ঋণ প্রার্থীদেরকে সহজে ঋণ প্রদান
জনৈক ব্যক্তি আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)'র খেদমতে এসে তার ঋণগ্রহিতা ঋণ আদায় করছেনা বলে অভিযােগ করলেন। তিনি বললেন, "এ যুগে ঋণ প্রদান করে তা উসুল হবে বলে মনে করা একটি কঠিন কাজ। বিভিন্ন লোকের উপর আমার পনের শত টাকা ঋণ আছে। আমি তাে ঋণ প্রদানের সময় এ খেয়ালে দিয়েছি যে, আদায় হলে ভালাে; কিন্তু চাইবাে না। যখন কাউকে কর্জ দেন তখন হেবার নিয়ত করে দিবেন।
হাদিস শরিফে রয়েছে, যদি কারাে উপর কারো ঋণ থাকে, পরিশােধের নিদিষ্ট দিন অতিবাহিত হওয়ার পর প্রতিদিন ঋণ প্রদানকারীর আমলনামায় ঋণ সমপরিমাণ দানের সাওয়াব পাওয়া যাবে। এ অধিক সাওয়াবের আশায় আমি ঋণ দিয়েছি।
কারণ, পনেরশ টাকা দান করার সওয়াব আমি কোথা থেকে পাবাে?"(মাওলানা মােস্তফা রেযা বেরেলভী সংকলিত "আল মালফুজ", প্রাগুক্ত, খণ্ড: ০১, পৃষ্ঠা: ৩৮)।
আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)'র আয়ের ব্যবস্থা বহুমুখি হলেও প্রয়ােজনীয় সম্পদটুকু রেখে অতিরিক্ত সকল সম্পদই বিত্তহীনদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। এমনকি কিছু কিছু সময় বাৎসরিক প্রাপ্ত আয়ে যথেষ্ট না হওয়ায় তাঁকে অন্যদের থেকে ঋণ নিতে হতাে। অনেক সময় ডাক-টিকিট খরিদের টাকাও তাঁর কাছে থাকতাে না। যা আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)'র কড়া সমালােচক ওহাবি গুরু এহসান এলাহিও তার 'আল বেরলভিয়্যাহ গ্রন্থে স্বীকার
করেছে।(এইসান জহির এলাহি রচিত "আল বেরলভিয়্যাহ", প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ২৪)।
আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি
আলাইহি) বিশ্বাস করতেন, অর্থ সম্পদ মানুষের জীবনের জন্য অপরিহার্য বটে, তবে তা কখনােই মানুষের একমাত্র লক্ষ্যবস্তু হতে পারে না। তাই তাে তিনি গ্রাম থেকে আসা জমিদারীর টাকা পয়সা ও ধন সম্পদের কোনাে হিসাব রাখতেন না। কতাে আসলাে বা কতাে পেলাম, এই হিসাব তাঁর কাছে ছিলাে না। যা পেতেন সব মাকে দিয়ে দিতেন। এমনকি কিতাব খরিদের জন্যও মার কাছ থেকে নিতেন। (মাওলানা আবদুল হাকিম শরফ কাদেরি রচিত "আল বেরেলভিয়্যাহ কি তানকিদি জায়েবাহ", প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১০৮)।
তাইতাে তিনি বলেছেন, আমি কখনাে এক পয়সা যাকাত দেই নি। কারণ তাঁর উপর যাকাত ফরয হওয়ার মত নিসাব বছরান্তে জমা থাকতাে না। যা বুযুর্গানে দ্বীনের আদর্শ। আর তিনি হলেন সে সমস্ত বুযুর্গদের সাচ্চা অনুসারী। তিনি ছিলেন প্রকৃত ইমামে আহলে সুন্নাত ও জাতির অভিভাবক। তাঁর ত্যাগ, সেবা ও বদান্যতা কেবল বিশেষ সমাজ, দেশ বা কালের সীমায় আবদ্ধ নয়। এর প্রসার ব্যাপক।
তিনি প্রতি বৎসর সমগ্র আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতাদর্শীদের জন্য কুরবানি দিতেন। যারা কুরবানি করতে পারেন নি, পারছে না এবং পারবে না সকলের পক্ষ থেকে তাঁর কুরবানি চালু ছিলাে।(মাওলানা মােস্তফা রেযা বেরেলভী রচিত "আল মালফুজ", প্রাগুক্ত, খণ্ডঃ ০২, পৃষ্ঠা ১২১)।
দরিদ্রতা বিমােচনে শুধু যাকাত নয়, দরিদ্রতা দূর করার জন্য ফিতরা, সাদকাহ, খায়রাতসহ দুঃস্থ মানুষের যা দরকার তা দিয়ে সাহায্য করতেন। যেমনটি করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে মুমিনদেরকে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, 'উপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম'। কারণ অভাব অনেক সময় মানুষকে কুফরের দিকেও নিয়ে যায়। যাদের কাছে বিত্ত থাকা শর্তেও বিত্তহীনদের প্রতি দয়া পরবশ হয় না, তারা কৃপণ। হাদিস শরিফে আছে "দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর বন্ধু, আর কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহর শত্রু। যদিও সে হয় পরহেযগার।"
আর এর উদ্দেশ্য হলাে, সম্পদ যেন শুধু ধনীদের মধ্যে আবর্তিত না হয়। যেন চক্রাকারে ঘুরতে থাকে, ধনী থেকে গরিব আবার গরিব থেকে ধনী। অর্থনীতির দৃষ্টিতে- বিত্ত এভাবে যত বেশি হাত বদল হবে ততবেশি অর্থনীতি মজবুত হবে।
পক্ষান্তরে বিত্ত যতবেশি মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে বন্দি থাকবে অর্থনীতির গতি ততবেশি রুদ্ধ হয়ে উঠবে। এভাবে অর্থনীতির গতি অচল হতে থাকলে এক সময় কোনাে জনপদে মন্দা দেখা দেয়। তখন সে জনপদকে উন্নয়নশীল জনপদ বলা যায় না।
তাইতাে উন্নয়নের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে Michel p. Todaro তার Economics for Developing Word এ বলেন The reduction or elimination of poverty inequality and unemployment within the context of a growing economy.
একটি প্রবৃদ্ধিশীল অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে দারিদ্র, অসাম্য ও বেকারত্বের মাত্রা হ্রাস করা বা সম্পূর্ণ নিঃশেষ করাই হলাে উন্নয়ন। (দারিদ্র বিমোচনে ইসলাম,নুরুল ইসলাম সম্পাদিত,ই ফা বা, পৃষ্ঠা - ১০)।
আর এ উন্নয়নের ধারাকে অব্যহত রাখতেন আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মুক্ত হস্তে দান ও সেবার মাধ্যমে। সুতরাং 'তিনি যাকাত দেই নি বলে' যে অপবাদ দেয়া হয়েছে, তা তাঁর জীবনী সম্পর্কে না জানার কারণে।
(আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা -২৬০,
২৬১,২৬২)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন