ইমামে আহলে সুন্নাত আ'লা হযরত শাহ আহমদ রেযা খান বেরেলভী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু শরয়ী ফয়সালার বিষয়ে তিল পরিমাণ এদিক সেদিক করতেন না। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত কোনাে প্রকার আবেগাপ্লুত হয়ে শরিয়তের রাস্তা হতে এক মুহূর্তের জন্যও খসে পড়েননি। অন্যায় অবিচার তাঁর চক্ষুশূল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি যেমন ছিলেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, তেমনি সত্যের ব্যাপারে ছিলেন খুবই কোমল। শরয়ী সাবধানতা ছিলাে তাঁর অন্যতম গৌরবময় দিক। এমনকি একটি কুকুরের প্রতিও তিনি কোনাে শরয়ী অসাবধানতা ও ঘৃণ্য শব্দ ব্যবহার করতেন না। একদা আ'লা হযরতের খলিফা মাওলানা আবু সিরাজ আবদুল হক রেজভি শামসি রহমাতুল্লাহি আলাইহি আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র দরবারে অনুষ্ঠিত মিলাদুন্নবি মাহফিলে ওয়াজ করছিলেন।
এমতাবস্থায় তাঁর ফাত্ওয়া বিভাগের সামনে একটি কুকুর অযথা বসে থাকতে দেখে ওয়াজ রত মাওলানা শামসি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন, এ ওহাবিকে (কুকুর) বের করে দাও।মাওলানা শামসি'র এ কথায় আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু খুবই অসন্তষ্ট হয়ে বললেন,
মাওলানা চুপ থাকেন! মাওলানা এ কি কখনাে প্রিয় নবিজির শানে বেয়াদবি করেছে? খামােখা আপনি এটিকে ওহাবি খেতাবে ধিক্কার দিলেন? এ কুকুর আপনার কী অপরাধ করেছে, যে কারণে এটির উপর এত বড় অপবাদ! আপনি এটি থেকে এ ঘৃণ্য শব্দটি প্রত্যাখান করে নিন। কিয়ামত দিবসে যদি এ কুকুর খােদা তায়ালার দরবারে আপনার বিরুদ্ধে বিচার প্রার্থনা করে এ বলে "মাওলা আমি কী কখনাে নবিজির শানে বেয়াদবি করেছি? আমাকে কেনাে এ নিকৃষ্ট শব্দটি ব্যবহার করে কলঙ্কিত করা হয়েছে?" তখন আপনার উত্তর কী হবে? আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র এ প্রশ্নে উপস্থিত সকল জনতা এবং উপর্যুক্ত মাওলানা একেবারেই চুপচাপ। আ'লা।হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র চক্ষুদ্বয়ে অশ্রু বিসর্জিত হচ্ছিলাে। কিছুক্ষণ পর তিনি উক্ত মাওলানা।কে সম্বােধন করে বললেন- মাওলানা আপনি তাওবা করে নিন। আজকাল।রাসূলুল্লাহ ﷺ'র শানে বেয়াদবি ও ধৃষ্টতামূলক আচরণকারীকেই ওহাবি বলা হয়।
মনে রাখুন! হতে পারে কুকুর নাপাক প্রাণী; কিন্তু হুযুর ﷺ'র শানে।অবমাননাকারী তাে নয়। প্রাণীরাও তাে হুযুর ﷺ কে তা'জিম প্রদর্শন করে।
প্রিয় পাঠক! লক্ষ্য করুন, আ'লা হযরত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু শরিয়তের মাসআলা - মাসায়েলের ব্যাপারে কী পরিমাণ সতর্কতা অবলম্বন করতেন। তিনি যখন-তখন,যাকে - তাকে কাফের আখ্যায়িত করতেন না, তবে কারাে আক্বিদায় কুফরি প্রকাশ পেলেই তাকে
কাফির বলতে দ্বিধা করতেন না। কারণ তিনি এটা ঈমানি দায়িত্ব মনে করতেন।
(মাওলানা আমানত রাসুল কাদেরি রেজভি মুস্তফভি রচিত "তাজাল্লিয়াতে ইমাম আহমদ রেযা",পৃষ্ঠা - ১৫২,আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ৭১-৭২)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন