আ'লা হযরতের উপর অপবাদের জবাব। পর্ব:-৬৫
#মুহাম্মদ_আলমগীর।
বিষয়বস্তুকে প্রয়োজনের খাতিরে একটু পরিবর্তন করতে হলো।
তৎকালীন বৃটিশ শাসিত ভারত দারুল ইসলাম নাকি দারুল হরব,তা নিয়ে ঐসময়কার উলামাগণের মতানৈক্য ছিলো।কেউ কেউ তৎকালীন ভারতবর্ষকে দারুল হরব বলে ঘোষণা করেছিলেন।যেমন ১৩শ হিজরীর মুজাদ্দিদ শাহ্ আব্দুল আযিয মুহাদ্দিস দেহলভী রাহঃ।
কেউ কেউ তৎকালীন ভারতবর্ষকে দারুল ইসলাম বলেছিলেন।এই তালিকায় অনেকের নামই আছে,তবে বালাকোটি-ওহাবী সম্প্রদায়ের মুখপাত্র ইতরশ্রেণীর প্রাণী যার বুনিয়াদই হলো মিথ্যার উপর আইনুল হুদা বলে যে ব্যক্তি নিজেকে পরিচয় দেয়।সে এপর্যন্ত বেশ কয়েকবার আ'লা হযরত ১৪শ হিজরীর মুজাদ্দিদ ইমাম শাহ্ আহমদ রেযা হানাফী কাদেরী রাহঃ কর্তৃক দারুল ইসলাম বলা নিয়েই ফিতনা চড়াচ্ছে। যদিও বার বার তাকে তারই সম্প্রদায়ের লোকদের এবিষয়ক ফতোয়ার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।কিন্তু সে কখনই সেদিকে কর্ণপাত করেনি।একবারতো আরো দুই পান চিবুনে লোক নিয়েও ফিতনার লাইভ করেছিলো।
বৃটিশশাসিত ভারত যদি দারুল হরব সর্বসম্মতিক্রমে হতো,আর একজন ছাড়া অন্যকেউ এই মতামতের বিপরীত মত দিতেন;তাহলে আমরা বুঝতাম যে,এটা তার সৎ কোনো উদ্দেশ্য হবে।কিন্তু বিষয়টা সেরকম কিছুই নয়,বরং তার মতলব হলো তাদের নিজেদের বৃটিশ চাটুকারীতা আর বৃটিশ নিমকখোরীর ইতিহাসকে কৌশলে মানুষের দৃষ্টি থেকে আড়াল করে রাখা।
একটি কথা উল্লেখ করছি তাতেই সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে।
তাদের দাবী হলো তাদের গুরু সৈয়দ আহমদ রায় বেরলভীর পীরও মুরশিদ হলো শাহ্ আব্দুল আযিয দেহলভী রাহঃ।এবং তিনি তাদের গুরুকে খিলাফত দিয়েছেন।
এখন সৈয়দ আহমদ রায় বেরলভীর খলিফা হলো কারামত আলী জৌনপুরী।এই কারামত আলী জৌনপুরী তার লিখিত যখিরায়ে কারামতে নিজেই শাহ্ আব্দুল আযিয ঘোষিত দারুল হরবকে দারুল ইসলাম বলে ঘোষণা করেছে।অর্থাৎ খোদ আপন দাদাপীরের ফতোয়ার বিপক্ষে ছিলো তার এই ফতোয়া।সেখানে জৌনপুরী সাহেব এটাও লিখেছে যে,যারা দারুল হরব বলে তারা ওহাবী।তার পরিস্কার অর্থ দাড়ালো তার দাদাপীর শাহ্ আব্দুল আযিয ওহাবী।
কারামত আলী সাহেব লিখেছে "কোনো সন্দেহ ছাড়াই হিন্দুস্তান দারুল ইসলাম"।(যখিরায়ে করামত ৩য় খন্ড,১৫৫পৃ.)
এছাড়াও আইনুল খারেজীদের বালাকোটি ভাই রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী,মাওলানা আব্দুল হাই লাখনৌভী,কাশেম নানুতুবী,মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী,আনোয়ার শাহ্ কাশ্মীরী,আশরাফ আলী থানবীসহ অনেক বালাকোটি হযরত তৎকালীন হিন্দুস্তানকে দারুল ইসলাম ঘোষণা দিয়েছিলো।আজপর্যন্ত ফিতনাবাজ খারেজী আইনুল কাজ্জাব সেদিকে মোটেও যায়নি।সে বার বার শুধু একজনের বিষয়েই ফিতনা ছড়িয়ে যাচ্ছে।
তারা দাবী করছে ইমাম আহমদ রেযা রাহঃ বৃটিশের দালাল ছিলেন।কিন্তু প্রমাণ ছাড়া।
অথচ তাদের কাছে যদি আমরা জিজ্ঞেস করি যে,ইমাম আহমদ রেযা রাহঃ দালাল হলে তার প্রমাণ কি?
আইনুল কাজ্জাবের একমাত্র পূজি হলো ঐ "ইলমামুল আল্লাম বিআন্না হিন্দুস্তান দারুল ইসলাম"কিতাবটি।অথচ কিতাবটি লেখা হয়েছে ১২৯৮হিজরীতে বদায়ূন থেকে মির্জা আলী বেগ আ'লা হযরতের কাছে প্রশ্ন করেছেন সেটার জবাব দিতে গিয়ে এই কিতাব রচনা করেছেন।
তিনি দারুল ইসলাম বলেছেন কারণ বালাকোটিরা হিন্দুদের সাথে মিলে সুদ ব্যবসাকে একদিকে জায়েয করে নিয়েছিলো,অন্যদিকে সাধারণ মুসলমানকে এদেশ থেকে হিজরত করে হিন্দুদের জন্য খালি করে দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত ছিলো।কিন্তু নিজেরা হিজরতের নামগন্ধও নেয়নি।
তারা গান্ধিকে মসজিদের মিম্বরে বসিয়ে দিয়েছিলো।তাকে পয়গাম্বর পর্যন্ত বানিয়ে দিয়েছিলো।ইমাম আহমদ রেযা রাহঃ কেবল হিন্দুদের সাথে মিলে বালাকোটি হযরতরা যে চক্রান্তে লিপ্ত ছিলো মানুষকে সেবিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।আমি এখানে ঐবিষয়ে আর বেশি কিছু লিখছিনা পরে লিখবো।
আইনুল কাজ্জাব দাবী করেছে ইমাম আহমদ রেযা রাহঃ নাকি ইমাম আযম আবু হানিফার কথাকে জালিয়াতী করেছেন।কোনো মায়ের ছেলে নাকি জন্মগ্রহণ করেনি যে,হিন্দুস্তানকে ইমাম আযম দারুল ইসলাম বলেছেন বলে প্রমাণ করতে পারে!
এখন আসি জালিয়াতীর খন্ডনে।সে! ই'লাম" জেনে রাখো এটা উল্লেখ করে বলেছে এটা জালিয়াতী।এবং ইমাম আযমের যে মতামত ইমাম আহমদ রেযা রাহঃ কোড করেছেন,সেটাকেও বলেছে মিথ্যাও জাল!
ইমাম আযম ঐসময় পৃথিবীতে ছিলেননা বিধায় তিনি কিকরে এটা বলবেন যে,এই এইভাবে ভারত দারুল ইসলাম?বরং ইমাম আহমদ রেযা রাহঃফতোয়ায়ে আলমগীরী থেকে ইমাম আযমের মতামতকে কোড করেছেন।তাহলে ফতোয়ায়ে আলমগীরীই জাল?তানাহলে ইমাম আহমদ রেযা রাহঃ'র উদ্ধৃতি কেনো জাল হলো?
ইমাম আহমদ রেযা রাহঃ ফতোয়ায়ে আলমগীরীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে,ইমাম আবু হানিফার ফায়সালা অনুসারে ভারত দারুল ইসলাম।অর্থাৎ ইমাম আযম এবং ওনার সাগরেদগণ দারুল হরবও দারুল ইসলামের যে শর্ত উল্লেখ করেছেন সে হিসেবে হিন্দুস্তান দারুল ইসলাম হবে।
নীচে ফতোয়ায়ে আলমগীরীর উক্ত এবারত আমি তুলে ধরলাম,আর তার অনুবাদটাও আইনুল কাজ্জাবের পছন্দের ইসলামীক ফাউন্ডেশনের অনুবাদটাই দিলাম।
اعْلَمْ أَنَّ دَارَ الْحَرْبِ تَصِيرُ دَارُ الْإِسْلَامِ بِشَرْطٍ وَاحِدٍ، وَهُوَ إظْهَارُ حُكْمِ الْإِسْلَامِ فِيهَا.
قَالَ مُحَمَّدٌ رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى فِي الزِّيَادَاتِ: إنَّمَا تَصِيرُ دَارَ الْإِسْلَامِ دَارَ الْحَرْبِ عِنْدَ أَبِي حَنِيفَةَ رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى بِشُرُوطٍ ثَلَاثَةٍ أَحَدُهَا: إجْرَاءُ أَحْكَامِ الْكُفَّارِ عَلَى سَبِيلِ الِاشْتِهَارِ وَأَنْ لَا يُحْكَمَ فِيهَا بِحُكْمِ الْإِسْلَامِ، وَالثَّانِي: أَنْ تَكُونَ مُتَّصِلَةً بِدَارِ الْحَرْبِ لَا يَتَخَلَّلُ بَيْنَهُمَا بَلَدٌ مِنْ بِلَادِ الْإِسْلَامِ، وَالثَّالِثُ: أَنْ لَا يَبْقَى فِيهَا مُؤْمِنٌ، وَلَا ذِمِّيٌّ آمِنًا بِأَمَانِهِ الْأَوَّلِ الَّذِي كَانَ ثَابِتًا قَبْلَ اسْتِيلَاءِ الْكُفَّارِ لِلْمُسْلِمِ بِإِسْلَامِهِ وَلِلذِّمِّيِّ بِعَقْدِ الذِّمَّةِ، وَصُورَةُ الْمَسْأَلَةِ عَلَى ثَلَاثَةِ أَوْجُهٍ إمَّا أَنْ يَغْلِبَ أَهْلُ الْحَرْبِ عَلَى دَارٍ مِنْ دُورِنَا أَوْ ارْتَدَّ أَهْلُ مِصْرٍ وَغُلِبُوا وَأَجْرَوْا أَحْكَامَ الْكُفْرِ أَوْ نَقَضَ أَهْلُ الذِّمَّةِ الْعَهْدَ، وَتَغَلَّبُوا عَلَى دَارِهِمْ، فَفِي كُلٍّ مِنْ هَذِهِ الصُّوَرِ لَا تَصِيرُ دَارَ حَرْبٍ إلَّا بِثَلَاثَةِ شُرُوطٍ، وَقَالَ أَبُو يُوسُفَ وَمُحَمَّدٌ- رَحِمَهُمَا اللَّهُ تَعَالَى- بِشَرْطٍ وَاحِدٍ لَا غَيْرَ، وَهُوَ إظْهَارُ أَحْكَامِ الْكُفْرِ، وَهُوَ الْقِيَاسُ، ثُمَّ هَذِهِ الدَّارُ إذَا صَارَتْ دَارَ الْحَرْبِ بِاجْتِمَاعِ الشُّرُوطِ الثَّلَاثَةِ لَوْ افْتَتَحَهَا الْإِمَامُ، ثُمَّ جَاءَ أَهْلُهَا قَبْلَ الْقِسْمَةِ أَخَذُوهَا بِغَيْرِ شَيْءٍ، وَبَعْدَ الْقِسْمَةِ بِالْقِيمَةِ، وَلَوْ افْتَتَحَهَا الْإِمَامُ عَادَتْ إلَى الْحُكْمِ الْأَوَّلِ، الْخَرَاجِيُّ يَصِيرُ خَرَاجِيًّا وَالْعُشْرِيُّ يَصِيرُ عُشْرِيًّا إلَّا إذَا كَانَ الْإِمَامُ وَضَعَ عَلَيْهَا الْخَرَاجَ قَبْلَ ذَلِكَ، فَإِنَّهَا لَا تَعُودُ عُشْرِيَّةٍ هَكَذَا فِي السِّرَاجِ الْوَهَّاجِ
(ফতোয়ায়ে আকমগীরী,২য় খন্ড,২৫৬পৃ.দারুল কুতুব ইলমিয়া। কিতাবুসসিয়র,পঞ্চম পরিচ্ছেদ!)
অনুবাদ আমার নয় বরং ইসলামীক ফাউন্ডেন অনুদিত ৩য় খন্ড ৬০৪পৃষ্ঠা থেকেই দিলাম-
👉২৮. মাসআলা : উল্লেখ্য যে, এক শর্ত সাপেক্ষে দারুল হারব দারুল ইসলামে পরিণত হয়ে থাকে। তা হল, ইসলামের বিধি-বিধান ও অনুশাসন তথায় জারী হওয়া। ইমাম মুহাম্মদ (র) যিয়াদাত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে ইমাম আবূ হানীফা (র) এর মতে তন শর্ত সাপেক্ষে দারুল ইসলাম দারুল হারবে পরিণত হয়ে থাকে। (১) তথায় প্রকাশ্যে কুফরী অনুশাসন জারী হওয়া এবং ইসলামী অনুশাসন জারী না থাকা। (২) সে দেশটি অপর কোন দারুল হারবের সাথে এমনভাবে মিলিত থাকা যে, এতদুভয়ের মাঝখানে কোন ইসলামী রাষ্ট্র নেই (৩) সে দেশে এমন কোন মুসলমান এবং যিম্মী না থাকা যারা কাফিরদের বিজয়ী হওয়ার পূর্বে আমান (নিরাপত্তা) প্রাপ্ত হয়েছিল। অর্থাৎ মুসলমান আমানপ্রাপ্ত হয়েছিল ইসলামের কারণে এবং যিম্মী আমানপ্রাপ্ত হয়েছিল যিম্মী চুক্তির কারণে। উপরোক্ত মূলনীতির সূরতে মাসআলা তিনভাবে হতে পারে। (১) হারবী লোকদের কোন ইসলামী দেশের উপর বিজয়ী হয়ে যাওয়া (২) কোন শহরের লোকদের এ পরিমাণ মুরতাদ হয়ে যাওয়া যে, শহরবাসীর উপর তাদের বিজয়ী হয়ে সেখানে কুফরী অনুশাসন জারী করতে সক্ষম (৩) অথবা যিম্মী লোকদের চুক্তি ভঙ্গ করে ঐ দেশীয় লোকদের উপর জয়ী হয়ে যাওয়া। উপরোক্ত অবস্থাসমূহের কোন অবস্থাতেই কোন দেশ দারুল হারবে পরিণত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ তিন শর্তের বাস্তবায়ন হয়। ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ (র) বলেন, শুধুমাত্র এক শর্তের ভিত্তিতেই কোন দেশ দারুল হারবে পরিণত হয়ে থাকে। আর তা হল, তথায় কুফরী অনুশাসন জারী হওয়া। এটিই কিয়াসের দাবী তিন শর্ত পাওয়া যাওয়ার ভিত্তিতে কোন দেশ দারুল হারবে পরিণত হওয়ার পর যদি কোন মুসলিম রাষ্ট্র প্রধান সে দেশ জয় করে এবং পরে সেখানকার অধিবাসীরা সেখানে আসে এবং গনীমতের মাল বণ্টনের আগে আসে তাহলে তারা তাদের মালামাল বিনিময় ছাড়াই নিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু বণ্টনের পর আসলে মূল্য পরিশোধ করে নিতে হবে। মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক কোন দেশ বিজিত হওয়ার পর সেখানকার উশরী জমি উশরী জমি হিসাবেই থাকবে এবং খারাজী ভূমি খারাজী ভূমি হিসাবেই বাকী থাকবে। কিন্তু রাষ্ট্র প্রধান যদি পূর্বাহ্লেই সে দেশের উপর খারাজ আরোপ করে তাহলে ঐ দেশের ভূমি আর উশরী ভূমিতে পরিণত হবে না (আসৃসিরাজুল ওয়াহহাজ)।
ইমাম আযমও ওনার শাগরীদগণ দারুল ইসলাম আর দারুল হরব হবার যে মাপকাটি দিয়েছেন সে হিসেবে ভারতবর্ষ দারুল হরব নয় বরং দারুল ইসলাম।শর্তগুলো যেহেতু উল্লেখ করা হয়েছে সচেতন সম্প্রদায় ভেবে দেখুন এখানে কোথাও মিথ্যার কিছু আছে কিনা!
এবার আপনারাই বিচার করুন জালিয়াতীর তোহমত কার বিরুদ্ধে যায়!
ইনশাআল্লাহ্! সময়মতো বিস্তারিত আলোচনা লিখবো।
🔁গতপর্বের লিঙ্ক:-https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=315801426934986&id=100055153927069
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন