রবিবার, ২ মে, ২০২১


ঋণ প্রার্থীদেরকে সহজে ঋণ প্রদান 

জনৈক ব্যক্তি আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)'র খেদমতে এসে তার ঋণগ্রহিতা ঋণ আদায় করছেনা বলে অভিযােগ করলেন। তিনি বললেন, "এ যুগে ঋণ প্রদান করে তা উসুল হবে বলে মনে করা একটি কঠিন কাজ। বিভিন্ন লোকের উপর আমার পনের শত টাকা ঋণ আছে। আমি তাে ঋণ প্রদানের সময় এ খেয়ালে দিয়েছি যে, আদায় হলে ভালাে; কিন্তু চাইবাে না। যখন কাউকে কর্জ দেন তখন হেবার নিয়ত করে দিবেন।


হাদিস শরিফে রয়েছে, যদি কারাে উপর কারো ঋণ থাকে, পরিশােধের নিদিষ্ট দিন অতিবাহিত হওয়ার পর প্রতিদিন ঋণ প্রদানকারীর আমলনামায় ঋণ সমপরিমাণ দানের সাওয়াব পাওয়া যাবে। এ অধিক সাওয়াবের আশায় আমি ঋণ দিয়েছি।

কারণ, পনেরশ টাকা দান করার সওয়াব আমি কোথা থেকে পাবাে?"(মাওলানা মােস্তফা রেযা বেরেলভী সংকলিত "আল মালফুজ", প্রাগুক্ত, খণ্ড: ০১, পৃষ্ঠা: ৩৮)।


আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)'র আয়ের ব্যবস্থা বহুমুখি হলেও প্রয়ােজনীয় সম্পদটুকু রেখে অতিরিক্ত সকল সম্পদই বিত্তহীনদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। এমনকি কিছু কিছু সময় বাৎসরিক প্রাপ্ত আয়ে যথেষ্ট না হওয়ায় তাঁকে অন্যদের থেকে ঋণ নিতে হতাে। অনেক সময় ডাক-টিকিট খরিদের টাকাও তাঁর কাছে থাকতাে না। যা আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)'র কড়া সমালােচক ওহাবি গুরু এহসান এলাহিও তার 'আল বেরলভিয়্যাহ গ্রন্থে স্বীকার

করেছে।(এইসান জহির এলাহি রচিত "আল বেরলভিয়্যাহ", প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ২৪)।


আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি

আলাইহি) বিশ্বাস করতেন, অর্থ সম্পদ মানুষের জীবনের জন্য অপরিহার্য বটে, তবে তা কখনােই মানুষের একমাত্র লক্ষ্যবস্তু হতে পারে না। তাই তাে তিনি গ্রাম থেকে আসা জমিদারীর টাকা পয়সা ও ধন সম্পদের কোনাে হিসাব রাখতেন না। কতাে আসলাে বা কতাে পেলাম, এই হিসাব তাঁর কাছে ছিলাে না। যা পেতেন সব মাকে দিয়ে দিতেন। এমনকি কিতাব খরিদের জন্যও মার কাছ থেকে নিতেন। (মাওলানা আবদুল হাকিম শরফ কাদেরি রচিত "আল বেরেলভিয়্যাহ কি তানকিদি জায়েবাহ", প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১০৮)।


তাইতাে তিনি বলেছেন, আমি কখনাে এক পয়সা যাকাত দেই নি। কারণ তাঁর উপর যাকাত ফরয হওয়ার মত নিসাব বছরান্তে জমা থাকতাে না। যা বুযুর্গানে দ্বীনের আদর্শ। আর তিনি হলেন সে সমস্ত বুযুর্গদের সাচ্চা অনুসারী। তিনি ছিলেন প্রকৃত ইমামে আহলে সুন্নাত ও জাতির অভিভাবক। তাঁর ত্যাগ, সেবা ও বদান্যতা কেবল বিশেষ সমাজ, দেশ বা কালের সীমায় আবদ্ধ নয়। এর প্রসার ব্যাপক।


তিনি প্রতি বৎসর সমগ্র আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতাদর্শীদের জন্য কুরবানি দিতেন। যারা কুরবানি করতে পারেন নি, পারছে না এবং পারবে না সকলের পক্ষ থেকে তাঁর কুরবানি চালু ছিলাে।(মাওলানা মােস্তফা রেযা বেরেলভী রচিত "আল মালফুজ", প্রাগুক্ত, খণ্ডঃ ০২, পৃষ্ঠা ১২১)।


দরিদ্রতা বিমােচনে শুধু যাকাত নয়, দরিদ্রতা দূর করার জন্য ফিতরা, সাদকাহ, খায়রাতসহ দুঃস্থ মানুষের যা দরকার তা দিয়ে সাহায্য করতেন। যেমনটি করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে মুমিনদেরকে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, 'উপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম'। কারণ অভাব অনেক সময় মানুষকে কুফরের দিকেও নিয়ে যায়। যাদের কাছে বিত্ত থাকা শর্তেও বিত্তহীনদের প্রতি দয়া পরবশ হয় না, তারা কৃপণ। হাদিস শরিফে আছে "দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর বন্ধু, আর কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহর শত্রু। যদিও সে হয় পরহেযগার।"


