শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১


আ'লা হযরতের উপর অপবাদের জবাব। পর্ব:- ৬৬


#মুহাম্মদ_আলমগীর।


প্রসঙ্গ: হিন্দুস্থান কি ‘দারুল ইসলাম’, না ‘দারুল হারব’? 


‘দারুল ইসলাম' ও 'দারুল হারব' উভয়টি আরবী শব্দ । পরবর্তীতে উর্দু এবং ফার্সী ভাষায়ও শব্দ দু'টি ব্যবহৃত হতে থাকে। এ দু'টি শব্দের যে কোন একটি রাজনৈতিকভাবে যেমন কোন রাষ্ট্রের বিশেষণ, তেমনি ইসলামের বহু অনুশাসন ও বিধি-বিধান এ দু'টি বিশেষণ অনুসারে কার্যকর হয়। তাই এ দু'টি বিশেষণের কোন্‌টি, কোন রাষ্ট্রের জন্য প্রযোজ্য, তা নির্ণয়ের জন্য এ দু'টির সংজ্ঞা সম্পর্কে পরিচিত হওয়া আবশ্যক বৈ-কি।

এ দু'টি বিশেষণ সম্পর্কে পরবর্তীতে যথাস্থানে বিস্তারিত আলোচনা হবে। প্রথমে সংক্ষেপে বলা যায়- ১. 'দারুল ইসলাম' হচ্ছে ওই রাষ্ট্র, যাতে ইসলামী সালতানাৎ বলবৎ থাকে। সূত্র. ফী-রূযুল লুগাত ]

আর 'দারুল হারব' হচ্ছে ওই রাষ্ট্র, যেখানে অমুসলিমদের শাসন প্রতিষ্ঠিত এবং মুসলমানদের ধর্মীয় ফরয ইত্যাদি কর্মকাণ্ড পালনে বাধা দেওয়া হয়, বা নিষিদ্ধ। [সূত্র, প্রাগুক্ত)

একথা সর্বজনবিদিত যে, বাংলা-পাক-ভারত উপমহাদেশে দীর্ঘকাল যাবৎ মুসলমানদের শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিলো। তারপর দীর্ঘদিন যাবৎ ইংরেজদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এ উপমহাদেশে । তারপর (১৯৪৭ইং) হিন্দুস্থান (ভারত) ও পাকিস্তান দু'টি রাষ্ট্র স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর (১৯৭১ইং) পাকিস্তান বিভক্ত হয়ে ‘বাংলাদেশ’ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে ।

উল্লেখ্য, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ দু'টি মুসলিম রাষ্ট্র (দারুল ইসলাম) তাতে কারো দ্বিমত নেই; কিন্তু যেহেতু ভারতে তার স্বাধীনতা লাভের পূর্বে দু'শতাব্দিকাল ইংরেজদের শাসন এবং স্বাধীনতা লাভের পরে হিন্দুদের শাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, সেহেতু 'হিন্দুস্থান'কে কি 'দারুল ইসলাম’ বলা যাবে, না 'দারুল হারব' বলতে হবে? এটা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। এ প্রসঙ্গে দেখা যায়, এক শ্রেণীর আলিম তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়ে শরীয়তের আলোকে অকাট্যভাবে যুগাস্তকারী মীমাংসা (ফাতাওয়া) দিয়েছেন- যথাসময়ে। এ শেষোক্ত বিজ্ঞ ওলামা-ই কেরামের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ও আদর্শ ইমামের ভূমিকা পালন করেছেন আমাদের ইমাম-ই আহলে সুন্নাত আ'লা হযরত শাহ্ আহমদ রেযা বেরলভী রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু। তিনি ভারতকে 'দারুল ইসলাম' হিসেবে সাব্যস্ত করে ফাতাওয়া প্রণয়ন করে তা প্রকাশ করলেন। কিন্তু ফাতাওয়াটি প্রকাশিত হয়েছে ওনার ইন্তিকালের ৬বছর পর! লেখা হয়েছিলো ইন্তিকালের ৩৪বছর পূর্বে। প্রকাশের পর তখন তা নিয়ে বিরুদ্ধবাদীরা হৈ-চৈ করলেও এ প্রসঙ্গে আ'লা হযরতের ফাতাওয়া বিশুদ্ধই প্রমাণিত হয়েছে ।

উল্লেখ্য, পাকিস্তান ও ভারতের স্বাধীনতা লাভের দীর্ঘ আন্দোলনের পরম্পরায় 'খেলাফত আন্দোলন' ও 'অসহযোগ আন্দোলন' (যথাক্রমে ‘তাহরীক-ই খিলাফত’ ও ‘তাহরীক-ই তরকে মু'আমালাত') (১৯১৯-১৯২০) অতি উল্লেখ্যযোগ্য । এ দু' আন্দোলনের সময়ে আ'লা হযরতের সুচিন্তিত, বাস্তবধর্মী ও দুরদর্শিতালব্ধ অবস্থান ও নির্ভুল মতামত বা ফাতাওয়াকে কেন্দ্র করে বিরুদ্ধবাদীরা তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধিতার ঝড় তুলেছিলো। বস্তুত এটা রাজনৈতিক আবেগ প্রবণতার যুগ ছিলো। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে আ'লা হযরতের খলীফাগণ, সদরুল আফাযিল সৈয়্যদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী ও তাজুল ওলামা মাওলানা মুফতী ওমর নঈমী আলায়হিমুর রহমাহ্ প্রমুখ তাঁদের রাজনৈতিক মেধা, উন্নত চিন্তা ও বোধশক্তি এবং দুরদর্শিতার প্রমাণ রেখে গিয়েছিলেন। তখন তাঁদের ওই ভূমিকাকে যতটুকু মূল্যায়ন করা হয়েছিলো, তার চেয়ে বেশী মূল্যায়ন করতে বাধ্য হয়েছেন পরবর্তী তথা বর্তমানকার ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ । তাঁরা নির্দ্বিধায় ঔসব ওলামা-ই দ্বীনের দুরদর্শিতা ও পরিণাম দর্শিতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ।

একই পরম্পরায় ওই যুগে আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরলভী আলায়হির রাহমার একটি ফাতাওয়া ‘ই’লামুল আ’লাম বিআন্না হিন্দুস্থান দারুল ইসলাম’ (বিজ্ঞজনদের জ্ঞাতার্থে নিঃসন্দেহে হিন্দুস্থান 'দারুল ইসলাম) নামে (১৩০৬হি./১৮৮৮ইং, মুদ্রণে 'হাসানী প্রেস, রেবিলী। প্রকাশিত হয়; যখন হিন্দুস্থানের একশ্রেণীর আধিঃ হিন্দুস্তানকে 'দারুল হারব' সাব্যস্ত করে সুদকে জায়েয।

সাব্যস্ত করেছিলেন । তাদের খণ্ডনে তিনি তাঁর উক্ত ফাওয়ায় লিখেছিলেন 

আ'লা হযরত লিখছেন-

" ওইসব লোক সম্পর্কে চিন্তা করতেও আশ্চর্যবোধ হয়, যারা সুদকে বৈধ করার জন্য, যা কোরআনের অকাট্য আয়াতসমূহ (প্রমাণাদি) দ্বারা হারাম বলে সাব্যস্ত এবং এর বিরুদ্ধে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তির হুমকি এসেছে, এ দেশকে 'দারুল হারব' সাব্যস্ত করেছেন, আর শক্তি ও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও (এদেশ) থেকে হিজরত করার খেয়ালটুকু পর্যন্ত অন্তরে আনেননি! এ দেশ যেন ওই দিনের জন্য 'দারুল হারব' হয়েছিলো যে, তাতে সুদের মজা লুফে নেবেন এবং পূর্ণ আরামে প্রিয় মাতৃভূমিতে পরিতুষ্ট হয়ে ঘুরে বেড়াবেন! আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ ফরমাচ্ছেন, “তোমরা কি কিতাব' (ক্বোরআন মজীদ)-এর একাংশের উপর ঈমান রাখছো, আরেকাংশের সাথে কুফর করছো?”[সূত্র ই'লামুল আ'লাম, পৃ.৭, ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী]

