১২৯৪ হিজরি জুমাদাল উলার কোনাে এক তারিখে দুপুর বেলা প্রিয় নবিজির সুন্নাত মােতাবেক কায়ললাহ (দুপুর আহারের পর শয়ন) করলেন। এক অজানা কারণে তাঁর নয়নযুগল অশ্রুতে পরিপূর্ণ। কোনাে এক অপরিচিত স্থান থেকে তাঁর মাশুক তাঁকে যেনাে ডাকছে। আর মাশুকের হৃদয়গ্রাহী ডাকটি যেনো তাঁকে কাঁদাচ্ছে নীরবে।
অশ্রুসিক্ত নয়নে নিদ্রার মিলন ঘটলে দেখতে পান তাঁর সম্মানিত পিতামহ যুগশ্রেষ্ট ওলিয়ে কামেল হযরত আল্লামা রেযা আলি খান রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে। তিনি তাঁকে (আ'লা হযরত) সিন্ধুক থেকে কি যেনাে দিলেন এবং তাঁকে সম্বােধন করে এরশাদ ফরমালেন, অনতিবিলম্বে ঐ ব্যক্তি আসছেন, যিনি তােমার ব্যথার ঔষধ দেবেন।
স্বপ্নের দ্বিতীয় দিনে সে সময়ের খ্যাতিমান আলেম তাজুল ফহুল মুহিব্বে রাসুল আল্লামা আবদুল কাদের বদায়ুনি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বদায়ুন শহর থেকে বেরেলিতে তশরিফ আনলেন। আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর সাথে বায়আত গ্রহণের পরামর্শ করলে তিনি।বলেন, আপনার মতাে মহান ব্যক্তির পীর মারেহেরা শরিফেই রয়েছে। তিনি হােসাঈনি সৈয়্যদ। মা'রেফে লুদুনিয়্যার প্রস্রবণ। তাঁর নাম সৈয়্যদ শাহ আলে রাসূল মারেহেরাভি বারকাতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ কথা শুনামাত্র তিনি তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতা আল্লামা নকি আলি খান ও আল্লামা বদায়ুনির রহমাতুল্লাহি আলাইহি সাথে রওনা দিলেন মারেহেরা দরবারের পথে। আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বেরেলি স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠে মারেহেরা স্টেশনে নামা মাত্রই বললেন আমার নাকে একজন কামিল পীরের সুগন্ধ আসছে। পরিশেষে মারেহেরা শরিফে সে মহান পীর সুলতানুল আউলিয়া সৈয়্যদুনা খাজা সৈয়্যদ শাহ আলে রাসূল হােসাঈনি রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র খেদমতে হাজির হন এ ক্রিরত্ন। এ মহান আল্লাহর অলি আ'লা হযরত ইমাম আইমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে লক্ষ্য করে বললেন, আসুন! আমি তাে কয়েক দিন ধরে আপনার অপেক্ষায় রয়েছি। আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও তাঁর পিতা এ মহান আধ্যাত্মিক সাধকের হাতে বায়আত গ্রহণ করলেন। বায়আত হতে না হতেই এ মহান পীর আ'লা হযরত ও তাঁর শ্রেদ্ধেয় আব্বাকে খেলাফত ও ইজাযতদানে ধন্য। করেন এবং আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র মাথায় পরিয়ে দেন সকল সিলসিলার ইজাযতের তাজ। সকল অযিফা - আওরাদ আশগাল এবং ইজাযতসম্পন্ন অযিফার সিন্ধুক নামে প্রসিদ্ধ ছােট একটি বক্স দান করলেন, যেভাবে তাঁকে তাঁর সম্মানিত দাদা কয়েকদিন পূর্বে স্বপ্নে দিয়েছিলেন। হুযুর আলে রাসূল মারেহেরাভি রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র তৎক্ষণাৎ খিলাফত প্রদানের ঘটনা দেখে উপস্থিত সকলে হতবাক। সাহস করে শাহ আলে রাসূলের নাতি কুতুবে দাওরা যুবদাতুস সালেকিন শায়খুল আরেফিন সৈয়্যদ শাহ আবুল হােসাঈন আহমদ নুরি মিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর শ্রদ্ধেয় দাদা শাহ আলে রাসূল রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে সম্বোধন করে আরয করলেন, হুযুর এ ছােট্ট বাইশ বছরের ছেলের উপর এত বড় দয়া! একটি সিলসিলার খেলাফত নয়: বরং সমস্ত সিলসিলার! একি রহস্য? অথচ আমরা জানি আপনার এখানে খেলাফত পাওয়া খুবই কঠিন। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কঠোর রিয়াযত ও যবের শুকনাে রুটি খেয়ে কঠিন থেকে কঠিনতর পরিশ্রমের মাধ্যমে তরিকতের মনযিলগুলাে (স্তর) অতিক্রম করিয়ে যোগ্য করে নেয়া হয়। তারপর যিনি যোগ্য পুরুষ বলে বিবেচিত তাকে খেলাফতের দৌলত দানে ধন্য করেন। তাও আবার একটি বা দু'টির চেয়ে বেশি নয়। কিন্তু এ বাচ্চা কোনো প্রকার সাধনা ও রিয়াযত ব্যতীত সকল সিলসিলার খেলাফত ও সমস্ত আমাল, আওরাদ, আশগালের অনুমতি পেয়ে গেলাে! একি রহস্য!
হযরত শাহ আলে রাসূল মারেহেরাভি বারকাতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি আপন পৌত্রের এ কথা শুনে ইরশাদ ফরমালেন, "তুমি মাওলানা আহমদ রেযা সম্পর্কে কী জান? অন্যান্যরা এখানে অপবিত্র কলব নিয়ে আসে, ফলে কঠোর সাধনা করিয়ে এদেরকে তৈরি করতে হয় বলে খেলাফত অর্জনেও সময় লাগে। কিন্তু এঁরা দু'জন অত্যন্ত পবিত্র কলব নিয়ে আমার নিকট এসেছে। এঁরা তাে তৈরি হয়ে এসেছেন। এঁদের কেবল একটি নিসবত বা শিষ্যত্বের প্রয়ােজন। এখানে এসে তাও অর্জন হয়ে গেলাে।" তিনি অশ্রুসিক্ত নয়নে আরাে বললেন, "আমি আলে রাসুল এতদিন এ চিন্তায় ছিলাম যে, কাল কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তায়ালা যদি আমাকে প্রশ্ন করেন, হে আলে রাসূল! তুমি আমার জন্য কী এনেছাে? আজ আমার সেই চিন্তা দূরীভূত হলাে। আমি উত্তরে আল্লাহ তায়ালাকে বলবাে- হে আল্লাহ! আমি তােমার দরবারে আহমদ রেযাকে নিয়ে এসেছি।"
এরপর হযরত নুর মিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে সম্বােধন করে আরাে বললেন,আজ থেকে আমার ও আমার মাশায়েখদের মুদ্রিত - অমুদ্রিত কিতাবসমূহ যতক্ষণ না মাওলানা আহমদ রেযাকে দেখানাে হবে, ততক্ষণ ছাপানাে নিষিদ্ধ। যেটাকে ওনি ছাপানাের অনুমতি দেবেন, তা ছাপানাে হবে। যেটাকে তিনি নিষেধ করবেন, সেটা কখনাে ছাপাবে না। আর আমাদের কিতাবসমূহে তিনি যদি কোনাে এবারত কোটে দেন, তবে তা মাশায়েখদের পক্ষ থেকে মনে করবে। আর যদি তিনি কোনাে বৃদ্ধি করে দেন, তাও মাশায়েখদের পক্ষ থেকে মনে করবে। প্রিয়নবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র পক্ষ থেকে এ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।"
অতঃপর হযরত শাহ আলে রাসূল মারেহেরাভি রহমাতুল্লাহি আলাইহি আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর
ফয়যে এত্তেহাদি বা তাওয়াজ্জুহে তাশবিহি (মুরিদের উপর এমন দৃষ্টি দেওয়া, যাতে মুরিদ পীরের আকৃতিতে সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে যায়। এটা বড় কামিল পীরদের দ্বারা সম্ভব) দানে ধন্য করলেন। তখন আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র চেহারা মুবারক হুবহু আলে রাসূল রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র মতাে হয়ে গেলাে। শুধু পার্থক্য এতটুকুনই ছিলাে যে, হুযুর আলে রাসূল রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র দাঁড়ি মুবারক সাদা আর আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র দাঁড়ি মুবারক কালাে। আধ্যাত্মিকতার কতাে মহান আসনে আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও তাঁর পিতা অধিষ্টিত ছিলেন, তা উপর্যুক্ত ঘটনা থেকে সহজেই অনুমেয়।
তাঁর আধ্যাত্মিকতার প্রথম অবস্থা যদি এতাে উন্নত ও পরিপূর্ণতায় ভরপুর হয়, তবে তার শেষ অবস্থার উন্নতি কতাে শীর্ষে হবে, তা বর্ণনাতীত। তাঁকে অনেক পীর-মাশায়েখ বায়আত ছাড়াই খিলাফত প্রদানে ধন্য করেন। প্রায় ১৩টি সিলসিলার খেলাফত অর্জনের সৌভাগ্য হয়।
(জীবন ও কারামত রচিত "মাওলানা শামশুল আলম নঈমি", পৃষ্ঠা : ৫৬। মাওলানা মুহাম্মদ আহমদ মিসবাহি রচিত "ইমাম আহমদ রেযা অওর তাসাউফ", পৃষ্ঠা: ১০, প্রকাশসন: ১৯৮৮ ইংরেজি, আল মজমাউল ইসলামি, মুবারকপুর, ভারত।
(আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভীর উপর আরােপিত অপবাদের জবাবঃ অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন রেযভি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি), পৃষ্ঠা - ১৪৯.১৫০.১৫১)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন