শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১

'মাসলকে আ'লা হযরত' আহলে সুন্নাতের শীর্ষস্থানীয় আলিমদের দৃষ্টিতে

 

'মাসলকে আ'লা হযরত' আহলে সুন্নাতের শীর্ষস্থানীয় আলিমদের দৃষ্টিতে

'মাসলক' শব্দের শান্দিক অর্থ রাস্তা বা পথ, সুতরাং 'মাসলকে আ'লা হযরত' এর অর্থ আ'লা হযরতের পথ বা ত্বরীকা। আ'লা হযরতের পথ হচ্ছে ওই পথ যা পূর্বসূরীদের পথ; যেমন, ইমামে আযম হুযুর সৈয়্যদুনা গাউসে আযম, খাজা গরীবে নেওয়াজ রিদ্ওয়ানুল্লাহি তা'আলা আনহুম'র পথ। অতএব, 'মাসলকে আ'লা হযরত' বলতে কোন ক্ষতি বা নিষেধ নেই।

যখন মসলকে হানাফী ও সুন্নী নাম দিয়ে ইসলামের মৌলিক আক্বিদা ও বিশ্বাসের উপর আঘাত হেনে নতুন নতুন ফিতনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে লাগলাে, যখন ওহাবী দেওবন্দী, কাদিয়ানী ইত্যাদি ভ্রান্তদলগুলাে হানাফী দাবী করে তাদের মনগড়া আক্বিদা প্রচার করে সরলমনা মানুষকে ধোঁকা দিতে লাগলাে, মহান আল্লাহ্ মিথ্যা বলতে পারেন বললাে, কেউ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম- এর ইলমে গায়বকে অস্বীকার করলাে, কেউ কেউ নবী হওয়ার মিথ্যা দাবী করলাে, কেউ কেউ হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে শেষ নবী হওয়াকে অস্বীকার করলাে। এভাবে যখনই বিভিন্ন মাতাবলম্বী বিভিন্নভাবে সঠিক দ্বীন ইসলামের উপর বিভিন্নভাবে আঘাত হানতে শুরু করলাে তখন ওই সব বদমাযহাব থেকে সতর্ক করে এবং সব ধরনের উদ্ভূত ভ্রান্ত আক্বাইদ খণ্ডনে ইসলামের যে সঠিক রূপরেখা আ'লা হযরত উপস্থাপন করেছেন, তাই হলাে 'মসলকে আ'লা হযরত' মসলকে আ'লা হযরত আলাদা কোন মসলক বা মাযহাব নয়; বরং তিনিই আহলে সুন্নাত তথা ইসলামের সঠিক মতাদর্শই বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছেন। এটাই হচ্ছে সত্যিকার মুসলমানদের অনুসৃত পথ ও মত। নিম্নে এ প্রসঙ্গে কিছু অভিমত পেশ করা হলাে:


** কাছওয়াছা শরীফের শ্রেষ্ঠতম বুযুর্গ বলেন, আমার মাসলক শরীয়ত ও তরীকতে ওটাই যা হুযুর আ'লা হযরত মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রেযা খান ছাহেব বেরলভীর, (সুত্রঃ সুন্নি আওয়াজ, নাগপুর মে-জুন ১৯১৭]


** আহছানুল উলামা মারহারাভী রাহমতুল্লাহি আলায়হি বলেন, আমার যে মুরীদ 'মাসলকে আ'লা হযরত' থেকে বিন্দু পরিমাণ সরে যাবে আমি সেই মুরীদের উপর অসন্তুষ্ট, আমার কাছে তার কোন যিম্মাদারী নেই। আমার জীবনে এটা আমার উপদেশ এবং আমার ইন্তিকালের পর এটাই আমার ওসীয়ত যে, মাওলানা আহমদ রেযা ফাযেলে বেরলভীর মাসলকের উপর দৃঢ়ভাবে অটল থাকুন।[মাসিক আশরাফিয়া সায়্যিদিন নম্বর পৃ: ৭১৬]


** মুহাদ্দিসে আযম হিন্দ কাছওয়াছভী বলেন, প্রকৃত সুন্নীয়ত এবং হানাফী কারা তা চেনার জন্য ইসলামী বিশ্বেও শীর্ষস্থানীয় আহলে সুন্নাতের মাশায়েখ হযরাত 'মাসলাকে আ'লা হযরত' শব্দের প্রচলন শুরু করেন। এখন তা প্রকৃত সুন্নী ও নির্ভেজাল হানাফী হওয়ার আলামত। 'মাসলকে আ'লা হযরত' এই পরিভাষা বর্তমানে আসল সুন্নী হানাফী পরিচয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।


** মুবাল্লিগে ইসলাম হযরত মাওলানা শাহ আব্দুল আলীম সাহেব মিরাঠী রহমতুল্লাহি আলায়হি বলেন, আল হামদুলিল্লাহ, আমি মাসলকে আহলে সুন্নাতের উপর জিন্দা আছি আর মাসলকে আহলে সুন্নাত ওটাই যা মাসলকে আ'লা হযরতই।  যা আ'লা হযরতের কিতাবসমূহের মধ্যে রয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ ওই মােতাবেক আমার জীবন অতিবাহিত হয়েছে, এবং আলহামদুলিল্লাহ শেষ সময়েও ওই 'মাসলকে আ'লা হযরত' এর উপর হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াল্লাম-এর পবিত্র কদমে খাতেমাহ বিলখায়র হবে। [মাহনামা সুন্নী আওয়াজ জুলাই, সেপ্টেম্বর ১৯৯৭]