 প্রকাশ থাকে যে, ইমাম আহমদ রেযা বেরলভী আ'লা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলায়হি নিছক সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে (সুবিধাবাদীর মতো) ফাতাওয়া আরোপের ঘোর বিরোধী ছিলেন। অর্থাৎ যখন সমাজ তাদের সুবিধানুসারে সুদ নিতে চাচ্ছিলো, তখন হিন্দুস্থানকে ‘দারুল হারব’ সাব্যস্ত করে নিলো, আর যখন রাজনৈতিক সুবিধা ভোগের নিমিত্তে মুসলমানদেরকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করতে চাইলো তখন আবারো এ দেশকে ‘দারুল হারব' বলে সাব্যস্ত করে নিলো! এ কেমন আবূ লাহাবসূলভ পদক্ষেপ?

[সূত্র, 'হায়াতে মাওলানা আহমদ রেযা খান বেরলভী, হাশিয়া, পৃ.১০৫, প্রফেসর ড. মাস'উদ আহমদ ] 

হিন্দুস্তানকে 'দারুল ইসলাম' সাব্যস্ত করার ফলে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এ মহান মুফ্তী চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণের দৃষ্টিশক্তি ধারণ করেন, হিন্দুস্থানে ইংরেজদের দখলদারিত্বকে জবরদস্তিমূলক মনে করেন, মুসলমানদেরকে তিনি এ অধিকার দিচ্ছেন যে, তাঁরা সাধ্যানুসারে দেশের স্বাধীনতার জন্য চেষ্টা করবেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক হচ্ছে- এ অবস্থানের বিরুদ্ধবাদীদের একথা বুঝে আসছে না যে, হিন্দুস্থানকে 'দারুল হারব' সাব্যস্ত করলে নিজেদের অধিকার থেকে নিজেরাই সরে দাঁড়াতে হয়। কারণ, তাদের ফাতাওয়া মতে, এমতাবস্থায় হিজরত করা ফরয হয়ে যায়, নিজেদের মাতৃভূমিকে মুক্ত করার অবকাশটুকু থাকছে না। আশ্চর্য! দীর্ঘ এক হাজার বছর যাবৎ এদেশে রাজত্ব করে মুসলমানগণ এত তাড়াতাড়ি নিজেদের অধিকার থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়ার পক্ষে না বিবেক সায় দেয়, না এটা ন্যায়বিচারসম্মত হয়। তদুপরি এ প্রশ্নও মনে আসে যে, ইংরেজদের শাসনামলে যদি হিন্দুস্থান 'দারুল হারব' হতে পারে, তবে বর্তমানে হিন্দুদের রাজত্বের ফলে সেটা মুসলমানদের জন্য 'দারুল হারব' হবে না কেন? অথচ ইসলামী রীতিনীতি ও অনুশাসনাদি পালনের ক্ষেত্রে ইংরেজদের শাসনামলে যতটুকু আযাদী ছিলো, এখন ততটুকু আযাদী আছে কিনা তাও অবস্থাদৃষ্টে সুস্পষ্ট হয়ে যায় । অর্থাৎ ততটুকু স্বাধীনতা আছে বলে মনে হবে না। এ থেকে বুঝা গেলো যে, যারা হিন্দুস্তানকে তখন 'দারুল হারব' বলে সাব্যস্ত করেছিলো, তারা নিছক সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সুবিধা ভোগের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। এটা অন্যদিকে অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে মুসলমানদের ক্ষতিই করেছিলো ।

আ’লা হযরতের এ ফাতাওয়া আরোপের প্রেক্ষাপট কি ছিলো?

১২৯৮হি/১৮৮০খ্রিস্টাব্দে বদায়ূনে মির্যা আলী বেগ আ'লা তিনটি প্রশ্নের জবাব চেয়েছিলেন । আ'লা হযরত তার জবাবে ‘ই’লামুল আ'লাম বিআন্না হিন্দুস্থান দারুল ইসলাম' শিরোনামে একটি ফাট্ওয়া পুস্তক প্রণয়ন করলেন । প্রশ্নগুলো নিম্নরূপঃ

হযরত আহমদ রেযা বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি থেকে

প্রথম প্রশ্ন: হিন্দুস্তান কি 'দারুল ইসলাম’ না ‘দারুল হারব’? দ্বিতীয় প্রশ্ন: বর্তমান যুগের ইহুদী ও খ্রিস্টানরা কি কিতাবী, না মুশরিক?

তৃতীয় প্রশ্ন: বিদ'আতীদের প্রসঙ্গে বিধান কি?

সুতরাং আ'লা হযরত প্রথম প্রশ্নের জবাবে লিখেছেন ‘‘আমাদের ইমামে আ'যম আবূ হানিফা রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, বরং 'ওলামা-ই সালাসাহ্' রাহিমাহুমুল্লাহু আজমা'ঈন-এর মাযহাবানুসারে হিন্দুস্থান হচ্ছে 'দারুল ইসলাম; ‘দারুল হারব' মোটেই নয়। কারণ, কোন 'দারুল

ইসলাম' 'দারুল হারব' হবার জন্য, আমাদের ইমাম-ই আযম, ইমামগণের ইমাম হযরত আবূ হানীফা রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর মতে, তিনটি বিষয় থাকা আবশ্যক এক. সেখানে শিকী বিধান প্রকাশ্যভাবে জারী করা হবে ।

দুই. ইসলামী শরীয়তের বিধানাবলী মোটেই জারী হতে পারবে না। সাহিবাঈনের মতে এতটুকু যথেষ্ট । কিন্তু এখানে, আল্লাহরই প্রশংসাক্রমে, এমনটি মোটেই মওজুদ নেই।

তিন. বিধানাবলীর বিবেচনায় জনসাধারণকেও দু'ভাগে ভাগ করা হয়- 'দারুল ইসলাম' ও 'দারুল হারব’ । হিন্দুস্থানে যখন ইসলামী শাসন ক্ষমতা ছিলো, তখন হিন্দুস্থান তো 'দারুল ইসলাম’ ছিলোই; কিন্তু যখন হিন্দুস্থানের উপর ইংরেজদের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো, তখন আলিমদের মধ্যে এ আলোচনা ছড়িয়ে পড়লো এখন হিন্দুস্থান কি ‘দারুল ইসলাম’, না 'দারুল হারব’! সুতরাং আলিমদের একটি দল ফাতাওয়া দিলেন যে, এখন হিন্দুস্থান না দারুল ইসলাম, না দারুল হার্ব; বরং ‘দারুল আমন' (নিরাপত্তার দেশ); যেমন- মুফতী কেফায়ত উল্লাহ্ সাহেব দেওবন্দী। তিনি হিন্দুস্থানকে ‘দারুল আমন' সাব্যস্ত করলেন। মুফতী আনওয়ার শাহ্ কাশমীরী দেওবন্দীও গবেষণা করে বললেন, (আমাদের দেশ যদি দেশই হয়, তবে এটা 'দারুল আমান ই। [মুহাজির নং-৩৪]


উল্লেখ্য, ফিক্হ্ শাস্ত্রের কিতাবাদির আলোকে বলতে গেলে, এ মাসআলায় অনেক সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়েছে; কিন্তু ‘দারুল আমান' নামের কোন দেশের সন্ধান কোন কিতাবে নেই । ফক্বীহ্গণের এ বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, জনসাধারণ হয়তো 'দারুল ইসলাম'-এর হবে, অথবা 'দারুল হারব'-এর । কিছু সংখ্যক আলিম অবশ্য, হিন্দুস্থানকে 'দারুল হারব' বলেছেন । যেমন। শাহ্ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী হিন্দুস্থানকে ‘দারুল হারব' বলে ফাতাওয়া দিয়েছেন । [ফাতাওয়া-ই আযীয়্যিাহ্: পৃ. ১৬]

কিছু সংখ্যক আলিম কোন সিদ্ধান্তই দেননি; বরং সারা জীবন সংশয়ে ভুগেছেন।

মৌলভী রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেব। তিনি তাঁর ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া'য় লিখেছেন “হিন্দুস্তান ‘দারুল হারব’ কিনা তাতে আলিমদের মতবিরোধ আছে গবেষণায় একথা প্রকাশ পায় যে, হিন্দুস্থানের অবস্থা ভাল হয়নি।"

[সূত্র, ফাতাওয়া-ই রশীদিয়াহ্, পৃ. ৫০৩) 

অথচ মাসআলা (বিষয়)টি একেবারে সুস্পষ্ট। সাধারণভাবে প্রচলিত ফিক্‌হর কিতাবাদি পাঠ-পর্যালোচনা করলে একথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, হিন্দুস্থান ইংরেজদের শাসনামলেও এবং বর্তমানেও ‘দারুল ইসলাম'। হিন্দুস্থান সম্পর্কে কিছুলোক এ বুনিয়াদ কিংবা দৃষ্টিকোণ থেকে ধোঁকায় পড়েছেন যে, তাঁরা মনে করেন- কোন রাষ্ট্র দারুল ইসলাম হবার জন্য সেখানে মুসলমানদেরই শাসন ক্ষমতা থাকা জরুরী।

বস্তুত এখানে দু'টি অবস্থা পৃথক পৃথক । 'দারুল ইসলাম' ‘দারুল হারব’ কখন হয়ে যাবে? অর্থাৎ একটি রাষ্ট্র ‘দারুল ইসলাম' ছিলো। তারপর তা কাফিরদের দখলে চলে গেলো। তখন কি কাফিরদের নিছক দখলদারিত্বের কারণে তা ‘দারুল হারব’ হয়ে যাবে, না তজ্জন্য অন্যান্য পূর্বশর্তও থাকতে হবে? কিছু লোক ফিক্বহের কিতাবাদিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন এবং এ মর্মে গবেষণা করলেন যে, যখন মুসলমানদের দখলের ফলে ‘দারুল হারব' 'দারুল ইসলাম’ হয়ে যায়, তখন কাফিরদের দখলদারিত্বের ফলে ‘দারুল ইসলাম’ ‘দারুল হারব' হবে কিনা? না মধ্যখানে ঝুলন্ত অবস্থায় 'দারুল আমন' হবে? অথচ এমনটি হয় না; বরং কাফিরদের দখলের সাথে দু'টি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্তও পাওয়া যেতে হবে একটি হলো- ওই রাষ্ট্রে ইসলামী বিধান পালন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হবে, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে- সেটার সীমানায় কোন অংশই ইসলামী রাষ্ট্রের সাথে মিলিত হবে না । সারকথা এ হলো যে, একটি 'দারুল ইসলাম' 'দারুল হারব' হবার জন্য নিম্নলিখিত তিনটি পূর্বশর্ত থাকা জরুরী ১. কাফিরদের পূর্ণ দখলদারিত্ব, ২. ইসলামী বিধান পালন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া এবং ৩. সেটার সীমানার কোন অংশ ইসলামী রাষ্ট্র (দারুল ইসলাম)-এর সাথে মিলিত হবে না । 

সুতরাং যদি কোন রাষ্ট্রের মধ্যে উক্ত তিনটি শর্তের মধ্যে কোন একটি শর্তও পাওয়া না যায়, তবে তা হবে 'দারুল ইসলাম। যেমন কান রাষ্ট্রে কাফিরদের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঠিক; কিন্তু তাতে ইসলামী বিধানাবলী একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি, বরং কিছুটা এভাবে স্থায়ী থাকে যে, জুমার নামায, দু ঈদের নামায, পাঁচ ওয়াক্বতের নামায ও দাড়ি রাখা ইত্যাদি পালন করা হয়। তাহলে সেটা 'দারুল ইসলাম’ই হবে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে হিন্দুস্থান ইংরেজদের শাসননামলেও ‘দারুণ ইসলাম' ছিলো। কারণ সুস্পষ্ট, ভারতের উপর ইংরেজদের

শাসন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলেও মুসলমানগণ তাদের ধর্মীয় অনুশাসনগুলো পালন করতে পেরেছেন। আর এ রাষ্ট্রের সীমানা ইরান ও আফানিস্তানের মতো ইসলামী রাষ্ট্রের সাথে মিলিত ছিলো । সুতরাং হিন্দুস্থান ‘দারুল ইসলাম’ হবার মধ্যে কোন রূপ সন্দেহই নেই ।

সুতরাং আ’লা হযরত বলেছেন- “আমাদের ইমাম-ই আযম, বরং আইম্মা-ই সালাসাহ্ (ইমামত্রয়) রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলায়হিম আজমা'ঈন-এর মাযহাব মতে, হিন্দুস্থান ‘দারুল ইসলাম’; ‘দারুল হারব’ মোটেই নয়। কারণ, ‘দারুল ইসলাম’ ‘দারুল হারব’ হবার জন্য যেই তিনটি পূর্বশর্ত থাকা প্রয়োজন, তন্মধ্যে একটি হচ্ছে- ‘সেখানে শিরকী প্রথাসমূহ প্রকাশ্যে জারী হবে । দ্বিতীয়টি হচ্ছে- সেখানে ইসলামী বিধানাবলী মোটেই পালিত হতে পারবে না। কিন্তু এখানে এ শেষোক্ত বিষয়ের অস্তিত্ব নেই। এখানে মুসলমানদের জুমা, দু’ঈদ, আযান-ইকামত, জামা'আত সহকারে নামায ইত্যাদি শরীয়তের বিধান বিনা বাধায়, প্রকাশ্যে পালন করা যেতো ও যাচ্ছে । তাছাড়া, বিবাহের ফরযগুলো, রাদ্বা‘আত (দুগ্ধপান), তালাক, ইদ্দত পালন, রাজ্‘আত, মোহর, খুলা’, স্ত্রীর ভরণপোষণ, শিশু পালন, বংশীয় ধারা রক্ষা, হিবাহ্, ওয়াকৄফ, ওসীয়ৎ ও শোফ্‘আহ্ মুসলমানগণ ইসলামী আইনানুসারে পালন করেন ও মীমাংসা করেন [সুত্র, প্রাগুক্ত] 

প্রসঙ্গত আ’লা হযরতকে কৃত দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলেন

বর্তমানকার ‘নাসারা’ (খ্রিস্টান) তাদের আক্বীদা বা ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে নিঃসন্দেহে মুশরিক। কারণ, তারা যে হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম-এর নুবূয়তকে ‘তাসলীস’ বা (ত্রিত্ববাদ) দৃষ্টিকোণ থেকে মেনে থাকে, তাতে সন্দেহ নেই । অর্থাৎ তারা তিন খোদায় বিশ্বাসী- ১. আল্লাহ্, ২. হযরত মরিয়ম ও ৩. হযরত ঈসা, এটা নিরেট শির্ক । আর ইহুদীরা হযরত ওযায়র আলায়হিস সালামকে খোদার পুত্র ও খোদা বলে বিশ্বাস করে । এটাও নিঃসন্দেহে শির্ক ।

এ প্রশ্নের উত্তরে আ’লা হযরত ওলামা-ই কেরামের বিভিন্ন অভিমত উল্লেখ করে নিজের অভিমত এটাই প্রকাশ করেছেন যে, সতর্কতা এতেই রয়েছে যে, খ্রিস্টান নারীকে বিবাহ্ করা ও তাদের যবেহকৃত পশু বা পাখী আহার করা থেকে বিরত থাকা। আর বর্তমানে যেসব ইহুদীকে হযরত ওয়াযর আলায়হিস্ সালামকে আল্লাহর পুত্র হিসেবে (নাঊযুবিল্লাহ্) মান্য করতে দেখা যাবে তাদের নারীকে বিবাহ্ করা এবং তাদের যবেহকৃত প্রাণীর গোশ্ত আহার করা থেকেও বেঁচে থাকা অপরিহার্য । [সূত্র. প্রাগুক্ত]

আলোচ্য বিষয়কে সামনে রেখে এ প্রসঙ্গটার এখানে আলোচনা করলাম । তৃতীয় প্রশ্নের জবাবও যথাস্থানে দেওয়া হয়েছে ।

পরিশেষে, খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের মতো হিন্দুস্তান ‘দারুল ইসলাম' মর্মে ফাতাওয়া প্রদানেও আ'লা হযরত সঠিক ফয়সালাটিই মুসলিম উম্মাহকে দিয়েছিলেন ।

🔁গতপর্বের লিঙ্ক:-https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=336236964891432&id=100055153927069




আ'লা হযরতের উপর অপবাদের জবাব। পর্ব:-৬৫


#মুহাম্মদ_আলমগীর।


বিষয়বস্তুকে প্রয়োজনের খাতিরে একটু পরিবর্তন করতে হলো।

তৎকালীন বৃটিশ শাসিত ভারত দারুল ইসলাম নাকি দারুল হরব,তা নিয়ে ঐসময়কার উলামাগণের মতানৈক্য ছিলো।কেউ কেউ তৎকালীন ভারতবর্ষকে দারুল হরব বলে ঘোষণা করেছিলেন।যেমন ১৩শ হিজরীর মুজাদ্দিদ শাহ্ আব্দুল আযিয মুহাদ্দিস দেহলভী রাহঃ।

কেউ কেউ তৎকালীন ভারতবর্ষকে দারুল ইসলাম বলেছিলেন।এই তালিকায় অনেকের নামই আছে,তবে বালাকোটি-ওহাবী সম্প্রদায়ের মুখপাত্র ইতরশ্রেণীর প্রাণী যার বুনিয়াদই হলো মিথ্যার উপর আইনুল হুদা বলে যে ব্যক্তি নিজেকে পরিচয় দেয়।সে এপর্যন্ত বেশ কয়েকবার আ'লা হযরত ১৪শ হিজরীর মুজাদ্দিদ ইমাম শাহ্ আহমদ রেযা হানাফী কাদেরী রাহঃ কর্তৃক দারুল ইসলাম বলা নিয়েই ফিতনা চড়াচ্ছে। যদিও বার বার তাকে তারই সম্প্রদায়ের লোকদের এবিষয়ক ফতোয়ার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।কিন্তু সে কখনই সেদিকে কর্ণপাত করেনি।একবারতো আরো দুই পান চিবুনে লোক নিয়েও ফিতনার লাইভ করেছিলো।

বৃটিশশাসিত ভারত যদি দারুল হরব সর্বসম্মতিক্রমে হতো,আর একজন ছাড়া অন্যকেউ এই মতামতের বিপরীত মত দিতেন;তাহলে আমরা বুঝতাম যে,এটা তার সৎ কোনো উদ্দেশ্য হবে।কিন্তু বিষয়টা সেরকম কিছুই নয়,বরং তার মতলব হলো তাদের নিজেদের বৃটিশ চাটুকারীতা আর বৃটিশ নিমকখোরীর ইতিহাসকে কৌশলে মানুষের দৃষ্টি থেকে আড়াল করে রাখা।

একটি কথা উল্লেখ করছি তাতেই সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে।

তাদের দাবী হলো তাদের গুরু সৈয়দ আহমদ রায় বেরলভীর পীরও মুরশিদ হলো শাহ্ আব্দুল আযিয দেহলভী রাহঃ।এবং তিনি তাদের গুরুকে খিলাফত দিয়েছেন।

এখন সৈয়দ আহমদ রায় বেরলভীর খলিফা হলো কারামত আলী জৌনপুরী।এই কারামত আলী জৌনপুরী তার লিখিত যখিরায়ে কারামতে নিজেই শাহ্ আব্দুল আযিয ঘোষিত দারুল হরবকে দারুল ইসলাম বলে ঘোষণা করেছে।অর্থাৎ খোদ আপন দাদাপীরের ফতোয়ার বিপক্ষে ছিলো তার এই ফতোয়া।সেখানে জৌনপুরী সাহেব এটাও লিখেছে যে,যারা দারুল হরব বলে তারা ওহাবী।তার পরিস্কার অর্থ দাড়ালো তার দাদাপীর শাহ্ আব্দুল আযিয ওহাবী।

 কারামত আলী সাহেব লিখেছে "কোনো সন্দেহ ছাড়াই হিন্দুস্তান দারুল ইসলাম"।(যখিরায়ে করামত ৩য় খন্ড,১৫৫পৃ.)

এছাড়াও আইনুল খারেজীদের বালাকোটি ভাই রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী,মাওলানা আব্দুল হাই লাখনৌভী,কাশেম নানুতুবী,মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী,আনোয়ার শাহ্ কাশ্মীরী,আশরাফ আলী থানবীসহ অনেক বালাকোটি হযরত তৎকালীন হিন্দুস্তানকে দারুল ইসলাম ঘোষণা দিয়েছিলো।আজপর্যন্ত ফিতনাবাজ খারেজী আইনুল কাজ্জাব সেদিকে মোটেও যায়নি।সে বার বার শুধু একজনের বিষয়েই ফিতনা ছড়িয়ে যাচ্ছে।

তারা দাবী করছে ইমাম আহমদ রেযা রাহঃ বৃটিশের দালাল ছিলেন।কিন্তু প্রমাণ ছাড়া।

অথচ তাদের কাছে যদি আমরা জিজ্ঞেস করি যে,ইমাম আহমদ রেযা রাহঃ দালাল হলে তার প্রমাণ কি?

আইনুল কাজ্জাবের একমাত্র পূজি হলো ঐ "ইলমামুল আল্লাম বিআন্না হিন্দুস্তান দারুল ইসলাম"কিতাবটি।অথচ কিতাবটি লেখা হয়েছে ১২৯৮হিজরীতে বদায়ূন থেকে মির্জা আলী বেগ আ'লা হযরতের কাছে প্রশ্ন করেছেন সেটার জবাব দিতে গিয়ে এই কিতাব রচনা করেছেন।

তিনি দারুল ইসলাম বলেছেন কারণ বালাকোটিরা হিন্দুদের সাথে মিলে সুদ ব্যবসাকে একদিকে জায়েয করে নিয়েছিলো,অন্যদিকে সাধারণ মুসলমানকে এদেশ থেকে হিজরত করে হিন্দুদের জন্য খালি করে দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত ছিলো।কিন্তু নিজেরা হিজরতের নামগন্ধও নেয়নি।

তারা গান্ধিকে মসজিদের মিম্বরে বসিয়ে দিয়েছিলো।তাকে পয়গাম্বর পর্যন্ত বানিয়ে দিয়েছিলো।ইমাম আহমদ রেযা রাহঃ কেবল হিন্দুদের সাথে মিলে বালাকোটি হযরতরা যে চক্রান্তে লিপ্ত ছিলো মানুষকে সেবিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।আমি এখানে ঐবিষয়ে আর বেশি কিছু লিখছিনা পরে লিখবো।

আইনুল কাজ্জাব দাবী করেছে ইমাম আহমদ রেযা রাহঃ নাকি ইমাম আযম আবু হানিফার কথাকে জালিয়াতী করেছেন।কোনো মায়ের ছেলে নাকি জন্মগ্রহণ করেনি যে,হিন্দুস্তানকে ইমাম আযম দারুল ইসলাম বলেছেন বলে প্রমাণ করতে পারে!

এখন আসি জালিয়াতীর খন্ডনে।সে! ই'লাম" জেনে রাখো এটা উল্লেখ করে বলেছে এটা জালিয়াতী।এবং ইমাম আযমের যে মতামত ইমাম আহমদ রেযা রাহঃ কোড করেছেন,সেটাকেও বলেছে মিথ্যাও জাল!

ইমাম আযম ঐসময় পৃথিবীতে ছিলেননা বিধায় তিনি কিকরে এটা বলবেন যে,এই এইভাবে ভারত দারুল ইসলাম?বরং ইমাম আহমদ রেযা রাহঃফতোয়ায়ে আলমগীরী থেকে ইমাম আযমের মতামতকে কোড করেছেন।তাহলে ফতোয়ায়ে আলমগীরীই জাল?তানাহলে ইমাম আহমদ রেযা রাহঃ'র উদ্ধৃতি কেনো জাল হলো?

ইমাম আহমদ রেযা রাহঃ ফতোয়ায়ে আলমগীরীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে,ইমাম আবু হানিফার ফায়সালা অনুসারে ভারত দারুল ইসলাম।অর্থাৎ ইমাম আযম এবং ওনার সাগরেদগণ দারুল হরবও দারুল ইসলামের যে শর্ত উল্লেখ করেছেন সে হিসেবে হিন্দুস্তান দারুল ইসলাম হবে।

নীচে ফতোয়ায়ে আলমগীরীর উক্ত এবারত আমি তুলে ধরলাম,আর তার অনুবাদটাও আইনুল কাজ্জাবের পছন্দের ইসলামীক ফাউন্ডেশনের অনুবাদটাই দিলাম।


اعْلَمْ أَنَّ دَارَ الْحَرْبِ تَصِيرُ دَارُ الْإِسْلَامِ بِشَرْطٍ وَاحِدٍ، وَهُوَ إظْهَارُ حُكْمِ الْإِسْلَامِ فِيهَا.

 قَالَ مُحَمَّدٌ رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى فِي الزِّيَادَاتِ: إنَّمَا تَصِيرُ دَارَ الْإِسْلَامِ دَارَ الْحَرْبِ عِنْدَ أَبِي حَنِيفَةَ رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى بِشُرُوطٍ ثَلَاثَةٍ أَحَدُهَا: إجْرَاءُ أَحْكَامِ الْكُفَّارِ عَلَى سَبِيلِ الِاشْتِهَارِ وَأَنْ لَا يُحْكَمَ فِيهَا بِحُكْمِ الْإِسْلَامِ، وَالثَّانِي: أَنْ تَكُونَ مُتَّصِلَةً بِدَارِ الْحَرْبِ لَا يَتَخَلَّلُ بَيْنَهُمَا بَلَدٌ مِنْ بِلَادِ الْإِسْلَامِ، وَالثَّالِثُ: أَنْ لَا يَبْقَى فِيهَا مُؤْمِنٌ، وَلَا ذِمِّيٌّ آمِنًا بِأَمَانِهِ الْأَوَّلِ الَّذِي كَانَ ثَابِتًا قَبْلَ اسْتِيلَاءِ الْكُفَّارِ لِلْمُسْلِمِ بِإِسْلَامِهِ وَلِلذِّمِّيِّ بِعَقْدِ الذِّمَّةِ، وَصُورَةُ الْمَسْأَلَةِ عَلَى ثَلَاثَةِ أَوْجُهٍ إمَّا أَنْ يَغْلِبَ أَهْلُ الْحَرْبِ عَلَى دَارٍ مِنْ دُورِنَا أَوْ ارْتَدَّ أَهْلُ مِصْرٍ وَغُلِبُوا وَأَجْرَوْا أَحْكَامَ الْكُفْرِ أَوْ نَقَضَ أَهْلُ الذِّمَّةِ الْعَهْدَ، وَتَغَلَّبُوا عَلَى دَارِهِمْ، فَفِي كُلٍّ مِنْ هَذِهِ الصُّوَرِ لَا تَصِيرُ دَارَ حَرْبٍ إلَّا بِثَلَاثَةِ شُرُوطٍ، وَقَالَ أَبُو يُوسُفَ وَمُحَمَّدٌ- رَحِمَهُمَا اللَّهُ تَعَالَى- بِشَرْطٍ وَاحِدٍ لَا غَيْرَ، وَهُوَ إظْهَارُ أَحْكَامِ الْكُفْرِ، وَهُوَ الْقِيَاسُ، ثُمَّ هَذِهِ الدَّارُ إذَا صَارَتْ دَارَ الْحَرْبِ بِاجْتِمَاعِ الشُّرُوطِ الثَّلَاثَةِ لَوْ افْتَتَحَهَا الْإِمَامُ، ثُمَّ جَاءَ أَهْلُهَا قَبْلَ الْقِسْمَةِ أَخَذُوهَا بِغَيْرِ شَيْءٍ، وَبَعْدَ الْقِسْمَةِ بِالْقِيمَةِ، وَلَوْ افْتَتَحَهَا الْإِمَامُ عَادَتْ إلَى الْحُكْمِ الْأَوَّلِ، الْخَرَاجِيُّ يَصِيرُ خَرَاجِيًّا وَالْعُشْرِيُّ يَصِيرُ عُشْرِيًّا إلَّا إذَا كَانَ الْإِمَامُ وَضَعَ عَلَيْهَا الْخَرَاجَ قَبْلَ ذَلِكَ، فَإِنَّهَا لَا تَعُودُ عُشْرِيَّةٍ هَكَذَا فِي السِّرَاجِ الْوَهَّاجِ

(ফতোয়ায়ে আকমগীরী,২য় খন্ড,২৫৬পৃ.দারুল কুতুব ইলমিয়া। কিতাবুসসিয়র,পঞ্চম পরিচ্ছেদ!)

অনুবাদ আমার নয় বরং ইসলামীক ফাউন্ডেন অনুদিত ৩য় খন্ড ৬০৪পৃষ্ঠা থেকেই দিলাম-

👉২৮. মাসআলা : উল্লেখ্য যে, এক শর্ত সাপেক্ষে দারুল হারব দারুল ইসলামে পরিণত হয়ে থাকে। তা হল, ইসলামের বিধি-বিধান ও অনুশাসন তথায় জারী হওয়া। ইমাম মুহাম্মদ (র) যিয়াদাত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে ইমাম আবূ হানীফা (র) এর মতে তন শর্ত সাপেক্ষে দারুল ইসলাম দারুল হারবে পরিণত হয়ে থাকে। (১) তথায় প্রকাশ্যে কুফরী অনুশাসন জারী হওয়া এবং ইসলামী অনুশাসন জারী না থাকা। (২) সে দেশটি অপর কোন দারুল হারবের সাথে এমনভাবে মিলিত থাকা যে, এতদুভয়ের মাঝখানে কোন ইসলামী রাষ্ট্র নেই (৩) সে দেশে এমন কোন মুসলমান এবং যিম্মী না থাকা যারা কাফিরদের বিজয়ী হওয়ার পূর্বে আমান (নিরাপত্তা) প্রাপ্ত হয়েছিল। অর্থাৎ মুসলমান আমানপ্রাপ্ত হয়েছিল ইসলামের কারণে এবং যিম্মী আমানপ্রাপ্ত হয়েছিল যিম্মী চুক্তির কারণে। উপরোক্ত মূলনীতির সূরতে মাসআলা তিনভাবে হতে পারে। (১) হারবী লোকদের কোন ইসলামী দেশের উপর বিজয়ী হয়ে যাওয়া (২) কোন শহরের লোকদের এ পরিমাণ মুরতাদ হয়ে যাওয়া যে, শহরবাসীর উপর তাদের বিজয়ী হয়ে সেখানে কুফরী অনুশাসন জারী করতে সক্ষম (৩) অথবা যিম্মী লোকদের চুক্তি ভঙ্গ করে ঐ দেশীয় লোকদের উপর জয়ী হয়ে যাওয়া। উপরোক্ত অবস্থাসমূহের কোন অবস্থাতেই কোন দেশ দারুল হারবে পরিণত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ তিন শর্তের বাস্তবায়ন হয়। ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ (র) বলেন, শুধুমাত্র এক শর্তের ভিত্তিতেই কোন দেশ দারুল হারবে পরিণত হয়ে থাকে। আর তা হল, তথায় কুফরী অনুশাসন জারী হওয়া। এটিই কিয়াসের দাবী তিন শর্ত পাওয়া যাওয়ার ভিত্তিতে কোন দেশ দারুল হারবে পরিণত হওয়ার পর যদি কোন মুসলিম রাষ্ট্র প্রধান সে দেশ জয় করে এবং পরে সেখানকার অধিবাসীরা সেখানে আসে এবং গনীমতের মাল বণ্টনের আগে আসে তাহলে তারা তাদের মালামাল বিনিময় ছাড়াই নিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু বণ্টনের পর আসলে মূল্য পরিশোধ করে নিতে হবে। মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক কোন দেশ বিজিত হওয়ার পর সেখানকার উশরী জমি উশরী জমি হিসাবেই থাকবে এবং খারাজী ভূমি খারাজী ভূমি হিসাবেই বাকী থাকবে। কিন্তু রাষ্ট্র প্রধান যদি পূর্বাহ্লেই সে দেশের উপর খারাজ আরোপ করে তাহলে ঐ দেশের ভূমি আর উশরী ভূমিতে পরিণত হবে না (আসৃসিরাজুল ওয়াহহাজ)।

ইমাম আযমও ওনার শাগরীদগণ দারুল ইসলাম আর দারুল হরব হবার যে মাপকাটি দিয়েছেন সে হিসেবে ভারতবর্ষ দারুল হরব নয় বরং দারুল ইসলাম।শর্তগুলো যেহেতু উল্লেখ করা হয়েছে সচেতন সম্প্রদায় ভেবে দেখুন এখানে কোথাও মিথ্যার কিছু আছে কিনা!

এবার আপনারাই বিচার করুন জালিয়াতীর তোহমত কার বিরুদ্ধে যায়!

ইনশাআল্লাহ্‌! সময়মতো বিস্তারিত আলোচনা লিখবো।

🔁গতপর্বের লিঙ্ক:-https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=315801426934986&id=100055153927069





শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১

 

'মাসলকে আ'লা হযরত' আহলে সুন্নাতের শীর্ষস্থানীয় আলিমদের দৃষ্টিতে

'মাসলক' শব্দের শান্দিক অর্থ রাস্তা বা পথ, সুতরাং 'মাসলকে আ'লা হযরত' এর অর্থ আ'লা হযরতের পথ বা ত্বরীকা। আ'লা হযরতের পথ হচ্ছে ওই পথ যা পূর্বসূরীদের পথ; যেমন, ইমামে আযম হুযুর সৈয়্যদুনা গাউসে আযম, খাজা গরীবে নেওয়াজ রিদ্ওয়ানুল্লাহি তা'আলা আনহুম'র পথ। অতএব, 'মাসলকে আ'লা হযরত' বলতে কোন ক্ষতি বা নিষেধ নেই।

যখন মসলকে হানাফী ও সুন্নী নাম দিয়ে ইসলামের মৌলিক আক্বিদা ও বিশ্বাসের উপর আঘাত হেনে নতুন নতুন ফিতনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে লাগলাে, যখন ওহাবী দেওবন্দী, কাদিয়ানী ইত্যাদি ভ্রান্তদলগুলাে হানাফী দাবী করে তাদের মনগড়া আক্বিদা প্রচার করে সরলমনা মানুষকে ধোঁকা দিতে লাগলাে, মহান আল্লাহ্ মিথ্যা বলতে পারেন বললাে, কেউ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম- এর ইলমে গায়বকে অস্বীকার করলাে, কেউ কেউ নবী হওয়ার মিথ্যা দাবী করলাে, কেউ কেউ হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে শেষ নবী হওয়াকে অস্বীকার করলাে। এভাবে যখনই বিভিন্ন মাতাবলম্বী বিভিন্নভাবে সঠিক দ্বীন ইসলামের উপর বিভিন্নভাবে আঘাত হানতে শুরু করলাে তখন ওই সব বদমাযহাব থেকে সতর্ক করে এবং সব ধরনের উদ্ভূত ভ্রান্ত আক্বাইদ খণ্ডনে ইসলামের যে সঠিক রূপরেখা আ'লা হযরত উপস্থাপন করেছেন, তাই হলাে 'মসলকে আ'লা হযরত' মসলকে আ'লা হযরত আলাদা কোন মসলক বা মাযহাব নয়; বরং তিনিই আহলে সুন্নাত তথা ইসলামের সঠিক মতাদর্শই বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছেন। এটাই হচ্ছে সত্যিকার মুসলমানদের অনুসৃত পথ ও মত। নিম্নে এ প্রসঙ্গে কিছু অভিমত পেশ করা হলাে:


** কাছওয়াছা শরীফের শ্রেষ্ঠতম বুযুর্গ বলেন, আমার মাসলক শরীয়ত ও তরীকতে ওটাই যা হুযুর আ'লা হযরত মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রেযা খান ছাহেব বেরলভীর, (সুত্রঃ সুন্নি আওয়াজ, নাগপুর মে-জুন ১৯১৭]


** আহছানুল উলামা মারহারাভী রাহমতুল্লাহি আলায়হি বলেন, আমার যে মুরীদ 'মাসলকে আ'লা হযরত' থেকে বিন্দু পরিমাণ সরে যাবে আমি সেই মুরীদের উপর অসন্তুষ্ট, আমার কাছে তার কোন যিম্মাদারী নেই। আমার জীবনে এটা আমার উপদেশ এবং আমার ইন্তিকালের পর এটাই আমার ওসীয়ত যে, মাওলানা আহমদ রেযা ফাযেলে বেরলভীর মাসলকের উপর দৃঢ়ভাবে অটল থাকুন।[মাসিক আশরাফিয়া সায়্যিদিন নম্বর পৃ: ৭১৬]


** মুহাদ্দিসে আযম হিন্দ কাছওয়াছভী বলেন, প্রকৃত সুন্নীয়ত এবং হানাফী কারা তা চেনার জন্য ইসলামী বিশ্বেও শীর্ষস্থানীয় আহলে সুন্নাতের মাশায়েখ হযরাত 'মাসলাকে আ'লা হযরত' শব্দের প্রচলন শুরু করেন। এখন তা প্রকৃত সুন্নী ও নির্ভেজাল হানাফী হওয়ার আলামত। 'মাসলকে আ'লা হযরত' এই পরিভাষা বর্তমানে আসল সুন্নী হানাফী পরিচয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।


** মুবাল্লিগে ইসলাম হযরত মাওলানা শাহ আব্দুল আলীম সাহেব মিরাঠী রহমতুল্লাহি আলায়হি বলেন, আল হামদুলিল্লাহ, আমি মাসলকে আহলে সুন্নাতের উপর জিন্দা আছি আর মাসলকে আহলে সুন্নাত ওটাই যা মাসলকে আ'লা হযরতই।  যা আ'লা হযরতের কিতাবসমূহের মধ্যে রয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ ওই মােতাবেক আমার জীবন অতিবাহিত হয়েছে, এবং আলহামদুলিল্লাহ শেষ সময়েও ওই 'মাসলকে আ'লা হযরত' এর উপর হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াল্লাম-এর পবিত্র কদমে খাতেমাহ বিলখায়র হবে। [মাহনামা সুন্নী আওয়াজ জুলাই, সেপ্টেম্বর ১৯৯৭]


** হযরত মুহাদ্দিসে আযম পাকিস্তান বলেন, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন মিল্লাত আ'লা হযরত আযীমুল বরকত মাওলানা শাহ্ আহমদ রেযা খান ছাহেব রহমতুল্লাহি আলায়হির মাসলকের উপর দৃঢ়ভাবে অটল থাক, তাঁর মাসলকই সঠিক আহলে সুন্নাত ওয়ালজামাত। (মুহাদ্দিসে আযম পাকিস্তান, পৃ১০০] 


** রঈসুল কলম আল্লামা আরশাদুল কাদেরী আলায়হির রাহমাহ্ বলেন, একথা স্পষ্টই প্রমাণিত যে, আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা আহলে সুন্নাতের প্রকৃত দিশারী হওয়ার জন্যই তাঁর ব্যক্তিত্বর প্রতি মুসলমানগণ শ্রদ্ধাশীল এবং প্রকৃত আহলে সুন্নাতের পরিচয়ে তাঁকেই মানদণ্ড হিসেবে স্বীকার করেন। তিনি তাঁর বিশাল রচনা সম্ভারের মাধ্যমে হক ও বাতিলের মাঝে এমন স্পষ্ট পার্থক্য বিবৃত করেছেন যাতে তাঁর চিন্তা-চেতনা, ধ্যান ধারণা প্রকৃত আহলে সুন্নাতের নিশান হয়ে গেছে। এ কারণেই ভ্রান্ত দলগুলাের পার্থক্য নির্ণয়ে বেরেলী শব্দটি সংক্ষেপেই আমাদের পরিচয় বহন করে। আল্লাহ ও রাসুলের বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব এবং তাঁদের দুশমনদের সাথে দুশমনি পােষণ করার স্পষ্ট ব্যাখ্যাই হচ্ছে "মাসলকে আ'লা হযরত' [রাহনুমা আশরাফিয়া, সায়িদিন নম্বর পৃ: ৮৩৪]


** মুফতিয়ে আযম দিল্লী মুফতি মুহাম্মদ মাজহারুল্লাহ ছাহেব নকশবন্দী একটি চিঠিতে লিখেন, আশ্চর্য যে, হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত আ'লা হযরত বেরলভীর ফাতওয়া থাকা সত্ত্বেও আমার নিকট ফাতওয়া চাওয়া হয়। আমার এবং আমার বাপ দাদার মসলক হচ্ছে তাই যা আ'লা হযরত রহমতুল্লাহি আলায়হির । [রাহনুমা, সুন্নী আওয়াজ, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৯৫]


** আওলাদে রাসূল সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহমতুল্লাহি আলায়হি জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার ভিত্তিপ্রস্তর দেয়ার সময় বলেন, 'এই জামেয়ার ভিত্তি মসলকে আ'লা হযরত এর উপর রাখা হলাে। 

সুন্নী পরিচয়ে 'মসলকে আ'লা হযরত' এর শর্ত ভারত বিভক্তির পূর্বে যখন অল ইন্ডিয়া সুন্নি কনফারেন্স প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তখন সুন্নীর পরিচয় এভাবে তুলে ধরা হল, 'মা আনা আলায়হি ওয়া আসহাবী' অনুযায়ী হতে হবে, তাঁরা হচেছ আয়িম্যায়ে দ্বীন, খােলাফায়ে রাশেদীন, মাশায়েখে তরীকত এবং পরবর্তীদের মধ্যে হযরত শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী, হযরত বাহরুল উলূম ফিরিঙ্গী মাহল্লী, হযরত মাওলানা ফযলে হক খায়রাবাদী, মাওলানা শাহ্ ফযলে রসুল বদায়ূনী, হযরত মাওলানা ইরশাদ হােসাঈন রামপুরী, আ'লা হযরত মাওলানা শাহ আহমদ রেযা খাঁন ইত্যাদি বুযূর্গানে আহলে সুন্নাতের যেই মসলক তাই হচ্ছে সুন্নীয়ত।


এই কনফারেন্সে স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন, সদরুশ শরীয়হ মাওলানা আমজাদ আলী, মুফতিয়ে আযম হিন্দ মাওলানা শাহ মােস্তাফা রেযা খাঁন, সদরুল আফাযিল মাওলানা নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী, রঈসুল মুতাকাল্লেমীন মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ সাহেব, আমীরে মিল্লাত পীর জামা'আত আলী শাহ, মুবাল্লিগে ইসলাম মওলানা আব্দুল আলীম সাহেব, মুহাদ্দিস আযম পাকিস্তান মাওলানা সরদার আহমদ সাহেব, মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ আহমদ ক্বাদেরী, হযরত মুফতি মুহাম্মদ ওমর নঈমী মুরাদাবাদী সহ তরীকতের অনেক বুযুর্গ মাশায়েখ ও শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে আহলে সুন্নাত। [মাহনুমা সুন্নী আওয়াজ জুলাই -সেপ্টেম্বর ১৯৯৭)

উল্লেখিত বুযুর্গ ওলামায়ে কেরাম ছাড়াও বিশ্বের আরও অনেক আলেম ওলামা, পীর-মাশায়েখগণ 'মাসলকে আ'লা হযরত' এর উপর ঐক্যমত পােষণ করেছেন। এবং মাসলকে আ'লা হযরতের উপর অটল থাকার জন্য জোরালােভাবে নসীহত ও ওসিয়ত করেছেন। আল্লাহ পাকের দরবারে ফরিয়াদ, আমরা সুন্নী মুসলমানদেরকে যেন 'মসলকে আ'লা হযরতের' উপর অটল রাখেন, আমিন বেহরমতি সায়্যিদিল মুরসালীন। > মুহাম্মদ রিদওয়ান কাদেরী

                                              (মাসিক তরজুমান,১৪৩৪হি:)

মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১

 

কানযুল ঈমান'র ভাবধারায় লিখিত তাফসীরসমূহ


১) খাযাইনুল ইরফান,কৃত: আল্লামা নঈমুদ্দীন

মুরাদাবাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। 

২) নূরুল ইরফান, কৃত: মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। 

৩) তাফসীরে নঈমী, কৃত: মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

৪) জাওয়াহেরুল ইকান, কৃত: মাওলানা হাশমত আলী খান।

৫) এমদাদুদ দায়্যান, কৃত: মাওলানা হাশমত

আলী খান। 

৬) তাফসীরে রেজভিয়া, কৃত: মাওলানা আকবর আলী রেজভী। 

৭) তাফসীরে আযহারী, কৃত: মাওলানা আবদুল মুস্তফা আযহারী। 

৮) তানভীরুল কোরআন, কৃত: মুফতী এজাজ আলী খান। 

৯) নঈমুল বায়ান, কৃত: মাওলানা গােলাম নঈমুদ্দীন। 

১০) তাফসীরে রিয়াজুল কোরআন, কৃত: মুফতী রিয়াজুদ্দীন কাদেরী। 

১১) তাইসীরুল বয়ান, কৃত: মুফতি আজিজ আহমদ কাদেরী। 

১২) তাফসীরুল হাসানাত, কৃত: আল্লামা আবুল হাসানাত কাদেরী। 

১৩) ইলমুল কোরআন, কৃত: সৈয়দ কাশেম মাহমূদ। 

১৪) তাফসীরে আকবরিয়া, কৃত: মুফতী নাজিরুল আমিন রেজভী।


সংগ্রহে : মুহাম্মদ ইয়াকুব আলী

সাহেবাবাদ, ব্রাহ্মণপাড়া, কুমিল্লা।

সূত্র: মাসিক তরজুমান


শনিবার, ৩ জুলাই, ২০২১

 


