সোমবার, ৩১ মে, ২০২১


 এখানে ফাতওয়ার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা হয় না:


 তৎকালীন বাংলার প্রখ্যাত আলেম, নােয়াখালী জেলার জনাব মাওলানা শাহ সৈয়্যদ হামীদুর রহমান রেজভী আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র ছাত্র ও ভক্ত ছিলেন।

তিনি ১লা জিলহাজ্ব ১৩৩৭ হিজরিতে একটি মাসআলার সমাধান চেয়ে আ'লা হযরতের কাছে একটি চিঠি লিখেন। চিঠির শেষ ভাগে এটাও লিখেন যে, হুযুর এক রুপী আপনার খেদমতে প্রেরণ করছি। জনাব শাহ হামিদুর রহমান সাহেবের জবাবে আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেন-

جواب مسئلہ حاضر ہے- الحمد لله کہ آپکا روپیہ نہ آیا، اگر لاکه روپیہ ہوتے

تو بعونہ تعالی واپس کئے جاتے، يہاں بحمده تعالی نہ رشوا لی جاتی بے،

نہ فتوی پر اجرت۔

"আপনার মাসআলার জবাব পাঠালাম। আলহামদুল্লিল্লাহ, আপনার রুপী (টাকা) এখনাে পৌঁছেনি। যদি পৌঁছতাে এক রুপী কেনো, এক লক্ষ রুপী হলেও আল্লাহর রহমতে ফেরত দেয়া হতাে। আলহামদুল্লিল্লাহ, এখানে ফাতওয়ার বিনিময়ে ঘুষ বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা হয় না।"(ড. গােলাম জাবের শামস মিসবাহি রচিত "ইমাম আহমদ রেযা খুতুত কে আয়নে মে", প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা : ২৭২)।



কলকাতা নিবাসী হাজ্বি নাদের আলিকে আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র জবাব :


 কলকাতা নিবাসী হাজ্বি নাদের আলি সাহেব একটি প্রশ্নের সমাধান চেয়ে আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র নিকট চিঠি লিখলেন। চিঠিটিতে একটি বাক্য এমনটি ছিলাে যে, ফাতওয়ার জাওয়াবের খরচ ও অন্যান্য বিষয়ের জন্য এ অধম আপনার খেদমতে হাজির হচ্ছি।" তার এই বাক্যের উত্তরে আলা হযরত বলেন-

یہاں فتوی پر کوئی خرچ نہیں لیا جاتا، نہ اس کو اپنی حق میں روا رکها جاتا ہے

"এখানে ফাতওয়ার ব্যাপারে কোনাে খরচ নেয়া হয় না। আমি এটাকে আমার

ব্যাপারে বৈধ মনে করি না।"(ড. গােলাম জাবের শামস মিসবাহি রচিত "ইমাম আহমদ রেযা খুতুত কে আয়নে মে", প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা : ২৭৩)।



ভাওয়ালপুর জেলার মাওলানা আবদুর রহিমের প্রতি আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র জবাব:


ভাওয়ালপুর জেলার মাওলানা আবদুর রহিম খানকাহী লিখিত পত্রে লিখেছেন "প্রশ্নের উত্তর আসলে পারিশ্রমিক দিয়ে দিবাে"। উত্তরে আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি  লিখেন- "এখানে ফাতওয়ার উপর কোনাে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা হয় না। না আগে গ্রহণ করা হয়েছে, না পরে গ্রহণ করা হবে,না আমি নিজের জন্য তা বৈধ মনে করি।"(ড. গােলাম জাবের শামস মিসবাহি রচিত "ইমাম আহমদ রেযা খুতুত কে আয়নে মে", প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা : ২৭৩)।(আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা - ২৬৪)।



শনিবার, ২৯ মে, ২০২১

 ইমামে আহলে সুন্নাত আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা (রহ) এর স্বহস্থে লেখা হাদিসের সনদ:

যা তিনি তার প্রিয়তম খলিফা আউলাদে সিদ্দীক্বে আকবর

মুবাল্লিগে ইসলাম আল্লামা আব্দুল আলীম সিদ্দীক্বী মিরঠীকে দিয়েছিলেন।


সংগ্রহ: হুমাইরা রিজভীয়া


 

কালামে আলা হযরতের অনুবাদ

___________★___________


"লাম ইয়াতি নাযীরুকা ফী নাযারিন"

যথাক্রমে আরবি,ফার্সী,হিন্দি ও উর্দু ভাষার চমৎকার সংমিশ্রণ।আজ পর্যন্ত "চার" ভাষায় এতো সুন্দর নাত কেউ লিখেছে বলে আমার জানা নেই।

আলা হযরতের প্রিয়তম খলিফা আল্লামা মুহিব্বা বাখেরওয়ী বিহারী এবং তৎকালীন আলা হযরতপ্রেমী কবি মুহাম্মদ নাতিক। এরা দু'জন আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা (رحمه الله) কে অনুরোধ করেছিলেন,  একের অধিক ভাষায় একটি নাত লিখতে।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, শেষ পঙক্তি তে তাদের নাম সুনিপুণ ভাবে যুক্ত করে দিয়েছেন।

ইমামের লেখা এই  অদ্বীতিয় নাতের প্রতিটি শব্দ পঙক্তি মনজুড়ানো সুর বরাবরের মত নবীপ্রেমিকদের আকৃষ্ট করে।

নিম্নে উক্ত নাতের প্রতিটি পঙক্তির উচ্চচারণ ও অনুবাদ পেশ করছি।

لَم یَاتِ نَظیرُکَ فِی نَظَر 

مثل تو نہ شد پیدا جانا

جگ راج کو تاج تورے سر سو

ہے تجھ کو شہ دوسرا جانا

উচ্চচারণ

_________

লাম ইয়াতি নাযীরুকা ফী নাযারিন

মিসলে তু না শুদ পায়দা জানা

জাগরাজ কো তাজ তোরে সার সো

হে তুঝকো শাহে দোসরা জানা

অনুবাদ

_______

আপনার উপমা কোনো চোখ দেখেনি

আপনার মতো কেউ সৃষ্টি হয়নি

উভয় জাগতের মুকুট আপনার মাথায়

আপনি ই উভয় জাগতের সম্রাট।

اَلبحرُ عَلاَوالموَجُ طغےٰ 

من بیکس و طوفاں ہوش ربا

منجدہار میں ہوں بگڑی ہے ہوا

موری نیا پار لگا جانا

উচ্চচারণ

_________

আল বাহরু আলা ওয়াল মাওজু ত্বাগ্বা

মান বেকাসো তুফাঁ হোশ রুবা

মাঞ্জধার মেঁ হুঁ বিগড়ী হে হাওয়া

মোরী নায়্যা পার লাগা জানা

অনুবাদ

_______

(দুঃখের) সাগর উচ্ছাসে ঢেউ বে সামাল

আমি অসহায় তুফান ভয়াবহ 

মাঝ সাগরে ফেঁসে গেছি হাওয়া বিপথে

আমার নৌকা আপনি তীরে এনে দিন।

یَا شَمسُ نَظَرتِ اِلیٰ لیَلیِ 

چو بطیبہ رسی عرضے بکنی

توری جوت کی جھلجھل جگ میں رچی مری شب نے نہ دن ہونا جانا

উচ্চারণঃ

_______

ইয়া শামসু নাযারতী ইলা লাঈলী

চু বা তায়বা রাসী আরযে বাকুনী

তোরী জোত কী ঝালঝাল জাগমেঁ রাচি

মেরী শাব নে না দিন হোনা জানা

অনুবাদ

______

সূর্য! আমার অন্ধকার রাত তুমি দেখছ 

যখন মদিনা যাবে আমার আরজি বলো

আপনার নুর দ্বারা জগত আলোকিত

কিন্তু আমার রাতের;দিন হচ্ছে না।

لَکَ بَدر فِی الوجہِ الاجَمل 

خط ہالہ مہ زلف ابر اجل

تورے چندن چندر پروکنڈل

رحمت کی بھرن برسا جانا

উচ্চারণঃ

_______

লাকা বাদরুন ফীল ওজহীল আজমাল

খাত হালায়ে মা যুলফ আবরে আজাল

তোরে জান্দান জান্দার পারো কুন্ডাল

রাহমাত কী ভারান বারসা জানা

অনুবাদ

_______

আপনার চেহরা চঁদের চেয়ে উজ্জ্বল

আপনার জুলফি চাঁদের কালো আবরণ

চন্দনের মতো চেহরায় জুলফির মেঘ

আমার উপর রহমতের বৃষ্টি বর্ষন করুন

انا فِی عَطَش وّسَخَاک اَتَم

اے گیسوئے پاک اے ابرِ کرم

برسن ہارے رم جھم رم جھم

دو بوند ادھر بھی گرا جانا

উচ্চচারণ

________

আনাফী আত্বাশীওঁওয়া সাখা কা আতম

এ গেসু এ পাক এ আবরে কারাম

বারসান হারে রিমঝিম রিমঝিম

দো বুন্দ ইধার ভী গীরা জানা

অনুবাদ

_______

আমি তৃষ্ণার্ত আপনার দান পরিপূর্ণ

হে জুলফি হে রহমতের মেঘ

রিমঝিম বৃষ্টি বর্ষন হয়

দুটি রহমতের বিন্দু এদিকে বর্ষন করুন।

یَا قاَفِلَتیِ زِیدَی اَجَلَک

رحمے برحسرت تشنہ لبک

مورا جیرا لرجے درک درک

طیبہ سے ابھی نہ سنا جانا

উচ্চচারণ

_________

ইয়া ক্বাফিলাতী যীদী আজালাক

রেহমে বার হাসরাতে তিষনা লাবাক

মোরা জিয়ারা লারজে দারাক দারাক

তায়বা সে আভী না সুনা জানা

অনুবাদ

______

সফর সঙ্গীরা মদিনায় কিছুক্ষণ থাকো

এখনো আমার পিপাসা মিটেনি

মদিনা থেকে বিচ্ছেদের কথা শুনে 

আমার হৃদ কম্পন শুরু হয়েছে।

وَاھا لسُویعات ذَھَبت

آں عہد حضور بار گہت

جب یاد آوت موہے کر نہ پرت

دردَاہ وہ مدینہ کا جانا

উচ্চচারণ

_________

ওয়াহ হল্লী সুওয়াইআ'তিন যাবাত

আঁ এহদে হুযুরে বারগাহাত

জব ইয়াদ আওয়াত মোহে করনা পরাত

দার দাহ ওয়হ মাদিনে কা জানা

অনুবাদ

_______

আহ! সেই মুহূর্ত গুলো চলে গেলো

যা আপনার দরবারে কাটিয়েছিলাম 

মনে পড়ে! সফরের ক্লান্তি ভুলে

যখন মদিনার দিকে রাওনা হয়েছিলাম।

اَلقلبُ شَح وّالھمُّ شجوُں

دل زار چناں جاں زیر چنوں

پت اپنی بپت میں کاسے کہوں

میرا کون ہے تیرے سوا جانا

উচ্চচারণ 

________

আল ক্বালবু শাহহুন ওয়াল হাম্মু শুজুঁ

দিল যার চুনাঁ জাঁ যেরে চুনুঁ

পাথ আপনি বিপাথ মেঁ কাসে কাহুঁ

মেরা কোন হে তেরে সিওয়া জানাঁ

অনুবাদ

_______

অন্তর বিক্ষত দুঃখ সীমাহীন

সে ফরিয়াদ করতে চায়, প্রাণ দূর্বল

পথ বিপথে চলে গেছে, কাকে বলি! 

প্রাণ! আপনি ছাড়া আমার কে আছে!

اَلروح فداک فزد حرقا

یک شعلہ دگر برزن عشقا

مورا تن من دھن سب پھونک دیا

یہ جان بھی پیارے جلا جانا

উচ্চচারণ

________

আর রুহু ফিদাকা ফাযিদ হারক্বা

ইয়াক শো'লা দিগার বারযান ইশক্বা

মোরা তান মান ধান সাব ফুঁক দিয়া

ইয়ে জান ভী পিয়ারে জালা জানা

অনুবাদ

_______

প্রাণ উৎস্বর্গীত!প্রেমের আগুন বাড়ান

নবীপ্রেমের স্ফুলিঙ্গ দিয়ে প্রেম বাড়ান

শরীর মন সম্পদ সব সপে দিয়েছি

প্রিয়! প্রাণ টাও জ্বালিয়ে দিও

بس خامہ خام نوائے رضا

نہ یہ طرز میری نہ یہ رنگ مرا

ارشاد احبا ناطق تھا،

ناچار اس راہ پڑا جانا

উচ্চচারণ

________

বাস খামায়ে খাম নাওয়া এ "রেযা"

না ইয়ে তারিয মেরী না ইয়ে রাঙ্গ মেরা

ইরশাদে আহিব্বা নাতিক্ব থা

না চার ইস রাহ পাড়া জানা

অনুবাদ

_______

"রেযা"র রচনা অপরিপক্ব কলম দুর্বল

আমার অভ্যাস ও ধরন এমন নয়

বন্ধুদের আবদার ছিলো

তাই না চায়তেও এ পঁথে আসতে হলো।


রেফারেন্স

__________

হাদাঈক্বে বাখশীশ এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ

ওয়াসাঈক্বে বাখশীশ ১ম খন্ড।

কৃতঃ আল্লামা গুলাম ইয়াসীন আমজাদী


শারহে কালামে রেযা ফী নাতিল মুস্তফা

কৃতঃ আল্লামা ক্বারী  গুলাম হাসান কাদেরী।


সংগ্রহ: জায়েদুল করিম


শনিবার, ২২ মে, ২০২১


এক নজরে আলা হযরত

(1) আলা হযরত ইংরেজি 1856 সালে 14 জুন,১০ই শাওয়াল ১২৭২ হিজরী শনিবারের দিন জন্মগ্রহণ করেন ।

(2) আলা হযরত 1921 সালে 28 অক্টোবর

জুম্মার দিন 68 বছর বয়সে দুপুর দুটো 38

মিনিটে এন্তেকাল করেন ।

(3) তাঁর পিতার নাম মুফতী নাকি আলী খান

(4) তাঁর পিতামহের নাম মুফতী রেজা আলী

খান ।

(5) আলা হজরত মাত্র চার বছর বয়সে দেখে

দেখে কোরআন শরীফ পড়া সমাপ্ত করেন ।

(6) আলা হযরত মাত্র 6 বছর বয়সে নবী দিবস

উপলক্ষে এক বিশাল জনসভায় দীর্ঘক্ষন

বক্তব্য রাখেন ।

(7) আলা হযরত মাত্র আট বছর বয়সে আরবী

ব্যাকরণ এর বিখ্যাত কিতাব হেদায়াতুন্নাহু

এর আরবীতে ব্যাখ্যা লিখেন ।

(8) আলা হযরত মাত্র 14 বছর বয়সে ফারাগাত

লাভ করেন ।

(9) আলা হযরত 1877 খ্রীষ্টাব্দে প্রথম হজ

আদায় করেন ।

(10) আলা হযরত মাত্র 30 দিনের মধ্যে

কোরআন শরীফ মুখস্থ করেছিলেন ।

(11) আলা হযরত 1875 খ্রিস্টাব্দে বিবাহ

করেন ।

(12) আলা হযরত মক্কা শরীফে থাকাকালীন

মোট 160 কেজি যমযম পানি পান করেন ।

(13) আলা হযরত মক্কা শরীফে পৌনে তিন

মাস অবস্থান করেন ।

(14) আলা হযরত 1322 হিজরীতে দারুল উলুম

মানযারে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন ।

(15) আলা হযরত একশ কুড়িটি বিদ্যার

অধিকারী ছিলেন ।

(16) আলা হযরত 1911 সালে কোরআন শরীফের

অনুবাদ কানযুল ঈমান প্রণয়ন করেন।

(17) আলা হযরত কাবা শরীফে সাম্মানিক

ইমামতি করেন ।

(18) আলা হযরতের মক্কা শরীফ ও মদীনা

শরীফে মোট 35 জন খলিফা ও শিষ্য ছিলেন।

(19) আলা হযরতের অখন্ড ভারতে মোট 66 জন

খলিফা ছিলেন ।

(20) আলা হযরত কমবেশি দেড় হাজার কিতাব

লিখেন ।

(21) আলা হযরত জাগ্রত অবস্থায় আল্লাহর

রাসূলকে স্বশরীরে দেখেন ।

(22) প্রতি বছর সফর চাঁদের 23 24 ও 25 তারিখ

আলা হযরতের উরস মোবারক অনুষ্ঠিত হয়ে

থাকে । (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু )।



রবিবার, ২ মে, ২০২১


ঋণ প্রার্থীদেরকে সহজে ঋণ প্রদান 

জনৈক ব্যক্তি আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)'র খেদমতে এসে তার ঋণগ্রহিতা ঋণ আদায় করছেনা বলে অভিযােগ করলেন। তিনি বললেন, "এ যুগে ঋণ প্রদান করে তা উসুল হবে বলে মনে করা একটি কঠিন কাজ। বিভিন্ন লোকের উপর আমার পনের শত টাকা ঋণ আছে। আমি তাে ঋণ প্রদানের সময় এ খেয়ালে দিয়েছি যে, আদায় হলে ভালাে; কিন্তু চাইবাে না। যখন কাউকে কর্জ দেন তখন হেবার নিয়ত করে দিবেন।


হাদিস শরিফে রয়েছে, যদি কারাে উপর কারো ঋণ থাকে, পরিশােধের নিদিষ্ট দিন অতিবাহিত হওয়ার পর প্রতিদিন ঋণ প্রদানকারীর আমলনামায় ঋণ সমপরিমাণ দানের সাওয়াব পাওয়া যাবে। এ অধিক সাওয়াবের আশায় আমি ঋণ দিয়েছি।

কারণ, পনেরশ টাকা দান করার সওয়াব আমি কোথা থেকে পাবাে?"(মাওলানা মােস্তফা রেযা বেরেলভী সংকলিত "আল মালফুজ", প্রাগুক্ত, খণ্ড: ০১, পৃষ্ঠা: ৩৮)।


আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)'র আয়ের ব্যবস্থা বহুমুখি হলেও প্রয়ােজনীয় সম্পদটুকু রেখে অতিরিক্ত সকল সম্পদই বিত্তহীনদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। এমনকি কিছু কিছু সময় বাৎসরিক প্রাপ্ত আয়ে যথেষ্ট না হওয়ায় তাঁকে অন্যদের থেকে ঋণ নিতে হতাে। অনেক সময় ডাক-টিকিট খরিদের টাকাও তাঁর কাছে থাকতাে না। যা আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)'র কড়া সমালােচক ওহাবি গুরু এহসান এলাহিও তার 'আল বেরলভিয়্যাহ গ্রন্থে স্বীকার

করেছে।(এইসান জহির এলাহি রচিত "আল বেরলভিয়্যাহ", প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ২৪)।


আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি

আলাইহি) বিশ্বাস করতেন, অর্থ সম্পদ মানুষের জীবনের জন্য অপরিহার্য বটে, তবে তা কখনােই মানুষের একমাত্র লক্ষ্যবস্তু হতে পারে না। তাই তাে তিনি গ্রাম থেকে আসা জমিদারীর টাকা পয়সা ও ধন সম্পদের কোনাে হিসাব রাখতেন না। কতাে আসলাে বা কতাে পেলাম, এই হিসাব তাঁর কাছে ছিলাে না। যা পেতেন সব মাকে দিয়ে দিতেন। এমনকি কিতাব খরিদের জন্যও মার কাছ থেকে নিতেন। (মাওলানা আবদুল হাকিম শরফ কাদেরি রচিত "আল বেরেলভিয়্যাহ কি তানকিদি জায়েবাহ", প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১০৮)।


তাইতাে তিনি বলেছেন, আমি কখনাে এক পয়সা যাকাত দেই নি। কারণ তাঁর উপর যাকাত ফরয হওয়ার মত নিসাব বছরান্তে জমা থাকতাে না। যা বুযুর্গানে দ্বীনের আদর্শ। আর তিনি হলেন সে সমস্ত বুযুর্গদের সাচ্চা অনুসারী। তিনি ছিলেন প্রকৃত ইমামে আহলে সুন্নাত ও জাতির অভিভাবক। তাঁর ত্যাগ, সেবা ও বদান্যতা কেবল বিশেষ সমাজ, দেশ বা কালের সীমায় আবদ্ধ নয়। এর প্রসার ব্যাপক।


তিনি প্রতি বৎসর সমগ্র আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতাদর্শীদের জন্য কুরবানি দিতেন। যারা কুরবানি করতে পারেন নি, পারছে না এবং পারবে না সকলের পক্ষ থেকে তাঁর কুরবানি চালু ছিলাে।(মাওলানা মােস্তফা রেযা বেরেলভী রচিত "আল মালফুজ", প্রাগুক্ত, খণ্ডঃ ০২, পৃষ্ঠা ১২১)।


দরিদ্রতা বিমােচনে শুধু যাকাত নয়, দরিদ্রতা দূর করার জন্য ফিতরা, সাদকাহ, খায়রাতসহ দুঃস্থ মানুষের যা দরকার তা দিয়ে সাহায্য করতেন। যেমনটি করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে মুমিনদেরকে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, 'উপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম'। কারণ অভাব অনেক সময় মানুষকে কুফরের দিকেও নিয়ে যায়। যাদের কাছে বিত্ত থাকা শর্তেও বিত্তহীনদের প্রতি দয়া পরবশ হয় না, তারা কৃপণ। হাদিস শরিফে আছে "দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর বন্ধু, আর কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহর শত্রু। যদিও সে হয় পরহেযগার।"


আর এর উদ্দেশ্য হলাে, সম্পদ যেন শুধু ধনীদের মধ্যে আবর্তিত না হয়। যেন চক্রাকারে ঘুরতে থাকে, ধনী থেকে গরিব আবার গরিব থেকে ধনী। অর্থনীতির দৃষ্টিতে- বিত্ত এভাবে যত বেশি হাত বদল হবে ততবেশি অর্থনীতি মজবুত হবে।

পক্ষান্তরে বিত্ত যতবেশি মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে বন্দি থাকবে অর্থনীতির গতি ততবেশি রুদ্ধ হয়ে উঠবে। এভাবে অর্থনীতির গতি অচল হতে থাকলে এক সময় কোনাে জনপদে মন্দা দেখা দেয়। তখন সে জনপদকে উন্নয়নশীল জনপদ বলা যায় না। 


তাইতাে উন্নয়নের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে Michel p. Todaro তার Economics for Developing Word  এ বলেন The reduction or elimination of poverty inequality and unemployment within the context of a growing economy.


একটি প্রবৃদ্ধিশীল অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে দারিদ্র, অসাম্য ও বেকারত্বের মাত্রা হ্রাস করা বা সম্পূর্ণ নিঃশেষ করাই হলাে উন্নয়ন। (দারিদ্র বিমোচনে ইসলাম,নুরুল ইসলাম সম্পাদিত,ই ফা বা, পৃষ্ঠা - ১০)।


আর এ উন্নয়নের ধারাকে অব্যহত রাখতেন আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মুক্ত হস্তে দান ও সেবার মাধ্যমে। সুতরাং 'তিনি যাকাত দেই নি বলে' যে অপবাদ দেয়া হয়েছে, তা তাঁর জীবনী সম্পর্কে না জানার কারণে।

(আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র উপর আরোপিত অপবাদের জবাব,পৃষ্ঠা -২৬০,

২৬১,২৬২)।