আর এর উদ্দেশ্য হলাে, সম্পদ যেন শুধু ধনীদের মধ্যে আবর্তিত না হয়। যেন চক্রাকারে ঘুরতে থাকে, ধনী থেকে গরিব আবার গরিব থেকে ধনী। অর্থনীতির দৃষ্টিতে- বিত্ত এভাবে যত বেশি হাত বদল হবে ততবেশি অর্থনীতি মজবুত হবে।

পক্ষান্তরে বিত্ত যতবেশি মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে বন্দি থাকবে অর্থনীতির গতি ততবেশি রুদ্ধ হয়ে উঠবে। এভাবে অর্থনীতির গতি অচল হতে থাকলে এক সময় কোনাে জনপদে মন্দা দেখা দেয়। তখন সে জনপদকে উন্নয়নশীল জনপদ বলা যায় না। 


তাইতাে উন্নয়নের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে Michel p. Todaro তার Economics for Developing Word  এ বলেন The reduction or elimination of poverty inequality and unemployment within the context of a growing economy.


একটি প্রবৃদ্ধিশীল অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে দারিদ্র, অসাম্য ও বেকারত্বের মাত্রা হ্রাস করা বা সম্পূর্ণ নিঃশেষ করাই হলাে উন্নয়ন। (দারিদ্র বিমোচনে ইসলাম,নুরুল ইসলাম সম্পাদিত,ই ফা বা, পৃষ্ঠা - ১০)।


আর এ উন্নয়নের ধারাকে অব্যহত রাখতেন আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মুক্ত হস্তে দান ও সেবার মাধ্যমে। সুতরাং 'তিনি যাকাত দেই নি বলে' যে অপবাদ দেয়া হয়েছে, তা তাঁর জীবনী সম্পর্কে না জানার কারণে।

(আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা -২৬০,

২৬১,২৬২)।





বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল, ২০২১


সৈয়্যদযাদাদের জন্য আ'লা হযরতের দরবার ছিলো সর্বদা উন্মুক্ত

সৈয়্যদ আইয়ুব আলি সাহেব বর্ণনা করেন, আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)'র দরবারে মিলাদ শরিফ উপলক্ষে যে তাবাররুক তৈয়ার হতাে তা বণ্টনের একটা নিয়ম ছিলাে। নিয়মটি হলাে উক্ত মিলাদ শরীফে যে সকল বাচ্চা ও দাঁড়ি বিহীন ব্যক্তি উপস্থিত থাকতেন তাদেরকে এক প্যাকেট শিরনি দেয়া হতাে।
দাঁড়িওয়ালা যেসব মানুষ থাকতেন তাদেরকে দু'প্যাকেট দেয়া হতাে। আর যেসব সৈয়্যদযাদা শরিক হতেন তাঁদেরকে চার প্যাকেট শিরনি দেয়া হতাে। তাঁর খান্দানের সকলেই তা অনুসরণ করতেন। এক বছর রবিউল আউয়াল শরিফের ১২ তারিখে মিলাদুন্নবী ﷺ'র অনুষ্ঠানে মানুষের সমাগম বেশি হয়েছিলাে। তাবাররুক বণ্টনের সময় নিয়মের পরিপন্থী সৈয়্যদ মাহমুদ জানকে এক প্যাকেট দেয়া হলাে।
অথচ তিনি চার প্যাকেট পাওয়ার যােগ্য। তিনি এক প্যাকেট গ্রহণ করে চুপিসরে আ'লা হযরত (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)'র খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলেন, হুযুর! আজকে
আমাকে তাবাররুক এক প্যাকেট দেয়া হয়েছে। আ'লা হযরত (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বললেন,।সৈয়্যদ সাহেব, অপেক্ষা করুন। আমি দিচ্ছি, বলে তাবাররুক বণ্টকারীকে
ডাকলেন এবং খুব অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বললেন, এখনই একটি কাচের প্লেট নিয়ে তাতে তবাররুকে পরিপূর্ণ করে সৈয়্যদ সাহেবের খেদমতে পেশ করাে। তৎক্ষণাৎ হুকুম তামিল করা হলাে। সৈয়্যদ সাহেব বললেন, 'হুযুর! আমার উদ্দেশ্য এটা ছিলাে না। তবে হ্যা, আমার মনে খুব কষ্ট এসেছে, যা সহ্য করতে পারিনি।' আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ফরমালেন, সৈয়্যদ সাহেব এ তাবারুক আপনাকে গ্রহণ করতে হবে নতুবা আমি খুব কষ্ট পাবাে। এরপর বণ্টনকারীকে বললেন, একজন লােক সৈয়্যদ সাহেবের সাথে দাও, যে প্যাকেটগুলাে সৈয়্যদ সাহেবের ঘরে পৌঁছে দেবে। তৎক্ষণাৎ হুকুম তামিল করা হলাে।

(আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ২৫৯-২৬০ )

সোমবার, ৫ এপ্রিল, ২০২১

 


শীতকালীন উন্নত বস্ত্ৰ নিমেষেই দান 

 জনাব মাওলানা আমজাদ রেযা সাহেব (প্রকাশ মামু মিয়া সাহেব) বর্ণনা করেন, আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র খেদমতে একদা একটি পার্শ্বেল আসলাে। আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। পার্সেলটি খুলতেই দেখতে পেলাম শীতকালীন পরিধেয় একটি উন্নত বস্ত্র। আলা হযরত তা দেখে খুব খুশি হলেন। যারা সে সময়ে ঘরে উপস্থিত ছিলেন সকলেরই কাপড়টি পছন্দ হলাে। সকলেই প্রেরণকারী ও কাপড়ের প্রশংসা করলেন। সকলের অনুরােধে তিনি তা পরিধান করলেন। আমার (আমজাদ রেযা) অজান্তে হঠাৎ অনিচ্ছায় আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলাে যে, বাস্তবেই এটা চমৎকার পােশাক, যুবকদেরকে বেশি মানাবে। এটা শুনামাত্রই আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ঐ পােশাকটি আমাকে দিয়ে দিলেন। বললেন, তুমি এটা পরাে। অথচ, আমি এ কথাটি এটা পাওয়ার জন্য মােটেও বলিনি। তবে আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বরাবরই আমাকে সেটা দিয়ে দিলেন এবং বললেন আমার খুশি তাে এখানেই, কেনাে লজ্জা করছাে!(মাওলানা জফরুদ্দিন বিহারি রচিত "হায়াতে আ'লা হযরত", প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ৮৪,আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ২৫৮ )।


শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১


মক্কা শরিফে মেয়ে বিবাহের টাকা প্রেরণ:

 মক্কা শরিফ থেকে আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র কাছে জনৈক ব্যক্তি এ বলে চিঠি লিখলেন যে, হুযূর! আমার দু'মেয়ের বিবাহ একসাথে হচ্ছে, তাই অর্থনৈতিক দীনতায় পড়েছি। দয়া করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে কৃতার্থ করবেন। পরিশেষে আ'লা হযরত অনেক কষ্ট করে দু'মেয়ের জন্য সে সময়ের এক হাজার টাকা মক্কা শরিফে পাঠিয়ে দিয়েছেন।(মাওলানা জুফরুদ্দিন বিহারি রচিত "হায়াতে আ'লা হযরত", প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ৮৩, আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ২৫৮ )। 

বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১


তাফদ্বীলিয়্যাহ ফেরকার সাথে মােনাযারা 


 ১৩০০ হিজরি সনে বেরেলি, বদায়ুন, সানবাল ও রামপুরের শিয়ারা মাসআলায়ে তাফদ্বীলিয়্যাহ'র উপর আলা হযরত
ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র সাথে মােনাযারা বা সম্মুখ তর্কের ঘােষণা দিলাে। শিয়া মােনাযের হিসেবে তৎকালীন শিয়াদের বড় আলেম মৌলভি মুহাম্মদ
হাসান সানবাহলিকে ঠিক করা হলাে। এদিকে আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি গুরুতর অসুস্থাবস্থায় ডাক্তারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মােনাযারা গ্রহণ করলেন।
তিনি ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞার জবাবে বলেন- "মােনাযারা করে যদি মরতে হয়, মরতে রাজি। মােনাযারা অস্বীকার করে বেঁচে
থাকা? তা কখনাে হতে পারে না।"

শিয়ারা আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি কাছে লিখলাে, প্রশ্ন কি প্রথমে আমরা করবাে, না কি আপনি করবেন? তার জবাবে আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি শিয়া মােনাযের মৌলভি মুহাম্মদ হাসান সানবাহলির কাছে তিনটি প্রশ্ন লিখে পাঠিয়ে দিলেন।

লােকটি শিয়া মতবাদী হলেও বাস্তব সত্যকে অস্বীকার করতে পারলেন না। তিনি বললেন, কোনাে আলেম তাফদ্বীলিয়্যাহ (হযরত আলি রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে অপর তিন খলিফার উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া] আক্বিদা রেখে তাঁর জবাব দেয়া সম্ভব নয়।
পরিশেষে তিনি গাড়ী নিয়ে আ'লা হযরতের কাছে এসে আত্মসমর্পণ করলেন। পরবর্তীতে সে মাওলানা সাহেবের লিখিত কিতাব "শরহে আক্বায়েদে নসফি"র ব্যাখ্যাগ্রন্থ "নাজমুল ফারায়েদে" উপর্যুক্ত আক্বিদার ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের পক্ষে অভিমত পেশ করেন।
(মাওলানা আবদুল হাকিম শরফ কাদেরি রচিত "হায়াতে আ'লা হযরত", প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ৭৭। আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ২৭৯ )।