** হযরত মুহাদ্দিসে আযম পাকিস্তান বলেন, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন মিল্লাত আ'লা হযরত আযীমুল বরকত মাওলানা শাহ্ আহমদ রেযা খান ছাহেব রহমতুল্লাহি আলায়হির মাসলকের উপর দৃঢ়ভাবে অটল থাক, তাঁর মাসলকই সঠিক আহলে সুন্নাত ওয়ালজামাত। (মুহাদ্দিসে আযম পাকিস্তান, পৃ১০০] 


** রঈসুল কলম আল্লামা আরশাদুল কাদেরী আলায়হির রাহমাহ্ বলেন, একথা স্পষ্টই প্রমাণিত যে, আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা আহলে সুন্নাতের প্রকৃত দিশারী হওয়ার জন্যই তাঁর ব্যক্তিত্বর প্রতি মুসলমানগণ শ্রদ্ধাশীল এবং প্রকৃত আহলে সুন্নাতের পরিচয়ে তাঁকেই মানদণ্ড হিসেবে স্বীকার করেন। তিনি তাঁর বিশাল রচনা সম্ভারের মাধ্যমে হক ও বাতিলের মাঝে এমন স্পষ্ট পার্থক্য বিবৃত করেছেন যাতে তাঁর চিন্তা-চেতনা, ধ্যান ধারণা প্রকৃত আহলে সুন্নাতের নিশান হয়ে গেছে। এ কারণেই ভ্রান্ত দলগুলাের পার্থক্য নির্ণয়ে বেরেলী শব্দটি সংক্ষেপেই আমাদের পরিচয় বহন করে। আল্লাহ ও রাসুলের বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব এবং তাঁদের দুশমনদের সাথে দুশমনি পােষণ করার স্পষ্ট ব্যাখ্যাই হচ্ছে "মাসলকে আ'লা হযরত' [রাহনুমা আশরাফিয়া, সায়িদিন নম্বর পৃ: ৮৩৪]


** মুফতিয়ে আযম দিল্লী মুফতি মুহাম্মদ মাজহারুল্লাহ ছাহেব নকশবন্দী একটি চিঠিতে লিখেন, আশ্চর্য যে, হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত আ'লা হযরত বেরলভীর ফাতওয়া থাকা সত্ত্বেও আমার নিকট ফাতওয়া চাওয়া হয়। আমার এবং আমার বাপ দাদার মসলক হচ্ছে তাই যা আ'লা হযরত রহমতুল্লাহি আলায়হির । [রাহনুমা, সুন্নী আওয়াজ, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৯৫]


** আওলাদে রাসূল সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহমতুল্লাহি আলায়হি জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার ভিত্তিপ্রস্তর দেয়ার সময় বলেন, 'এই জামেয়ার ভিত্তি মসলকে আ'লা হযরত এর উপর রাখা হলাে। 

সুন্নী পরিচয়ে 'মসলকে আ'লা হযরত' এর শর্ত ভারত বিভক্তির পূর্বে যখন অল ইন্ডিয়া সুন্নি কনফারেন্স প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তখন সুন্নীর পরিচয় এভাবে তুলে ধরা হল, 'মা আনা আলায়হি ওয়া আসহাবী' অনুযায়ী হতে হবে, তাঁরা হচেছ আয়িম্যায়ে দ্বীন, খােলাফায়ে রাশেদীন, মাশায়েখে তরীকত এবং পরবর্তীদের মধ্যে হযরত শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী, হযরত বাহরুল উলূম ফিরিঙ্গী মাহল্লী, হযরত মাওলানা ফযলে হক খায়রাবাদী, মাওলানা শাহ্ ফযলে রসুল বদায়ূনী, হযরত মাওলানা ইরশাদ হােসাঈন রামপুরী, আ'লা হযরত মাওলানা শাহ আহমদ রেযা খাঁন ইত্যাদি বুযূর্গানে আহলে সুন্নাতের যেই মসলক তাই হচ্ছে সুন্নীয়ত।


এই কনফারেন্সে স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন, সদরুশ শরীয়হ মাওলানা আমজাদ আলী, মুফতিয়ে আযম হিন্দ মাওলানা শাহ মােস্তাফা রেযা খাঁন, সদরুল আফাযিল মাওলানা নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী, রঈসুল মুতাকাল্লেমীন মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ সাহেব, আমীরে মিল্লাত পীর জামা'আত আলী শাহ, মুবাল্লিগে ইসলাম মওলানা আব্দুল আলীম সাহেব, মুহাদ্দিস আযম পাকিস্তান মাওলানা সরদার আহমদ সাহেব, মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ আহমদ ক্বাদেরী, হযরত মুফতি মুহাম্মদ ওমর নঈমী মুরাদাবাদী সহ তরীকতের অনেক বুযুর্গ মাশায়েখ ও শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে আহলে সুন্নাত। [মাহনুমা সুন্নী আওয়াজ জুলাই -সেপ্টেম্বর ১৯৯৭)

উল্লেখিত বুযুর্গ ওলামায়ে কেরাম ছাড়াও বিশ্বের আরও অনেক আলেম ওলামা, পীর-মাশায়েখগণ 'মাসলকে আ'লা হযরত' এর উপর ঐক্যমত পােষণ করেছেন। এবং মাসলকে আ'লা হযরতের উপর অটল থাকার জন্য জোরালােভাবে নসীহত ও ওসিয়ত করেছেন। আল্লাহ পাকের দরবারে ফরিয়াদ, আমরা সুন্নী মুসলমানদেরকে যেন 'মসলকে আ'লা হযরতের' উপর অটল রাখেন, আমিন বেহরমতি সায়্যিদিল মুরসালীন। > মুহাম্মদ রিদওয়ান কাদেরী

                                              (মাসিক তরজুমান,১৪৩৪হি:)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন