুদ্ধবাদীরা হৈ-চৈ করলেও এ প্রসঙ্গে আ'লা হযরতের ফাত্ওয়া বিশুদ্ধই প্রমাণিত হয়েছে ।


উল্লেখ্য, পাকিস্তান ও ভারতের স্বাধীনতা লাভের দীর্ঘ

আন্দোলনের পরম্পরায় খেলাফত আন্দোলন ও অসহযােগ আন্দোলন (যথাক্রমে তাহরীক-ই খিলাফত' ও তাহরীক-ই তরকে মু'আমালাত) (১৯১৯-১৯২০) অতি উল্লেখ্যযােগ্য। এ দু' আন্দোলনের সময়ে আ'লা হযরতের সুচিন্তিত, বাস্তবধর্মী ও দুরদর্শিতালদ্ধ অবস্থান ও নির্ভুল মতামত বা ফাতওয়াকে কেন্দ্র করে বিরুদ্ধবাদীরা তাঁর বিরুদ্ধে বিরােধিতার ঝড় তুলেছিলাে। বস্তুত এটা রাজনৈতিক আবেগ প্রবণতার যুগ ছিলাে। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে আলা হযরতের খলীফাগণ, সদরুল আফাযিল সৈয়্যদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী ও তাজুল ওলামা মাওলানা মুফতী ওমর নঈমী আলায়হিমুর রহমাহ প্রমুখ তাঁদের রাজনৈতিক মেধা, উন্নত চিন্তা ও বােধশক্তি এবং দুরদর্শিতার প্রমাণ রেখে গিয়েছিলেন। তখন তাঁদের ওই ভূমিকাকে যতটুকু মূল্যায়ন করা হয়েছিলাে, তার চেয়ে বেশী মূল্যায়ন করতে বাধ্য হয়েছেন পরবর্তী তথা বর্তমানকার ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ।তাঁরা নির্দ্বিধায় ঔসব ওলামা-ই দ্বীনের দুরদর্শিতা ও পরিণাম দর্শিতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।


একই পরম্পরায় ওই যুগে আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরলভী আলায়হির রাহমার একটি ফাতওয়া "ই'লামুল আ'লাম বিআন্না হিন্দুস্থান দারুল ইসলাম (বিজ্ঞজনদের জ্ঞাতার্থে নিঃসন্দেহে হিন্দুস্থান 'দারুল ইসলাম) নামে (১৩০৬হি./১৮৮৮ইং, মুদ্রণে 'হাসানী প্রেস, রেবিলী) প্রকাশিত হয়; যখন হিন্দুস্থানের একশ্রেণীর আলিম হিন্দুস্তানকে 'দারুল হারব' সাব্যস্ত করে সুদকে জায়েয (বৈধ) বলে সাব্যস্ত করেছিলেন।


তাদের খণ্ডনে তিনি তাঁর উক্ত ফাতওয়ায় লিখেছিলেন-

(উর্দুর অনুবাদ,লেখকের প্রবন্ধে উর্দু উল্লেখ আছে) (অর্থাৎ ওইসব লােক সম্পর্কে চিন্তা করতেও আশ্চর্যবােধ হয়, যার সুদকে বৈধ করার জন্য, যা কোরআনের অকাট্য আয়াতসমূহ (প্রমাণাদি) দ্বারা হারাম বলে সাব্যস্ত এবং এর বিরুদ্ধে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তির হুমকি এসেছে, এ দেশকে 'দারুল হারব সাব্যস্ত করেছেন, আর শক্তি ও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও (এদেশ) থেকে হিজরত করার খেয়ালটুকু পর্যন্ত অন্তরে আনেননি! এ দেশ যেন ওই দিনের জন্য 'দারল হারব' হয়েছিলাে যে, তাতে সুদের মজা লুফে নেবেন এবং পূর্ণ আরামে প্রিয় মাতৃভূমিতে পরিতুষ্ট হয়ে ঘুরে বেড়াবেন!


আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ ফরমাচ্ছেন, "তােমরা কি "কিতাব (কোরআন মজীদ)-এর একাংশের উপর ঈমান রাখছাে,।আরেকাংশের সাথে কুফর করছাে?"

(সূত্র, ই'লামুল আ'লাম, পৃ-,৭, প্রণেত- ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী)।


প্রকাশ থাকে যে, ইমাম আহমদ রেযা বেরলভী আলা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি নিছক সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে (সুবিধাবাদীর মতাে) ফাতওয়া আরােপের ঘাের বিরােধী ছিলেন। অর্থাৎ যখন সমাজ তাদের সুবিধানুসারে সুদ নিতে চাচ্ছিলাে, তখন হিন্দুস্থানকে 'দারুল হারব' সাব্যস্ত করে নিলাে, আর যখন রাজনৈতিক সুবিধা ভােগের নিমিত্তে মুসলমানদেরকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করতে চাইলাে তখন আবারাে এ দেশকে 'দারুল হারব' বলে সাব্যস্ত করে নিলাে! এ কেমন আবু লাহাবসুলভ পদক্ষেপ?

(সূত্র, হায়াতে মাওলানা আহমদ রেযা খান বেরলভী,

হাশিয়া, পৃ-১০৫, প্রফেসর ড, মাস'ঊদ আহমদ)


হিন্দুস্তানকে 'দারল ইসলাম' সাব্যস্ত করার ফলে একথা

সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এ মহান মুফতী চুলচেরা

বিচার-বিশ্লেষণের দৃষ্টিশক্তি ধারণ করেন, হিন্দুস্থানে

ইংরেজদের দখলদারিত্বকে জবরদস্তিমূলক মনে করেন, মুসলমানদেরকে তিনি এ অধিকার দিচ্ছেন যে, তাঁরা সাধ্যানুসারে দেশের স্বাধীনতার জন্য চেষ্টা করবেন। কিন্তু।আশ্চর্যজনক হচ্ছে- এ অবস্থানের বিরুদ্ধবাদীদের একথা বুঝে আসছে না যে, হিন্দুস্থানকে 'দারুল হারব' সাব্যস্ত করলে নিজেদের অধিকার থেকে নিজেরাই সরে দাঁড়াতে হয়।

কারণ, তাদের ফাত্ওয়া মতে, এমতাবস্থায় হিজরত করা ফরয হয়ে যায়, নিজেদের মাতৃভূমিকে মুক্ত করার অবকাশটুকু থাকছে না। আশ্চর্য! দীর্ঘ এক হাজার বছর যাবৎ এদেশে রাজত্ব করে মুসলমানগণ এত তাড়াতাড়ি নিজেদের অধিকার থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়ার পক্ষে না বিবেক সাঁয় দেয়, না এটা ন্যায়বিচারসম্মত হয়। তদুপরি এ প্রশ্নও মনে আসে যে, ইংরেজদের শাসনামলে যদি হিন্দুস্থান 'দারুল হারব' হতে পারে, তবে বর্তমানে হিন্দুদের রাজত্বের ফলে সেটা মুসলমানদের জন্য 'দারুল হারব' হবে না কেন? অথচ ইসলামী রীতিনীতি ও অনুশাসনাদি পালনের ক্ষেত্রে ইংরেজদের শাসনামলে যতটুকু আযাদী ছিলাে, এখন ততটুকু আযাদী আছে কিনা তাও অবস্থাদৃষ্টে সুস্পষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ ততটুকু স্বাধীনতা আছে বলে মনে হবে না। এ থেকে বুঝা গেলাে যে, যারা হিন্দুস্তানকে তখন 'দারুল হারব' বলে সাব্যস্ত করেছিলাে, তারা নিছক সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সুবিধা ভােগের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাে। এটা অন্যদিকে অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে মুসলমানদের ক্ষতিই করেছিলাে ।



আ'লা হযরতের এ ফাতওয়া আরােপের প্রেক্ষাপট

কি ছিলাে?


১২৯৮হি/১৮৮০খ্রিস্টাব্দে বদায়ূনে মির্যা আলী বেগ আ'লা হযরত আহমদ রেযা বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি থেকে তিনটি প্রশ্নের জবাব চেয়েছিলেন। আ'লা হযরত তার জবাবে 'ই'লামুল আ'লাম বিআন্না হিন্দুস্থান দারল ইসলাম' শিরােনামে একটি ফাতওয়া পুস্তক প্রণয়ন করলেন।


 প্রশ্নগুলাে নিম্নরূপঃ


প্রথম প্রশ্ন: হিন্দুস্তান কি 'দারুল ইসলাম', না দারুল হারব'?

দ্বিতীয় প্রশ্ন: বর্তমান যুগের ইহুদী ও খ্রিস্টানরা কি কিতাবী, না মুশরিক?

তৃতীয় প্রশ্ন: বিদ'আতীদের প্রসঙ্গে বিধান কি?

সুতরাং আ'লা হযরত প্রথম প্রশ্নের জবাবে লিখেছেন-

"আমাদের ইমামে আযম আবু হানিফা রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, বরং ওলামা-ই সালাসাহ' রাহিমাহুমুল্লাহু।আজমা'ঈন-এর মাযহাবানুসারে হিন্দুস্থান হচ্ছে 'দারুল ইসলাম; 'দারুল হারব' মােটেই নয়। কারণ, কোন 'দারুল ইসলাম 'দারুল হারব' হবার জন্য, আমাদের ইমাম-ই আযম, ইমামগণের ইমাম হযরত আবু হানীফা রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর মতে, তিনটি বিষয় থাকা আবশ্যক:


এক. সেখানে শির্কী বিধান প্রকাশ্যভাবে জারী করা হবে।

দুই, ইসলামী শরীয়তের বিধানাবলী মােটেই জারী হতে

পারবে না। সাহিবাঈনের মতে এতটুকু যথেষ্ট। কিন্তু এখানে, আল্লাহরই প্রশংসাক্রমে, এমনটি মােটেই মওজুদ নেই।

তিন.বিধানাবলীর বিবেচনায় জনসাধারণকেও দু'ভাগে ভাগ করা হয়- 'দারুল ইসলাম' ও 'দারুল হারব' । হিন্দুস্থানে যখন ইসলামী শাসন-ক্ষমতা ছিলাে, তখন হিন্দুস্থান তাে দারুল ইসলাম' ছিলােই; কিন্তু যখন হিন্দুস্থানের উপর ইংরেজদের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলাে, তখন আলিমদের মধ্যে এ আলােচনা ছড়িয়ে পড়লাে- এখন হিন্দুস্থান কি দারুল ইসলাম', না 'দারুল হারব'!

 সুতরাং আলিমদের একটি দল ফাতওয়া দিলেন যে, এখন হিন্দুস্থান না দারুল ইসলাম, না দারুল হারব; বরং দারুল আমন (নিরাপত্তার দেশ); যেমন- মুফতীকেফায়ত উল্লাহ্ সাহেব দেওবন্দী। তিনি হিন্দুস্থানকে

'দারুল আমন' সাব্যস্ত করলেন। মুফতী আনওয়ার শাহ্

কাশমীরী দেওবন্দীও গবেষণা করে বললেন, (আমাদের দেশ যদি দেশই হয়, তবে এটা 'দারুল আমানই। [মুহাজির নং-৩৪)।


উল্লেখ্য, ফিক্বহ শাস্ত্রের কিতাবাদির আলােকে বলতে গেলে, এ মাসআলায় অনেক সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়েছে; কিন্তু দারুল আমান নামের কোন দেশের সন্ধান কোন কিতাবে নেই। ফকীহগণের এ বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, জনসাধারণ হয়তাে দারুল ইসলাম'-এর হবে, অথবা দারুল হারব'-এর। কিছু সংখ্যক আলিম অবশ্য, হিন্দুস্থানকে 'দারুল হারব' বলেছেন। যেমন,শাহ্ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী হিন্দুস্থানকে 'দারুল হারব' বলে ফাতওয়া

দিয়েছেন। (ফাতাওয়া-ই আধীয়যাহ। পৃ: ১৬)।

কিছু সংখ্যক আলিম কোন সিদ্ধান্তই দেননি; বরং সারা জীবন সংশয়ে ভুগেছেন; যেমন- মৌলভী রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেব। তিনি তাঁর ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া'য় লিখেছেন- "হিন্দুস্তান 'দারুল হারব' কিনা তাতে আলিমদের মতবিরােধ আছে। গবেষণায় একথা প্রকাশ পায় যে, হিন্দুস্থানের অবস্থা ভাল হয়নি।

(সূত্র, ফাতাওয়া-ই রশীদিয়াহ, পৃ. ৪৩)।


অথচ মাসআলা (বিষয়)টি একেবারে সুস্পষ্ট। সাধারণভাবে প্রচলিত ফিক্বহর কিতাবাদি পাঠ-পর্যালােচনা করলে একথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, হিন্দুস্থান ইংরেজদের শাসনামলেও এবং বর্তমানেও 'দারুল ইসলাম। হিন্দুস্থান সম্পর্কে কিছুলােক এ বুনিয়াদ কিংবা দৃষ্টিকোণ থেকে ধোঁকায় পড়েছেন যে, তাঁরা মনে করেন- কোন রাষ্ট্র দারুল ইসলাম হবার জন্য সেখানে মুসলমানদেরই শাসন ক্ষমতা থাকা জরুরী।


বস্তুত এখানে দু'টি অবস্থা পৃথক পৃথক। "দারুল ইসলাম' 'দারুল হারব' কখন হয়ে যাবে? অর্থাৎ একটি রাষ্ট্র 'দারুল ইসলাম' ছিলাে। তারপর তা কাফিরদের দখলে চলে গেলাে।

তখন কি কাফিরদের নিছক দখলদারিত্বের কারণে তা দারুল হারব' হয়ে যাবে, না তজ্জন্য অন্যান্য পূর্বশর্তও থাকতে হবে? কিছু লােক ফিকহের কিতাবাদিতে দৃষ্টি নিবন্ধ করলেন এবং এ মর্মে গবেষণা করলেন যে, যখন মুসলমানদের দখলের ফলে 'দারুল হারব 'দারুল ইসলাম' হয়ে যায়, তখন কাফিরদের দখলদারিত্বের ফলে 'দারুল ইসলাম' 'দারুল।হারব' হবে কিনা? না মধ্যখানে ঝুলন্ত অবস্থায় 'দারুল আমন' হবে?

 অথচ এমনটি হয় না; বরং কাফিরদের দখলের সাথে

দু'টি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্তও পাওয়া যেতে হবে একটি হলাে- ওই রাষ্ট্রে ইসলামী বিধান পালন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হবে, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে- সেটার সীমানায় কোন অংশই ইসলামী রাষ্ট্রের সাথে মিলিত হবে না।


সারকথা এ হলাে যে, একটি দারুল ইসলাম' 'দারুল হারব' হবার জন্য নিম্নলিখিত তিনটি পূর্বশর্ত থাকা জরুরী-

১. কাফিরদের পূর্ণ দখলদারিত্ব, 

২. ইসলামী বিধান পালন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া এবং

 ৩. সেটার সীমানার কোন অংশ ইসলামী রাষ্ট্র (দারুল ইসলাম)-এর সাথে মিলিত হবে না।


সুতরাং যদি কোন রাষ্ট্রের মধ্যে উক্ত তিনটি শর্তের মধ্যে কোন একটি শর্তও পাওয়া না যায়, তবে তা হবে দারুল ইসলাম। যেমন কান রাষ্ট্রে কাফিরদের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঠিক; কিন্তু তাতে ইসলামী বিধানাবলী একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি, বরং কিছুটা এভাবে স্থায়ী থাকে যে, জুমার নামায, দু ঈদের নামায, পাঁচ ওয়াক্বতের নামায ও দাড়ি রাখা ইত্যাদি পালন করা হয়। তাহলে সেটা দারুল ইসলাম ই হবে। 


এ দৃষ্টিকোণ থেকে হিন্দুস্থান ইংরেজদের শাসননামলেও দারুল।ইসলাম' ছিলাে। কারণ সুস্পষ্ট, ভারতের উপর ইংরেজদের শাসন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলেও মুসলমানগণ তাদের ধর্মীয় অনুশাসনগুলাে পালন করতে পেরেছেন। আর এ রাষ্ট্রের সীমানা ইরান ও আফানিস্তানের মতাে ইসলামী রাষ্ট্রের সাথে মিলিত ছিলাে। সুতরাং হিন্দুস্থান 'দারুল ইসলাম' হবার মধ্যে কোন রূপ সন্দেহই নেই।


সুতরাং আ'লা হযরত বলেছেন- "আমাদের ইমাম-ই আ'যম, বরং আইম্মা-ই সালাসাহ্ (ইমামত্রয়) রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলায়হিম আজমা'ঈন-এর মাযহাব মতে, হিন্দুস্থান 'দারুল ইসলাম'; 'দারুল হারব' মােটেই নয়। কারণ, 'দারুল ইসলাম' 'দারুল হারব' হবার জন্য যেই তিনটি পূর্বশর্ত থাকা প্রয়ােজন, তন্মধ্যে একটি হচ্ছে- সেখানে শির্কী প্রথাসমূহ প্রকাশ্যে জারী হবে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে- সেখানে ইসলামী বিধানাবলী মােটেই পালিত হতে পারবে না। কিন্তু এখানে এ

শেষােক্ত বিষয়ের অস্তিত্ব নেই। এখানে মুসলমানদের জুমা, দু'ঈদ, আযান-ইকামত, জামা'আত সহকারে নামায ইত্যাদি শরীয়তের বিধান বিনা বাধায়, প্রকাশ্যে পালন করা যেতাে ও যাচ্ছে। তাছাড়া, বিবাহের ফরযগুলাে, রাদ্বা'আত (দুগ্ধপান), তালাক্ব, ইদ্দত পালন, রাজ'আত, মাহর, খুলা', স্ত্রীর ভরণপােষণ, শিশু পালন, বংশীয় ধারা রক্ষা, হিবাহ্, ওয়াক্বফ, ওসীয়ৎ ও শােফআহ্ মুসলমানগণ ইসলামী আইনানুসারে পালন করেন ও মীমাংসা করেন । [সুত্র, প্রাগুক্ত]।


প্রসঙ্গত আলা হযরতকে কৃত দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলেন- বর্তমানকার নাসারা' (খ্রিস্টান) তাদের আকীদা বা ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে নিঃসন্দেহে মুশরিক। কারণ, তারা যে হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম-এর নুবূয়তকে তাসলীস বা।(ত্রিত্ববাদ) দৃষ্টিকোণ থেকে মেনে থাকে, তাতে সন্দেহ নেই।

অর্থাৎ তারা তিন খােদায় বিশ্বাসী- ১. আল্লাহ্, ২. হযরত

মরিয়ম ও ৩. হযরত ঈসা, এটা নিরেট শির্ক। আর ইহুদীরা হযরত ওযায়র আলায়হিস সালামকে খােদার পুত্র ও খােদা বলে বিশ্বাস করে। এটাও নিঃসন্দেহে শির্ক।

এ প্রশ্নের উত্তরে আ'লা হযরত ওলামা-ই কেরামের বিভিন্ন।অভিমত উল্লেখ করে নিজের অভিমত এটাই প্রকাশ করেছেন।যে, সতর্কতা এতেই রয়েছে যে, খ্রিস্টান নারীকে বিবাহ্ করা ও তাদের যবেহকৃত পশু বা পাখী আহার করা থেকে বিরত থাকা। আর বর্তমানে যেসব ইহুদীকে হযরত ওয়াযর আলায়হিস্ সালামকে আল্লাহর পুত্র হিসেবে (না'উযুবিল্লাহ্) মান্য করতে দেখা যাবে তাদের নারীকে বিবাহ্ করা এবং তাদের যবেহকৃত প্রাণীর গােশত আহার করা থেকেও বেঁচে

থাকা অপরিহার্য। (সূত্র, প্রাগুক্ত)।


আলােচ্য বিষয়কে সামনে রেখে এ প্রসঙ্গটার এখানে

আলােচনা করলাম। তৃতীয় প্রশ্নের জবাবও যথাস্থানে দেওয়া হয়েছে।


পরিশেষে, খিলাফত আন্দোলন ও অসহযােগ আন্দোলনের মতাে হিন্দুস্তান 'দারুল ইসলাম' মর্মে ফাতওয়া প্রদানেও আলা হযরত সঠিক ফয়সালাটিই মুসলিম উম্মাহকে দিয়েছিলেন।

(মাসিক তরজুমান,সফর - ১৪৩৪ হি:,ডিসেম্বর

-জানুয়ারী - ২০১২-১৩,পৃ:- ৩৬,৩৭,৩৮,৩৯)।






বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

 


প্রতি মাসে মদিনা শরিফে গরিবদের কাছে মাসিক খরচের টাকা পাঠানাে

একবার এক ব্যক্তির খেদমতে প্রতি মাসের ন্যায় ৫০ টাকা মদিনা শরিফে টাকা পাঠানাের কথা ছিলাে। কিন্তু ঐ সময় আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র হাতে একটা টাকাও ছিলাে না। তাই তিনি রাসূলে পাক ﷺ'র দরবারে মনােযােগী হয়ে আবেদন করলেন, 'হুযুর। আমি আপনার ভরসাই খােদার কিছু বান্দার মাসিক খরচের দায়িত্ব নিজের জিম্মায় নিয়েছি। কাল ৫০ টাকা মানি অর্ডার।করা প্রয়ােজন। যদি করতে না পারি তাহলে পােস্ট অফিসের মানি অর্ডারের ব্যবস্থাপক চলে আসবেন। তারপরেও দিতে না পারলে টাকা পাঠাতে দেরি হয়ে।যাবে। ঐ রাতটি তিনি খুব দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ অবস্থায় কাটালেন। সকাল হলে এক ব্যক্তি।এসে ৫১ টাকা হযরত হাসনাঈন রেযার মাধ্যমে আ'লা হযরতের খেদমতে উপহার।

পাঠালেন। এ উপহার পেয়ে তিনি খুব খুশি হলেন এবং উল্লেখিত প্রয়ােজনের হাকিকত উম্মােচন হয়ে গেলাে। তিনি ইরশাদ ফরমালেন, নিঃসন্দেহ এটা হযুর।পাক ﷺ'র বদান্যতা। এ কারণে যে, একান্ন টাকা দেয়ার অর্থ হলাে ৫০ টাকা।মানি অর্ডারের জন্য। আর মানি অর্ডারের ফি তাে লাগবেই। তাই ১ টাকা ফি'র।জন্য। অতঃপর তিনি মানি অর্ডারের ফরম পূরণ করলেন এবং পােস্ট অফিস খােলার সাথে সাথেই টাকা পাঠিয়ে দিলেন।


যখন তাঁর কাছে কোথাও থেকে কোনাে টাকা আসতাে তখন তিনি তা বণ্টন করে দিতেন। এ ব্যাপারে তিনি নিজেই কোনাে এক সময়ে এরশাদ করেছিলেন,আমি কখনাে যাকাতের এক পয়সাও দিই নাই। কেননা তিনি তাঁর নিজের কাছে কখনাে এত টাকা জমা রাখেননি, যাতে বছর অতিবাহিত হওয়ার পর তাতে যাকাত ওয়াজিব হয়।

(আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ২৫৬ ) 



শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

 

হাদিস ১ :

◼ সাহীহাইনে হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত যে,  

عن انس بن مالك رضي الله عنه ان النَّبى صلى الله تعا لى عليه وسلم دخل مكَّة يو م الفتح وعلى رأسه المعضر فلما نز عه جاء رجلَّ فقال ابن خطل متعلقَّ با ستارِ الكعبةِ فقال اُقتله قال مالك ولم يكن النَّبى صلى الله عليه وسلم فيما نرى والله اعلم يومئذ محرما _


নিঃসন্দেহে মক্কা বিজয়ের দিন নবী করীম (ﷺ) মাথায় লােহার টুপি পরিহিত অবস্থায় মক্কায়ে মুয়াজ্জমায় প্রবেশ করেছেন। তিনি সবে মাত্র টুপি খুলেছেন এ সময় এক ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে বলল, ইবনে খাতাল (জাহেলী যুগে যার নাম ছিল আব্দুল উযযা -***) কাবার গিলাফ ধরে দাঁড়িয়ে আছে । নবী করীম (ﷺ) বললেন, তাকে হত্যা কর। ইমাম মালিক (رضي الله عنه) বলেন, আমাদের ধারণানুযায়ী সেদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইহরাম পরা অবস্থায় ছিলেন না। ***আল - বিদায়া ওয়ান নিহায়া।[বুখারী শরীফ, কিতাবুল মাগাযী]


এতে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, হারাম শরীফেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মৃত্যুর পরওয়ানা জারি করেছেন। অথচ আমরা জানি তাতে হত্যা, ঝগড়া - বিবাদ নিষিদ্ধ।


হাদিস ২ :

◼ ইমাম আবু জাফর আহমদ ইবনে মুহাম্মদ আল-মিসরী আত-তাহবী (রহঃ) বর্ণনা করেন,

عن عباد ة بن الصا مت قال قال رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم خذوا عنى فقد جعل الله لهن سبيلا- الخ 

হযরত উবদা ইবনুল সামিত (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “আমার থেকে তােমরা শরীয়তের বিধি-বিধান গ্রহণ কর, আল্লাহ তাদের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।”[শারহু মাআনিল আসার, খন্ড -৩]


উপরােক্ত হাদিস স্বয়ং বিশ্বমানবতার মুক্তির প্রথম ও একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আইনি সংবিধান মদীনা সনদের প্রবক্তা



 ◼ হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (ﷺ)- এর উক্তি - “আমার থেকে তােমরা শরীয়তের বিধি-বিধান গ্রহণ কর।"


এতে প্রতীয়মান হয় যে, আহকামে শরীয়ত তাঁরই হাতে ন্যস্ত।


হাদিস ৩ :

◼ ইমাম মুসলিম (رضي الله عنه) হযরত আলী ইবনে হুমায়ন (رضي الله عنه) থেকে হযরত মিস ওয়ার ইবনে মাখরামা সূত্রে দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেছেন। হযরত মিসওয়ার বলেন,

إِنَّ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ خَطَبَ بِنْتَ أَبِي جَهْلٍ عَلَى فَاطِمَةَ، فَسَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَخْطُبُ النَّاسَ فِي ذَلِكَ، عَلَى مِنْبَرِهِ هَذَا، وَأَنَا يَوْمَئِذٍ مُحْتَلِمٌ فَقَالَ: «إِنَّ فَاطِمَةَ مِنِّي، وَإِنِّي أَتَخَوَّفُ أَنْ تُفْتَنَ فِي دِينِهَا» قَالَ ثُمَّ ذَكَرَ صِهْرًا لَهُ مِنْ بَنِي عَبْدِ شَمْسٍ، فَأَثْنَى عَلَيْهِ فِي مُصَاهَرَتِهِ إِيَّاهُ فَأَحْسَنَ، قَالَ «حَدَّثَنِي فَصَدَقَنِي، وَوَعَدَنِي فَأَوْفَى لِي، وَإِنِّي لَسْتُ أُحَرِّمُ حَلَالًا وَلَا أُحِلُّ حَرَامًا، وَلَكِنْ وَاللهِ لَا تَجْتَمِعُ بِنْتُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبِنْتُ عَدُوِّ اللهِ مَكَانًا وَاحِدًا أَبَدًا

অবশ্য ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহা জীবিত থাকাকালে হযরত আলী (رضي الله عنه) আবু জাহলের কন্যাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তখন আমি এ বিষয় নিয়ে রাসূলুল্লাহু (ﷺ)'কে লােকদের সামনে মিম্বরে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিতে শুনেছি, আমি সে সময় সদ্য বালিগ বয়সের। তখন তিনি বললেন, ফাতিমা আমারই অঙ্গ, আমার ভয় হচ্ছে, সে তার দ্বীনের ব্যাপরে ফিতনায় না পতিত হয়। অতঃপর তিনি আবদ ই-শামস গােত্রীয় তাঁর জামাতার আলােচনা করলেন। তার আত্মীয়তার সুন্দর প্রশংসা করলেন এবং বললেন, সে আমায় যা বলেছে সত্য সাব্যস্ত করেছে। যে অংঙ্গীকার করেছে তা প্রতিপালন করেছে আর আমি কোন হালালকে হারাম করি বা হারামকে হালাল করি না। তবে আল্লাহর কসম, আল্লাহর রাসূলের মেয়ে এবং আল্লাহর দুশমনের মেয়ে কখনাে এক জায়গায় একত্রিত হবে না।

[মুসলিম শরীফ]


উক্ত হাদিসের আলােকে প্রমাণিত হয় যে, শরীয়তে বিধিবিধান আল্লাহর রাসূল (ﷺ) - এর করায়ত্তে। কেননা একজন পূরুষ চাইলে একসাথে চার জন স্ত্রী বিবাহবন্ধনে রাখতে পারবে, যা আল্লাহর কুরআনের ফয়সালা ।


হাদিস ৪ :

◼ ইমাম আবু জাফর আহমদ ইবনে মুহাম্মদ আল-মিসরী আত-তাহাবী (রহঃ) হযরত উমারাহ ইবনে খুযায়মাহ আনসারী সূত্রে দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেছেন।


যাতে রাসূলুল্লাহু (ﷺ) হযরত খুযায়মা ইবনে সাবিত (رضي الله عنه)'র একার সাক্ষ্যকে দু'ব্যক্তির সাক্ষ্যের সমান করেছিলেন। উমারাহ (رضي الله عنه) বলেন, আমার চাচা যিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাহাবী ছিলেন, তিনি বলেন, একবার রাসূলে পাক একজন গ্রাম্য লােকের নিকট হতে একটা ঘােড়া ক্রয় করলেন। অতঃপর তিনি তার ঘােড়ার মূল্য নেয়ার জন্য তাকে তার পেছনে আসতে বললেন। রাসূলুল্লাহু (ﷺ) দ্রুত চললেন কিন্তু সে ধীরে আসতে লাগল, কিছু লােক তার সম্মুখীন হলাে এবং তার সাথে ঘােড়াটি ক্রয়ের আলােচনা করতে লাগল, তারা একথা জানে না যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঘােড়াটি ক্রয় করেছেন। এমনকি তাদের একজন নবী (ﷺ) যে মূল্য দিয়ে ঘােড়াটি ক্রয় করেছেন, তার চেয়েও বেশি মূল্য বললাে। অতঃপর নবী (ﷺ) কে গ্রাম্য লােকটি চিৎকার করে ডেকে বললাে, আপনি যদি ঘােড়াটি ক্রয় করতে চান ক্রয় করুণ, নইলে আমি বিক্রয় করে দেব, তার এ চিৎকার যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শুনতে পেলেন, তখন তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর বললেন আমি কি তােমার কাছ থেকে ঘােড়াটি ক্রয় করিনি? লােকটি বললাে, না। আল্লাহর কসম, আমি আপনার নিকট বিক্রয় করিনি। নবী (ﷺ) বললেন, অবশ্যই তুমি বিক্রয় করেছ, আমি তােমার কাছ থেকে ক্রয় করেছি। অতঃপর লােকজন নবী (ﷺ) এবং উক্ত গ্রাম্য লােকটির নিকট জমা হতে লাগল। আর তারা দুজন একে অপরের সাথে কথা কাটাকাটি করছিল। গ্রাম্য লােকটি বলতে লাগল, আমি যে আপনার নিকট বিক্রয় করেছি এ ব্যাপারে একজন সাক্ষী পেশ করুন। এ সময় যে মুসলমানই সেখানে উপস্থিত হতেন, তিনি বলতেন, তােমার সর্বনাশ হােক। নবী (ﷺ) সত্য ব্যতীত অসত্য বলতে পারে না।


حتى جاء خز يمة فا ستمع لمراجعة النبى صلى الله تعالى عليه وسلم ومراجعة الا عرابى وهو يقول هلم شهيدًا يشهدلك انَّى قد بايهنك فقال جزيمة انا اشهد انَّك قد بايعتهُ فاقبل النيى صلى الله تعالى عليه وسلم على خزيمة فقال بما تشهد فقال بتصد يقك يارسول الله فجعل رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم شهاد ةَ خز يمةَ بشَّهادة رجلين _  -


এমন সময় হযরত খুযায়মা (رضي الله عنه) সেখানে উপস্থিত হন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও গ্রাম্য লােকটির কথােপকথন শােনেন। সে বলছিল- আপনি সাক্ষী পেশ করুন, যে একথার সাক্ষ্য দেবে যে, আমি আপনার নিকট ঘােড়াটি বিক্রয় করেছি। তখন খুযায়মা (رضي الله عنه) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ঘােড়াটি বিক্রয় করেছ। তখন নবী (ﷺ) তার দিকে অগ্রসর হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কিভাবে সাক্ষ্য দিচ্ছ? তিনি বললেন,হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ! আপনাকে যে আমি সত্য নবী মেনে নিয়েছি, তার মাধ্যমেই সাক্ষ্য দিচ্ছি, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত খুযায়মা (رضي الله عنه) - এর সাক্ষ্যকে দুজন ব্যক্তির সাক্ষ্যের সমান ঘােষণা করলেন।

[শারহু মা’আনিল আসার, খন্ড -৩]


দু’জন সাক্ষীর মােকাবেলায় খুযায়মা ইবনে সাবিতের সাক্ষ্যকে যথেষ্ট করা, নিঃসন্দেহে শরয়ী বিধানমালা যে হাবীবুল্লাহ (ﷺ) - এর হাতে ন্যস্ত সেটার অকাট্য প্রমাণ বহন করে। আর এমনটিই মুসলিম মিল্লাতের ঈমান আকিদা হওয়া চাই । আমীন!

"হুযুর সৈয়্যদে আলম (ﷺ) এর সুদৃঢ় পরওয়ানায় পবিত্র মদীনায়ে তৈয়্যবাকে হারাম ঘােষণার হাদিস সমূহ"


হাদিস ৫ :

◼ সহীহাইনে (হাদীসের বিশুদ্ধতম দুই কিতাব) রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আবেদন করেন :


اللَّهُمَّ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ حَرَّمَ مَكَّةَ، وَإِنِّي أُحَرِّمُ مَا بَيْنَ لاَبَتَيْهَا - هما واحمد والطحا وى فى شرح معا نى الا ثار عن انس رض الله تعالى عنه _


হে আল্লাহ ! নিঃসন্দেহে হযরত ইবরাহীম (عليه السلام) মক্কাকে হারাম করেছেন, আর আমি মদীনায়ে তায়েবার দু প্রস্তরময় ভূখন্ডকে হারাম করলাম।”


▪ কানযুল উম্মাল বাযযারের শর্তের অনুকুলে হাদিস নম্বর - ৩৮১২৩, মুআসসাসা আর রিসালা,বৈরত -১৪/১২৫।


▪ সহীহ বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া, বাবু ইয়াজিফফুনান নাসলান, কদীমী কুতুবখানা করাচী- ৪৭৭/১।


▪ সহীহ বুখারী,কিতাবুল মাগাযী, গাযওয়ায়ে উহুদ, কদিমী কিতাবখানা, কারাচী - ৫৮৫/২।


▪ সহীহ বুখারী,কিতাবুল ইতিসাম, বাবু মা যাকারান নবী (ﷺ) প্রাগুক্ত, ১৪০৯০/২।


▪ সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ্জ, বাবু ফযল মাদীনা, কদীমী কিতাবখানা, করাচী - ৪৪১/১।


▪ মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, আল মাকতাবুল ইসলামী, বৈরুত - ১৪৯/৩।


▪ শারহু মা’আনিল আসার, কিতাবুস সায়ীদ, বাবু সায়ীদিল মদীনা, এইচ, এম সাঈদ কোমপানী, করাচী - ৩৪২২।


এ হাদিস বুখারী, মুসলিম ও আহমদ এবং ইমাম তাহাবী এটি শারহু। মা’আনিল আসার’ গ্রন্থে হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা হতে বর্ণনা করেছেন।


হাদিস ৬ :


◼ সহীহাইনে এইমতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

إِنَّ إِبْرَاهِيمَ حَرَّمَ مَكَّةَ وَدَعَا لِأَهْلِهَا، وَإِنِّي حَرَّمْتُ الْمَدِينَةَ كَمَا حَرَّمَ إِبْرَاهِيمُ مَكَّةَ، وَإِنِّي دَعَوْتُ فِي صَاعِهَا وَمُدِّهَا بِمِثْلَيْ مَا دَعَا بِهِ إِبْرَاهِيمُ لِأَهْلِ مَكَّةَ -


هم جميعا عن عبد الله بن زيد بن عاصم رضي الله تعالى عنه - -


নিঃসন্দেহে হযরত ইবরাহীম (عليه السلام) মক্কায়ে মুয়াজ্জামাকে হারাম ঘােষণা করেছেন ও তাঁর অধিবাসীদের জন্য দোয়া করেছেন। আর নিঃসন্দেহে আমিও পবিত্র মদীনাকে হারাম ঘােষণা করেছি। যেমনিভাবে হযরত ইবরাহীম (عليه السلام) মক্কাকে হারাম ঘােষণা করেছেন। আর আমি মদীনার এক মুদ ও সা’ এর বরকতের জন্য দোয়া করছি। যেরূপ দেয়া হযরত ইবরাহীম (عليه السلام) আহলে মক্কার জন্য করেছিলেন।


এ হাদিস আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ (رضي الله عنه) হতে তারা সকলেই বর্ণনা করেছেন।


▪ সহীহ বুখারী, কিতাবুল বুরূহ, বাবু বারাকাতিস সায়িম নবী (ﷺ), কাদিমী কিতাব খানা, করাচী - ২৮৬/১।


▪ সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ্জ, বাবু ফলিল মদীনা ওয়া দুআউন নবী (ﷺ), কাদিমী। কিতাবখানা, করাচী - ৪৪০/১।


▪ মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল - মাকতাবুল ইসলামী, বৈরুত - ৪০/৪।


▪ শারহু মা'আনিল আসার, কিতাবুস সায়ীদ, বাবু সায়ীদিল মদীনা, এইচ, এম, সাঈদ কোমপানী, করাচী - ৩৪২/২।।



হাদিস ৭ :


◼ সহীহাইনে এইরূপে বর্ণিত রয়েছে যে, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, হুযুরে আক্বদাস (ﷺ) আরজ করেন: হে আল্লাহ ! নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম (আঃ) তােমার বন্ধু, তােমার নবী, আর আপনি তাঁর যবানের উপর মক্কায়ে মুয়াজ্জমাকে হারাম করেছেন।


اللهم وانا عبدك ونبيك وانى اُحِرّ مُ ما بين لا بتيها


অর্থাৎ হে আল্লাহ ! আমিও তােমার বান্দা ও তােমার নবী, আমি মদীনায়ে তাইয়েবার দু'টি কৃষ্ণ প্রস্তরময় ভূমির গােটা স্থানকে হারাম ঘােষণা করছি।


▪ সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ্জ, বাবু ফলিল মদীনা ওয়া দুআউন নবী ﷺ কদীমী কিতাব খানা, করাচী - ৪৪০/১।


▪ সুনানে ইবনে মাজাহ, আবওয়াবুল মানাসিক, বাবু ফযলুল মদীনা, এইচ, এম, সাঈদ কোমপানি, করাচী - পৃষ্ঠা - ২৩২।


▪ কানযুল উম্মাল, হাদিস নম্বর : ৩৪৮৮২, মুআসসাসা আর রিসালা, বৈরুত - ২৪৫/১২।


হাদিস ৮ :


ইমাম তাহাবী (رضي الله عنه) এটির নিকটবর্তী বর্ণনা করেছেন এবং এতটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন -

ونهى النبى صلى الله تعالى عليه وسلم ان يقصد شجرها او يخبط او يؤخد طير ها -


রাসূল (ﷺ) মদীনার গাছ কাটতে, তার পাতা ছিড়তে এবং এখানকার পাখি শিকার করতে নিষেধ করেছেন।


▪ শারহু মা'আনিল আসার, কিতাবুস সায়ীদ, বাবু সায়ীদিল মদীনা, এইচ, এম. সাঈদ কোমপানি, করাচী - ৩৪৩/২।



হাদিস ৯ :


সহীহ মুসলিম শরীফে রয়েছে যে, রাসূল (ﷺ) বলেছেন ,  

انّى اُحَرِمُّ ما بين لا بتى المدينة ان يقطع عضا هها او يقتل صيد ها - هو واحمد واطحا وى عن سعد بن ابى وقاض رضى الله تعالى عنه

নিঃসন্দেহে আমি মদীনার দুই প্রান্তের মধবর্তী স্থানকে হারাম বলে। ঘােষষণা করলাম। অতএব এখানকার গাছপালা কর্তন করা এবং এখানকার জীব জন্তু শিকার করা হারাম করেছেন।  


এ হাদিস ইমাম মুসলিম ও ইমাম আহমদ এবং ইমাম তাহাবী (রহঃ) সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন।


▪ সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ্জ, বাবু ফলিল মদীনা, কদমী কিতাব খানা, কারাচী - ৪৪০/১।


▪ মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, হযরত সাঈদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, আল মাকতাবুল ইসলামী, বৈরুত - ১৮১/১।


▪ শারহু মা’আনিল আসার, কিতাবুল হজ্জ, বাবু ফলিল মদীনা, কাদীমী কিতাব খানা, করাচী - ৪৪০/১।



হাদিস ১০ :


সহীহ মুসলিম শরীফের মাঝে এ বর্ণিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,


إِنَّ إِبْرَاهِيمَ حَرَّمَ مَكَّةَ، وَإِنِّي أُحَرِّمُ مَا بَيْنَ لاَبَتَيْهَا - هو والطحاوى عن رفع بن خد يج رض الله تعالى عنه -


নিঃসন্দেহে হযরত ইবরাহীম (আঃ) মক্কায়ে মুয়াজ্জমাকে হারাম বানিয়েছেন, আর আমি মদীনার দুটি কৃষ্ণ প্রস্তরময় ভূমির মধ্যবর্তী জায়গাকে হারাম ঘােষণা করছি।”


উপর্যুক্ত হাদিসটি ইমাম মুসলিম ও ইমাম তাহাবী হযরত রাফি ইবনে খাদীজ (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন।


▪ সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ্জ, বাবু ফলিল মদী, কাদীমী কিতাখানা,করাচী - ৪৪০/১।


▪ শারহু মাআনিল আসার, কিতাবুস সায়ীদ, বাবু সায়ীদিল মদীনা, এইচ, এস, সাঈদ কোমপানী, করাচী - ৩৪২/২।

____________________


কিতাবঃ শরীয়তের বিধি-বিধান নবীর হাতে

মূলঃ আ'লা হযরত মুজাদ্দিদ ইমাম আহমদ রেযা (রহঃ)

অনুবাদঃ মুহাম্মদ হােসাইন রেযা কাদেরী।

সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan



সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

 


ইন্তেকালের সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ'র সাক্ষাত ও হুযুর ﷺ অপেক্ষমানঃ-

মাওলানা আবদুল আযিয মুহাদ্দিস মুরাদাবাদি দারুল উলুম আশরাফিয়াহ (আজমগড়), আজমির শরিফ দরগাহের সাজ্জাদানশীন দিওয়ান সৈয়্যদ আলে রাসূল সাহেবের সম্মানিত চাচা (যিনি এক উঁচু পর্যায়ের বুযুর্গ ছিলেন) ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী নির্ভরযােগ্য আর কথা স্বপ্নের। যাদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালা অন্তদৃষ্টি দান করেছেন, তারা অবশ্যই এ ঘটনা থেকে জ্যোতি লাভ করবেন। তিনি বলেছেন- "১২ই রবিউস সানি, ১৩৪০ হিজরি। একজন সিরিয়াবাসী বুযুর্গ দিল্লীতে তাশরিফ আনলেন। তাঁর আগমনের সংবাদ শুনে তাঁর সাক্ষাতপ্রত্যাশী হলাম। খেদমতে গিয়ে দেখলাম বড়ই  বুযুর্গ লােক।

মানসিকতায় স্বাবলম্বিতার ছাপ ছিল খুবই স্পষ্ট। মুসলমানগণ অন্যান্য আরবিয় বুযুর্গদের খিদমত করার নিমিত্তে নযরানা পেশ করতে লাগলাে। কিন্তু তিনি তা।কবুল করতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং আল্লাহর অনুগ্রহে তিনি আর্থিকভাবে সচ্ছল।এটা বুঝিয়ে দিলেন। আমি আরয করলাম, এখানে তাশরিফ আনার কারণ কী? তিনি উত্তরে বললেন, 'উদ্দেশ্য তাে বড়ই উঁচু মানের ছিলাে, কিন্তু হাসিল হলাে না। আফসােস! তা হচ্ছে, ২৫ শে সফর ১৩৪০ হিজরি আমার সৌভাগ্য জেগে উঠলাে।

স্বপ্নে আমার নবি করিম ﷺ'র যিয়ারত নসিব হলাে। দেখলাম হুযুর তাশরিফ রাখছেন, সাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মহান দরবারে উপস্থিত আছেন। কিন্তু মজলিসে নিরবতা বিরাজ করছিলাে। মনে হচ্ছিলাে কারাে জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। আমি রাসূলে পাকের দরবারে আরয করলাম, ফিদাকা আবি ওয়া উম্মি (আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হােক) ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! কার জন্য অপেক্ষা? এরশাদ ফরমালেন, 'আহমদ রেযার জন্য অপেক্ষা। আমি আরয করলাম, আহমদ রেযা কে? এরশাদ হলাে, হিন্দুস্থানের বেরেলির বাসিন্দা।' স্বপ্ন ভাঙ্গার পর আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম যে, মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেব খুবই উঁচুমানের একজন আলিম। তাই তাঁরই সাক্ষাত প্রত্যাশী হয়ে বেরেলি শহরে পৌঁছেছি। এসে জানতে পারলাম তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আর ওই ২৫শে সফর তাঁর ইন্তেকালের তারিখ ছিলাে। তাঁর সাথে সাক্ষাতের অদম্য আগ্রহে এ দীর্ঘ সফর করলাম; কিন্তু আফসােস! সাক্ষাত করতে পারলাম না।(মাওলানা নাদিব বসতবি রচিত "মুজাদ্দিদে ইসলাম",প্রাগুক্ত,পৃষ্ঠা - ১২৭ ও আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ২১০,২১১)।

ইসলামী আলোচনা ব্লগটি ভিজিট করুন।