জিস কি তাসকিঁ ছে রােতে হুয়ে হাঁস পড়েঁ

উছ তাবাচ্ছুম কি আ'দাত পে লাখাে সালাম। (হাদায়িকে বখশিশ শরীফ)


কালামে রযার ব্যাখ্যা: হাদায়িকে বখশিশ শরীফের অন্তর্গত 'সালামে রযা' শীর্ষক এই

পংক্তি ' জিস কি তসকি সে রােতে হুয়ে হাঁস পড়ীঁ'র সর্বশেষ পদ 'পড়ীঁ' আ'লা হযরতের মাদানী চিন্তা-চেতনার এক মহান গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কেননা, 'পড়েঁ' স্থলে যদি লিখা হত পড়ে', তাহলে অর্থগত দিক থেকে কোন এক বিশেষ ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করত। কিন্তু আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি 'পড়ীঁ' লিখে ছরকারে মদীনা সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মহান গুণ বর্ণনা করে

ফেললেন। যেমন: পংক্তিটির অর্থ হচ্ছে, জীবদ্দশাতে তাে আপনার শান্তনায় দুঃখী-তাপী মানুষের মনের পুষ্পকলি ফুটে উঠত, কিন্তু আজও যখন সুলতানে মদীনা সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন দুঃখী মানুষকে স্বপ্নে কিংবা কোন গােলামকে কবরে শান্তনা প্রদান করেন, সাথে সাথে সে পরিতৃপ্তিময় প্রশান্তি লাভ করে। পংক্তিটি আরও ইঙ্গিত বহন করে যে, হাশরের দিনেও তিনি আপন গুনাহগার উম্মতদেরকে নির্ভরযােগ্য প্রশান্তি ও শান্তনা প্রদান করবেন। দ্বিতীয় পংক্তিটির অর্থ এই যে, এই প্রশান্তিপ্রদ অভ্যাস মােবারকের উপর অসংখ্যা সালাম বর্ষিত হােক। হযরত মাওলানা সায়্যিদ আখতার হামেদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই পংক্তিটিতে কতই সুন্দর পংক্তি জুড়ে দেন:


মুদতারিব গম ছে হুতি হুয়ি হাঁস পড়ি

রনজ ছে জান কোতে হুয়ি হাঁস পড়ি,

বখত জাগ উটি চোতে হুয়ি হাঁস পড়ি

জিস কি তাসকি ছে রােতে হুয়ি হাঁস পড়ি,

উছ তাবাচ্ছুম কি আ'দাত পে লাখাে সালাম।



 কানযুল_ঈমান_শ্রেষ্ঠ_কেন?


পৃথিবীর বিশুদ্ধতম কুরআনের অনুবাদ কানযুল ঈমান অনুবাদ  করেছেন শতাব্দীর মুজাদ্দীদ ইমাম আহমদ রেজা খান।১৯১১ সালে উর্দূ ভাষায় অনুদিত এই গ্রন্থটি ইংরেজি, ফরাসি,জার্মানি,হিন্দি,ডাচ,বাংলা পশতু,সিন্ধী,গুজরাটি,কেরেলা, জাপান সহ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের একুশটি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে।করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর মজিদুল্লাহ কাদেরী,কানযুল ইমানের উপর সর্বপ্রথম পি.এইচ.ডি করেন।প্রফেসর শাহ ফরিদুল হক প্রথম ইংরেজি অনুবাদ করেন যা পৃথিবীর সকল দেশে সমাদৃত হয়েছে। আমেরিকার কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে ইউরোপের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়,ভারত ও পাকিস্তানের সকল প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইমাম আহমদ রেজার  কানযুল ইমান ও  আহমদ রেজার জীবন কর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে পি.এইচ.ডি-এমফিল হয়েছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমাম আহমদ রেজার নাত সাহিত্যের ওপর প্রফেসর ডক্টর রশিদ সাহেবের তত্ত্বাবধানে পি.এইচ.ডি হয়েছে।ঢাকা,চট্টগ্রাম,জগন্নাথ,কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ইমাম আহমদ রেজার বিভিন্ন দিক নিয়ে এমফিল -পিএইচডি অব্যাহত রয়েছে।কুরআন শরিফের অনুবাদ সাহিত্যে কানযুল ইমানের শ্রেষ্ঠত্বের  ওপর সমসাময়িক বিভিন্ন  অনুবাদকের কুরআন শরীফের ১৫টি  আয়াতের অনুবাদ নিয়ে তুলনামূলক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরনি বাংলা অনুবাদের ভূমিকাতে সংযুক্ত রয়েছে যেখানে অন্যান্য অনুবাদের চেয়ে কানযুল ইমানের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছে।

আজ থেকে ২৬ বছর আগে ৯৫' সালে চট্টগ্রাম মুসলিম হলে,ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য অধ্যাপক,গবেষক,প্রতিষ্ঠিত আলিয়া মাদ্রাসা গুলোর অধ্যক্ষ মুহাদ্দিস,মুফাসসির ও মুফতিদের উপস্থিতিতে একটি বিশাল প্রকাশনা উৎসব উদযাপিত হয়েছিল।দীর্ঘ ২৬ বছরে একত্রিশটি এডিশন ইতিমধ্যে বাজারে এসেছে,কিন্তু এই পর্যন্ত কোনো বাংলা ভাষাভাষী,ইমাম আহমদ রেজার অনুবাদ নিয়ে প্রশ্ন তোলার দুঃসাহস করেনি।মুসলিম হলের সে প্রকাশনা উৎসবে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর,প্রফেসর ডক্টর রইচ উদ্দীন বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিধিনিষেদ না থাকলে আমি এই অনুবাদের জন্য পি.এইচ.ডি ডিগ্রি দিতাম।সদ্য ওফাত প্রাপ্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ রশিদ কানযুল ইমানের অনুবাদ পড়ে অভিভূত হয়ে অনুবাদক কে সৈয়েদুল মুতারাজ্জামিন উপাধি দিয়েছিলেন।১৯১১ সাল থেকে আজ একশ দশ বছরে কানযুল ইমান নিয়ে পৃথিবীর কোনো স্থানে কেউ এই ধরনের ধৃষ্টতা দেখানোর দুঃসাহস করেনি।জ্ঞান,বুদ্ধি,বিবেক ও যুক্তির কাছে পরাজিত হয়ে এক বদনসিব প্রচন্ড ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছে,যা অমার্জনীয়।

এদেশের দ্বীনদার,ইমানদার,সুফীবাদি সুন্নী মুসলমানেরা বিষয়টিকে সহজ ভাবে গ্রহণ করেনি।কানযুল ইমান পড়ে সে নিজেই তার ফতোয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে।জনগণ মাঠে নামার পূর্বেই তাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।ইতিমধ্যে মুফতী মোতালেব হোসেন সালেহী যে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ করেছেন তার জন্য তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।কানযুল ইমানের বিশুদ্ধতার পক্ষে আমরা আনুষ্ঠানিক বাহাছ করতে প্রস্তুত।


 © স.উ.ম. আবদুস সামাদ সাহেব,

       বিশিষ্ট আ'লা হযরত গবেষক।