বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল, ২০২১


সৈয়্যদযাদাদের জন্য আ'লা হযরতের দরবার ছিলো সর্বদা উন্মুক্ত

সৈয়্যদ আইয়ুব আলি সাহেব বর্ণনা করেন, আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)'র দরবারে মিলাদ শরিফ উপলক্ষে যে তাবাররুক তৈয়ার হতাে তা বণ্টনের একটা নিয়ম ছিলাে। নিয়মটি হলাে উক্ত মিলাদ শরীফে যে সকল বাচ্চা ও দাঁড়ি বিহীন ব্যক্তি উপস্থিত থাকতেন তাদেরকে এক প্যাকেট শিরনি দেয়া হতাে।
দাঁড়িওয়ালা যেসব মানুষ থাকতেন তাদেরকে দু'প্যাকেট দেয়া হতাে। আর যেসব সৈয়্যদযাদা শরিক হতেন তাঁদেরকে চার প্যাকেট শিরনি দেয়া হতাে। তাঁর খান্দানের সকলেই তা অনুসরণ করতেন। এক বছর রবিউল আউয়াল শরিফের ১২ তারিখে মিলাদুন্নবী ﷺ'র অনুষ্ঠানে মানুষের সমাগম বেশি হয়েছিলাে। তাবাররুক বণ্টনের সময় নিয়মের পরিপন্থী সৈয়্যদ মাহমুদ জানকে এক প্যাকেট দেয়া হলাে।
অথচ তিনি চার প্যাকেট পাওয়ার যােগ্য। তিনি এক প্যাকেট গ্রহণ করে চুপিসরে আ'লা হযরত (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)'র খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলেন, হুযুর! আজকে
আমাকে তাবাররুক এক প্যাকেট দেয়া হয়েছে। আ'লা হযরত (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বললেন,।সৈয়্যদ সাহেব, অপেক্ষা করুন। আমি দিচ্ছি, বলে তাবাররুক বণ্টকারীকে
ডাকলেন এবং খুব অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বললেন, এখনই একটি কাচের প্লেট নিয়ে তাতে তবাররুকে পরিপূর্ণ করে সৈয়্যদ সাহেবের খেদমতে পেশ করাে। তৎক্ষণাৎ হুকুম তামিল করা হলাে। সৈয়্যদ সাহেব বললেন, 'হুযুর! আমার উদ্দেশ্য এটা ছিলাে না। তবে হ্যা, আমার মনে খুব কষ্ট এসেছে, যা সহ্য করতে পারিনি।' আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ফরমালেন, সৈয়্যদ সাহেব এ তাবারুক আপনাকে গ্রহণ করতে হবে নতুবা আমি খুব কষ্ট পাবাে। এরপর বণ্টনকারীকে বললেন, একজন লােক সৈয়্যদ সাহেবের সাথে দাও, যে প্যাকেটগুলাে সৈয়্যদ সাহেবের ঘরে পৌঁছে দেবে। তৎক্ষণাৎ হুকুম তামিল করা হলাে।

(আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ২৫৯-২৬০ )

সোমবার, ৫ এপ্রিল, ২০২১

 


শীতকালীন উন্নত বস্ত্ৰ নিমেষেই দান 

 জনাব মাওলানা আমজাদ রেযা সাহেব (প্রকাশ মামু মিয়া সাহেব) বর্ণনা করেন, আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র খেদমতে একদা একটি পার্শ্বেল আসলাে। আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। পার্সেলটি খুলতেই দেখতে পেলাম শীতকালীন পরিধেয় একটি উন্নত বস্ত্র। আলা হযরত তা দেখে খুব খুশি হলেন। যারা সে সময়ে ঘরে উপস্থিত ছিলেন সকলেরই কাপড়টি পছন্দ হলাে। সকলেই প্রেরণকারী ও কাপড়ের প্রশংসা করলেন। সকলের অনুরােধে তিনি তা পরিধান করলেন। আমার (আমজাদ রেযা) অজান্তে হঠাৎ অনিচ্ছায় আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলাে যে, বাস্তবেই এটা চমৎকার পােশাক, যুবকদেরকে বেশি মানাবে। এটা শুনামাত্রই আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ঐ পােশাকটি আমাকে দিয়ে দিলেন। বললেন, তুমি এটা পরাে। অথচ, আমি এ কথাটি এটা পাওয়ার জন্য মােটেও বলিনি। তবে আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বরাবরই আমাকে সেটা দিয়ে দিলেন এবং বললেন আমার খুশি তাে এখানেই, কেনাে লজ্জা করছাে!(মাওলানা জফরুদ্দিন বিহারি রচিত "হায়াতে আ'লা হযরত", প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ৮৪,আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ২৫৮ )।


শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১


মক্কা শরিফে মেয়ে বিবাহের টাকা প্রেরণ:

 মক্কা শরিফ থেকে আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র কাছে জনৈক ব্যক্তি এ বলে চিঠি লিখলেন যে, হুযূর! আমার দু'মেয়ের বিবাহ একসাথে হচ্ছে, তাই অর্থনৈতিক দীনতায় পড়েছি। দয়া করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে কৃতার্থ করবেন। পরিশেষে আ'লা হযরত অনেক কষ্ট করে দু'মেয়ের জন্য সে সময়ের এক হাজার টাকা মক্কা শরিফে পাঠিয়ে দিয়েছেন।(মাওলানা জুফরুদ্দিন বিহারি রচিত "হায়াতে আ'লা হযরত", প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ৮৩, আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ২৫৮ )। 

বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১


তাফদ্বীলিয়্যাহ ফেরকার সাথে মােনাযারা 


 ১৩০০ হিজরি সনে বেরেলি, বদায়ুন, সানবাল ও রামপুরের শিয়ারা মাসআলায়ে তাফদ্বীলিয়্যাহ'র উপর আলা হযরত
ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র সাথে মােনাযারা বা সম্মুখ তর্কের ঘােষণা দিলাে। শিয়া মােনাযের হিসেবে তৎকালীন শিয়াদের বড় আলেম মৌলভি মুহাম্মদ
হাসান সানবাহলিকে ঠিক করা হলাে। এদিকে আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি গুরুতর অসুস্থাবস্থায় ডাক্তারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মােনাযারা গ্রহণ করলেন।
তিনি ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞার জবাবে বলেন- "মােনাযারা করে যদি মরতে হয়, মরতে রাজি। মােনাযারা অস্বীকার করে বেঁচে
থাকা? তা কখনাে হতে পারে না।"

শিয়ারা আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি কাছে লিখলাে, প্রশ্ন কি প্রথমে আমরা করবাে, না কি আপনি করবেন? তার জবাবে আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি শিয়া মােনাযের মৌলভি মুহাম্মদ হাসান সানবাহলির কাছে তিনটি প্রশ্ন লিখে পাঠিয়ে দিলেন।

লােকটি শিয়া মতবাদী হলেও বাস্তব সত্যকে অস্বীকার করতে পারলেন না। তিনি বললেন, কোনাে আলেম তাফদ্বীলিয়্যাহ (হযরত আলি রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে অপর তিন খলিফার উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া] আক্বিদা রেখে তাঁর জবাব দেয়া সম্ভব নয়।
পরিশেষে তিনি গাড়ী নিয়ে আ'লা হযরতের কাছে এসে আত্মসমর্পণ করলেন। পরবর্তীতে সে মাওলানা সাহেবের লিখিত কিতাব "শরহে আক্বায়েদে নসফি"র ব্যাখ্যাগ্রন্থ "নাজমুল ফারায়েদে" উপর্যুক্ত আক্বিদার ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের পক্ষে অভিমত পেশ করেন।
(মাওলানা আবদুল হাকিম শরফ কাদেরি রচিত "হায়াতে আ'লা হযরত", প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ৭৭। আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ২৭৯ )।